নিউইয়র্ক: বহির্গমন বা ট্রানজিটে পরবর্তী প্লেনে উঠার অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে না কোনো যাত্রীকে। অপেক্ষার যন্ত্রণা ভুলে খোলা আকাশের নিচে সবুজ পার্কে ঘুরে বেড়াবেন তারা! আর এমন সুবিধাই দেওয়া হচ্ছে নিউইয়র্কে।
আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের জন্য জেট ব্লু এয়ার লাইন নিউইর্য়ক জন এফ কেনেডি বিমান বন্দর টার্মিনালে এক অত্যাধুনিক পার্কের ব্যবস্থা করছে। ম্যানহাটনের চেলসি এলাকার দর্শনীয় শূন্য উদ্যান ‘হাইলাইন’র আদলেই নির্মিত হবে এই পার্ক।
বিমান বন্দরে পার্কের নকশাবিদ জেনসলার সাংবাদিকদের বলেন, জেট ব্লু’-এর ৫ নম্বর টার্মিনালে যাত্রীদের আগমন হলের ছাদই শূন্য উদ্যান বা ওপেন এয়ার পার্ক হবে। পার্কে ‘ডগ ওয়াক’ বা পোষা কুকুরের বেড়ানোর জায়গা, শিশুদের জন্য খেলার স্থান এবং অনেকটা জায়গা জুড়ে সবুজ ঘাঁসে প্রকৃতির কোমল স্পর্শও থাকবে।
এই প্রকল্পের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত নকশাবিদ টাই অসবো বলেন, আপনি এ পার্কে দাঁড়িয়ে পশ্চিমে তাকাবেন এবং দূরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সুউচ্চ টাওয়ার দেখতে পাবেন।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) হালকা বৃষ্টিতে এই ছাদে দাঁড়িয়ে ভেবেছি, এ ছাদটাকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়। সিদ্ধান্ত হলো, যাত্রীরা বহির্গমনে অপেক্ষার সময় মুক্ত বাতাস উপভোগ করবেন। যা কেনেডি বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য খোলা আকাশের নিচে একমাত্র উন্মুক্ত স্থান হবে।
ইতোমধ্যে ভেন্ডররা খাবার ও পানীয় ব্যবসা খুলতে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ প্রকল্প প্রসঙ্গে নকশাবিদ টাই অসবো বলেন, ‘বিমান বন্দর কর্তপক্ষ টার্মিনালের জন্য শর্ত জুড়ে দেয়, টার্মিনালে যাত্রীদের পোষা কুকরদের বেড়ানোর জায়গা থাকতে হবে। কিন্তু সে জায়গা সাধারণত নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে হয়। তারপর আবারো নিরাপত্তা স্ক্রিনিংয়ের ভেতর দিয়ে তাদের টার্মিনালে ঢুকতে হবে। এসময়ই টার্মিনালের ছাদ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মানুষের বিনোদনের কাজে ব্যবহারের বিষয়টি মাথায় আসে। ’
জেট ব্লু’র প্রেসিডেন্ট রবিন হেইস বলেন, এখন থেকে তাদের প্লেন খালি ফিরে যেতে হবে না। জেট ব্লু টার্মিনালে কাঁচের দেয়ালে ঘেরা ‘আগমন’ এলাকায় ৪০টি স্বয়ংক্রিয় ‘পাসপোর্ট রিডার’ ও রোগ নিয়ন্ত্রণে ফলমুলাদি নিরীক্ষায় ল্যাব বসিয়েছে। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন কালোবাজারিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেল রয়েছে।
জেট ব্লু’র পরবর্তী প্রধান নির্বাহী রবিন হেইস আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছি। আমি বিশ্বাস করি আমরা যা রি করছি তা বিশ্বের সেরা টার্মিনালগুলোর একটি হবে।
পোর্ট অথিরিটির নির্বাহী পরিচালক প্যাট্রিক ফোব- এর দেওয়া তথ্যমতে , ১ হাজার ৯০ জনের কর্মসংস্থান, ৭৪ মিলিয়ন ডলার বেতন এবং মোট ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সংস্থান হবে এই প্রকল্পে।
জেট ব্লু’-এর টার্মিনালের এ নকশায় প্লেন থেকে নেমেই র্যাম্পে কাস্টমস এরিয়াতে এলেই কাচেঁর দেয়ালের এপাশে সূর্যের আলো পাবেন যাত্রীরা। কাস্টমসে কিছু ডিক্লেয়ার করার না থাকলে একজন যাত্রী ব্যাগেজ নিয়ে মাত্র ২৮ মিনিটেই যেতে পারবেন। পাসপোর্ট স্ক্যানে লাগবে সর্বেচ্চ ৪৫ সেকেন্ড।
কাস্টমস শেষে যাত্রীদের বিলম্ব এড়াতে জেট ব্ল’র ব্যাগেজ আনলোড প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এসবের জন্য জেট ব্লু তাদের টার্মিনাল ৫ এ অতিরিক্ত ২শ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কোমোর সঙ্গে সিটির বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নে ‘আইডিয়া’ বা ভাবনা নিয়ে প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হয়েছিল। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।
এসময় তিনি বলেন, ম্যানহাটনের প্রাণকেন্দ্র থেকে বাস্তবেই একজন ৩০ মিনিটে কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
ম্যানহাটনের চেলসি এলাকায় শত বছরের পুরোনো পরিত্যক্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ‘ উড়াল রেল’ লাইনকে পার্কে পরিণত করা হয়েছে। ‘হাইলাইন’ নামে এই পার্ক অসংখ্য পর্যটককের বিনোদনের জায়গা হিসাবে ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪