নিউইয়র্ক: এবার বাংলাদেশ নিয়ে নিউইয়র্কে বিষোদগার করেছেন জামায়াতের ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। এ সময় বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও গণতন্ত্রের কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।
শনিবার নিউইয়র্কে জ্যামাইকার ইয়র্ক কলেজে জামায়াতের অর্থায়নপুষ্ট হিউম্যান রাউটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামক এক সংগঠন আয়োজিত সেমিনারে তিনি এই বিষোদগার ও সমালোচনা করেন।
এই সমালোচনার দৌড়ে যেন আরো এক কাঠি সরেস কানাডা থেকে সেমিনারে আসা ড. আবিদ বাহার।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব সবচেয়ে বড় রাজাকার।
নিজেকে জামায়াতের আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও যুদ্ধাপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ জিয়াউদ্দিনসহ স্কাইপ কেলেঙ্কাকারীতে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান ক্যাডমান।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে জবাবদিহিতা অত্যাবশ্যক এবং আন্তর্জাতিক মহলের সম্পৃক্ততা ছাড়া তা সম্ভব নয়।
দীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরিপক্ক গণতন্ত্র নেই। তাহলে সরকার সমালোচনা সহ্য করতো। যুদ্ধাপরাধ বিচারের এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে আরো দীর্ঘসূত্রী করবে।
বাংলাদেশে নোংরা রাজনীতি চলছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কেন আবার আন্তর্জাতিক মহলের নেতিবাচক নজরে এসেছে’ তার উত্তর দিতে পারবো না। তবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের যে বিচার চলছে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোন মানদণ্ডেই পড়ে না।
‘বর্তমান বাংলাদেশ’ এ বিচার সম্পন্ন করতে ‘সক্ষম’ নয় দাবি করে তিনি বলেন, তৃতীয় কোন দেশে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বিচারকদের অধীনে মামলা নেয়ার আহবান জানিয়েছি। যেখানে সাক্ষী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নির্ভয়ে আদালতে যেতে পারবেন। কারণ ইতোমধ্যেই সাক্ষী নির্যাতন ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।
স্কাইপ কেলেঙ্কারীর ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, যারাই এতে জড়িত তারা ফেডারেল ক্রাইম করেছেন। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা অবশ্যক। আর বিচারক পরিবর্তনেই সব সমাধান হয়না। শুরুতেই বিচার প্রক্রিয়াকে ‘পলিউটেড’ করা হয়েছে।
টবি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ মাস আগে জাতিসংঘ সফরকালে বিচার প্রক্রিয়ার স্বীকৃতিতে আন্তর্জাতিক মহলের যে সহায়তা চেয়েছেন তার জন্য বিচারে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হতে হবে। কারণ অবিচার সবর্ত্রই সুবিচারে হুমকি।
বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূহত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে তদন্তের আবেদন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে প্রক্রিয়াটি খুবই ধীর।
সেমিনারে কানাডা থেকে আসা ড. আবিদ বাহার বলেন, শেখ মুজিব সবচেয়ে বড় রাজাকার। তিনি জানতেন কারা রাজাকার। তাই রাজাকারদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বডিগার্ড ও মাস্তান আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, শেখ মুজিব কিভাবে জাতির পিতা হয়?
তিনি আরো বলেন,শেখ মুজিব ভুট্টোকে ফোন করে তাকে এবং তার পরিবারকে ‘সেভ’ করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ভাই মীর মাছুম আলী ও তার ভতিজি শাহানা মাছুম, মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ড. নকিবুর রহমানও ছিলেন সেমিনারে। আরো ছিলেন-ড. জুন্ননি চৌধুরী, এটর্নি আব্দুল আজীজ, ড. নিজামউদ্দীন, ড. আব্দুল হাফিজ, বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান জিল্লু প্রমুখ।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাহাতাব উদ্দীন। তিনি সরাসরি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪