ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

যখন তাকাই পূর্বাচলের পানে

নিনি ওয়াহেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪
যখন তাকাই পূর্বাচলের পানে নিনি ওয়াহেদ

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বুঝতে পারলাম শরীরটা আজ আর আমার বশে নেই। হাত-মুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়তে বাধ্য হলাম।

বেশ শীত শীত লাগছিল। কিন্তু পরেই টের পেলাম গায়ের জ্বর এসে ভর করেছে। আধো ঘুম, আধো জেগে প্রায় সারাটিদিন কাটিয়ে দিলাম। ঘরে টেলিভিশন খোলা। টেলিভিশন দেখছিলাম না, শুনছিলাম।

একপর্যায়ে খবর প্রচারিত হওয়ায় বেশ মনযোগ সহকারে শুনছিলাম। প্রচারিত খবরে বলা হয় যে, বাংলাদেশে ‘ছায়ানট’ সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের খবর ও ছবি তখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখানো হচ্ছে। উঠে বসলাম তা দেখার জন্য।

‘ছায়ানট’ নামটির সাথে জড়িয়ে আছে সুদীর্ঘ ৫০ বছরের স্বদেশী সংস্কৃতি চর্চা, লালন-পালন ও তাকে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার এক গৌরবময় ইতিহাস, রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণের যে আয়োজন। ‘ছায়ানট’ ৫০ বছর আগে শুরু করেছিল সেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন। আজ নাগরিক জীবনেও জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। ছায়ানট এক বিশুদ্ধতার প্রতীক। দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে গড়ে উঠেছে তাদের নিজস্ব ভবন। নানা রঙে সাজানো ভবনের প্রবেশপথে দেখলাম ‘ছায়ানট’-এর প্রাণপুরুষ ওয়াহিদুল হকের বড় বড় পোর্ট্রেট। দেখার সাথে সাথে মনের মণিকোঠায় প্রায় মলিন হয়ে পড়ে থাকা এক স্মৃতি যেন তার উজ্জ্বলতা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। মনে পড়ে যায় ১৯৬৯ সালের একদিনের একটি ঘটনার কথা। সদ্য ঢাকা ও দেশের কয়েকটি এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রচন্ড টর্নেডো। তার আঘাতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন ঢাকা অদূরে ডেমরার বিশাল এলাকা এবং কুমিল্লার মুরাদনগর। কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে; সঙ্গে একজন বন্ধু। হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় উঠে আসছেন সকলের প্রিয় বেবী আপা। তিনি বাংলাদেশের খ্যাতনামা স্থাপত্যবিদ মাজহারুল ইসলামের স্ত্রী। যিনি নিজেও একজন নারীনেত্রী ছিলেন।

সম্প্রতি প্রয়াত মাজহারুল ইসলাম দেশের সকল অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার অগ্রদূত হিসেবে অধিক পরিচিত। বেবী আপার সন্তানরা তখন বেশ বড়। তিনি কলেজে এসেছেন তার সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসমাপ্ত শিক্ষা সমাপ্ত করার উদ্দেশ্যে। বারান্দায় উঠেই তিনি আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। জানালেন তিনি যাচেছন আর্ট কলেজের পক্ষ থেকে রিলিফ সামগ্রী নিয়ে ডেমরায় দুর্গতদের মাঝে বিতরণের জন্য।

বেবী আপা তার সঙ্গে যেতে অনুরোধ করেন; সামনের গাড়ি-বারান্দায়। তাকিয়ে দেখি একটি পিকআপ ভ্যান এবং একটি প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে। লক্ষ করলাম, গাড়ির ভেতর বসে আছেন কেউ। সঙ্গে দাঁড়ানো বন্ধুটিকেও বললাম আমাদের সঙ্গে যেতে। সে যেতে রাজি হচ্ছিল না। বন্ধুটি আমার নেহায়েতই সেই ধাঁচের যারা কলেজে আসে এবং ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে যায়। এর বাইরে তারা কিছুই জানতে ইচ্ছুক নয়। মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ এসবে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। সভা-সমাবেশ করা তো দূরের কথা এসবের ধারে কাছেও তাদের যাওয়া-আসা নেই। ফলে সে যেতে একটু দ্বিধা করছিল। বেবী আপা বললেন যে, রিলিফ সামগ্রী নামিয়ে দিয়েই তারা ফিরে আসবেন। বিতরণের দায়িত্বে ওখানে অনেক লোক রয়েছে। ধনাঢ্য পরিবারের বন্ধুটি আমার গাড়িতেই কলেজে আসা-যাওয়া করতো। সে জানালো, তার গাড়ি আসবে বিকেল ৪টায়। অন্যদিকে বেবী আপা বলেছেন, তাদের ফিরতে খুব বেশি দেরি হলে তা হবে দুপুর দু’টা। শেষমেশ সে যেতে রাজি হয়। গাড়িয়ে উঠতে গিয়ে দেখি চালকের সিটে বসে আছেন ‘ছায়ানট’-এর প্রাণপ্রিয় মানুষ ওয়াহিদুল হক। আর পেছনের সিটে বসে রয়েছেন লুলু আপা অথবা টুলু আপা দু’জনের মধ্যে একজন।

আজ সঠিকভাবে মনে করতে পারছি না। এরা দু’জনাই কবি সুফিয়া কামালের কন্যা। পিকআপ ভ্যানে রিলিফ সামগ্রী এবং আর্ট কলেজের কয়েকজন ছাত্র গাড়িতে উঠে বসতেই ওয়াহিদ ভাই কলেজ ও পড়াশোনা সংক্রান্ত নানা কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করেন। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম ডেমরায়। গিয়ে দেখি, সেখানে আজকের বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক ন্যাপ নেতা পংকজ ভট্টাচার্য ও সাবেক কমিউনিটি নেতা ও প্রয়াত সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের দেখামাত্র মতিয়া চৌধুরী জানালেন যে, ডেমরায় রিলিফ সামগ্রী যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে। ফলে আমাদেরকেও যেতে বলা হয় কুমিল্লার মুরাদনগরে।

এ-কথা শুনে সচকিত দৃষ্টিতে বন্ধুটি আমার দিকে তাকাল। অর্থাৎ সে বলতে চাচ্ছিল যে সে যেতে চায় না মুরাদনগরে। কিন্তু তখন তাকে কলেজে কে পৌঁছে দেবে এই কারণে অগত্যা তাকে যেতে হয় আমাদের সঙ্গে। ফেরি পারাপারের চিরকালের আনন্দটুকু উপভোগ করতে সচেষ্ট হলাম। ফেরিওয়ালাদের ডাকাডাকি এবং কথায় মুখর ফেরিঘাট এবং এর অভ্যন্তর। সেদ্ধ ডিম, আমড়া, চা ও কাঁচা আমের চাটনী সবই রয়েছে তাদের কাছে। চারিদিকে ঝকঝকে রোদের সোনালী আভা আর নদীর পানিতে সে আভার ঝিলমিলে মধুর নাচন। অভিভূত দু’চোখ কেবল দেখেই চলেছে। আমি আনন্দে আত্মহারা। সমগ্র বিশ্ব চরাচর আমায় স্পর্শ করছে। কিন্তু বন্ধুটির চোখে ভীতির ছায়া দেখে একটু ঘাবড়ে গেলাম। ¯েœহময়ী বেবী আপা আমাদের বার বার খাবার কিনে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিনেও দিলেন ঝাল মশলার আমড়া।
নদী পারাপার শেষে আমরা ওপারে। গাড়ি ছুটে চলেছে ঊর্ধ্বশ্বাসে মুরাদনগরের দিকে। ওয়াহিদ ভাই ও সুফিয়া কামালের কন্যা (লুলু আপা অথবা টুলু আপা) গান শুরু করে দেন। সেই সঙ্গে ওয়াহিদ ভাই মজার মজার গল্পও বলতে থাকেন এবং জেনে নিতে থাকেন আমাদের কাছ থেকে যে আমরা কী বই পড়ি বা পড়তে ভালবাসি। কেন সে বই পড়তে ভালবাসি ইত্যাদি ইত্যাদি। কথার ফাঁকে ফাঁকে আমাকে কবিতা শুনতে বাধ্য করেন। এক পর্যায়ে আমি ওয়াহিদ ভাইর কাছে জানতে চাই যে, তিনি কী আমাদের পড়াচ্ছেন না সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। ওয়াহিদ ভাই হেসে উত্তর দেন, ওর অবস্থা সেই দুই দুষ্ট ভাইয়ের মত। যারা নানা কৌশলে গৃহ শিক্ষকদের বিদায় করতো।

অসহায় পিতা অনেক খুঁজে পতে একজন শক্তপোক্ত শিক্ষক নিয়োগ করে তাকে জানান যে, তিনি যেন ভিন্ন পন্থায় তার সন্তানদের পড়াতে চেষ্টা করেন। শিক্ষক একদিন তাদের বাইরে নিয়ে গিয়ে তারকা গণনার মধ্য দিয়ে অংক শেখানোর চেষ্টা করলে তারা বুঝে ফেলে এবং সেই শিক্ষককেও বিদায় দিতে হয়। সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন।

ঘড়ির কাঁটা দুটো অতিক্রম করেছে বেশ কিছু আগে। রাস্তার পাশে চালাঘরের ছোট্ট একটি মোটেলের পাশে গাড়ি থামালেন ওয়াহিদ ভাই। দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম আমরা। বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু মুরাদনগরের উদ্দেশ্যে, ওয়াহিদ ভাই, বেবী আপা আর লুলু আপার গান, গল্প ও কথায় গাড়ি তখন বয়ে চলেছে আনন্দধারা।

আমরা সবাই প্রাণভরে তা উপভোগে ব্যস্ত। ব্যতিক্রম শুধু আমার বন্ধুটি। সারা মুখে তার ভীতির ছায়া। হঠাৎ করে বেবী আপার দৃষ্টি নিবন্ধ হয় পশ্চিমাকাশে। এক খন্ড গাঢ় কালোমেঘ জেঁকে বসেছে সেখানে। এরই মাঝে আমিও বলতে শুরু করি ‘বৈশাখ মাসে কখনও কখনও পশ্চিমাকাশে একখন্ড কালো মেঘ দেখা দেয়। কিছু পরেই তা ছড়িয়ে পড়ে সারা আকাশে। শুরু হয় প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি। এর নাম ঘূর্ণিঘড় বা টর্নেডো। ছেলেবেলায় এভাবেই পড়ানো হতো বাংলা মাসের বর্ণনা। আমার কথা শেষ না হতেই প্রচন্ড হাসির উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সে হাসির রেশ মিলিয়ে যেতে মুহূর্তকাল লাগে না। আসলে সেই কালো মেঘ সারা আকাশ ছেয়ে ফেলে শুরু হয় প্রচন্ড ঝড় এবং বৃষ্টি। ঝড়ের গতি কত তখন জানতে না পারলেও পরে জেনেছি। কিন্তু সেই সময়ে গাড়ির প্রবল ঝাঁকুনি বুঝিয়ে দিয়েছে যে, গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা ওয়াহিদ ভাইর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পিকআপ ভ্যানের ছেলেগুলো প্লাস্টিকের আবরণে রিলিফ সামগ্রী এবং নিজেদের রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলেছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। সবার চোখে-মুখে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে আমার বন্ধুটির অবস্থা ভীত-সন্ত্রস্ত। সে রীতিমত কাঁদতে শুরু করেছে। এক পর্যায়ে আমিও আক্রান্ত হয়ে পড়ি। এদিকে ওয়াহিদ ভাই ও বেবী আপা আমাদের স্বান্তনা দিতে ব্যস্ত। দুই ধারে খাল আর তারই এক ধারে আমাদের গাড়ি। গাড়ির চারিধারে উপড়ে পড়ছে গাছপালা। প্রায় আধঘন্টা পর আমাদের মুক্তি মেলে। মুরাদনগর বেশি দূরে না থাকয় ওয়াহিদ ভাই সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মুরাদনগরে পৌঁছে স্থানীয় ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের হাতে রিলিফ সামগ্রী বুঝিয়ে দিয়ে আমরা দ্রুত ফিরে এলাম ফেরিঘাটে। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ। ঝড়ে জেটি উল্টে গেছে বলে ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ আমাদের অবহিত করে। কখন জেটি মেরামত করা হবে আর কখন ফেরি চলাচল শুরু হবে সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত নয়। এবার দেখলাম ওয়াহিদ ভাই ও বেবী আপাও বেশ চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। আমরা ফেরিঘাটের কাছে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলাম। রাত দুটোর দিকে ফেরি পারাপারের ঘোষণা দেয়া হয়। কালক্ষেপণ না করে আমরা দ্রুত গিয়ে উঠেছি ফেরিতে। ফেরি বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবার পরে হঠাৎ করে ওয়াহিদ ভাইর মনে পড়ে সে গাড়ি তোলেনি ফেরিতে। ফেরি চালককে অনুরোধ করে আবার জেটিতে ফেরা এবং গাড়ি তোলা হয়। দোতলা ফেরির বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আমি ও আমার বন্ধু। অঝোড় ধারায় কাঁদছে সে। সে জানায়, কীভাবে কাল সকলের সামনে মুখ দেখাবে। সবাই তাকে কী বলবে। আত্মহত্যার চিন্তার কথাও সে বলতে দ্বিধা করে না। তার মানসিক অবস্থা দেখে আমি দ্রুত ভেতরে নিয়ে যাই। রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যান ওয়াহিদ ভাই বেবী আপা ও লুলু আপা। গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের প্রবেশ মুখ থেকে কিছুটা আগাতেই দেখি অত রাতে রাস্তা জুড়ে গাড়ি বহর এবং লোকজনের উপস্থিতি। আরো সামনে যেতেই দেখি পুলিশের গাড়ি, মন্ত্রীর গাড়ি সহ বহু গাড়ি, গেটের কাছে পৌছে দেখি গেট খোলা এবং বাড়ির আঙ্গিনা এবং বারান্দা জুড়ে মানুষের ভিড়।

গাড়ি থেকে নামতেই সকলে সমস্বরে চীৎকার করে ওঠে ‘ওই এসেছে, ওই এসেছে’। চারিদিকে হতচকিত ও ভাবলেশহীন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অতি দ্রুত ঘরে প্রবেশে উদ্যত আমি। শুনতে পাচ্ছিলাম ওয়াহিদ ভাই ও বেবী আপা বারান্দায় দাঁড়ানো মাকে বাড়ির আঙ্গিনা থেকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ঘটনার সার সংক্ষেপ বর্ণনা করছেন।

মার জবাব বলে গেলে ভাবনার কিছুই থাকতো না। বারান্দায় উঠতেই ভিড়ের মাঝখানে দাঁড়ানো আমার সেজ মামা বললেন, কেবলমাত্র অবহিত না করার দরুণই এতগুলো মানুষকে এত দীর্ঘ সময় গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর শ্বাসরুদ্ধক অবস্থায় কাটাতে হয়েছে।

বাড়িতে না জানিয়ে কিছু করা অনুচিত, বিশেষ করে ওই বয়সে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল আমার পরিবারের কাছে প্রথম বিবেচ্য। ঝড়ে দুর্গতদের রিলিফ সামগ্রী বন্টনে যাওয়া এবং গভীর রাতে গৃহে প্রত্যাবর্তনের ঘটনার এভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমার বন্ধুর গৃহে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি ঠিক এমন ছিল না। শুধু তাই নয়, প্রায় এক দশক পর মেয়ের বিয়ে সময় স্বামী ও তার পরিবার যেন কোনভাবেই সেই ১৯৬৯ সালের বৈশাখ মাসের ঘটনাবহুল রাতের কথা জানতে না পারে তার জন্য যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে তার অভিভাবক। তারও ৩০ বছর পরও মেয়েটি তার স্বামীকে জানাতে সাহস করেনি যে, সে ঝড়ে দুর্গতদের সাহায্যার্থে গিয়ে আটকে পড়ায় গভীর রাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। তাও একা নয় বরং সাথে ছিলেন এমন দু’জন ব্যক্তিত্ব যাঁরা সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত, শ্রদ্ধেয় ও গুণীজন হিসেবে পরিচিত।

বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার একটি অংশের চিত্র এতে গভীরভাবে প্রতিফলিত।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ