নিউইয়র্ক: পরিশ্রমে, সৎ উপার্জনে নিউইয়র্কে ভালো আছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই বলেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এদিকে, অভিবাসী দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি জাতিসংঘের এক জরিপ বলছে, বিশ্বে বর্তমানে অভিবাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩২ কোটি, যার একটি বড় সংখ্যাই যুক্তরাষ্ট্রে। কেবল ২০০২ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই প্রবেশ করেছেন প্রায় দেড় কোটি অভিবাসী। এদের মধ্যে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
জরিপমতে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো ধনী দেশগুলোতে অভিবাসী মানুষের সংখ্যা আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি।
কামাল আহমেদ মাঝারি আয়ের একটি কাজ করেন। বেশ কয়েক বছর হলো নিউইয়র্কে আছেন। তার সঙ্গে কথা হলো একটি বাঙালি রেস্তোরাঁয়। তিনি তখন রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। ঘরে প্রিয়তমা স্ত্রী। কিন্তু প্রবাসের কঠিন বাস্তবতায় কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই রেস্তোরাঁতেই রাতের খাবার সেরে নিচ্ছেন।
অভিবাসী দিবসে প্রতিশ্রুতিশীল সংস্কৃতিকর্মী কামাল বললেন, আমরা কেউ জীবনের তাগিদে আবার কেউবা উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসী জীবন বেছে নিয়েছি। তবে অবশ্যই বলবো, মধ্যপ্রাচ্যে বা অন্য অনেক দেশেই অভিবাসীদের গোপনে বা পালিয়ে বসবাস ও কাজ করতে হয়। অনেক দেশে বর্ণবাদেরও শিকার হন অনেকেই। তাই, সত্যি বলবো যে, নিউইয়র্কে নিরাপদ প্রবাস জীবনে ভালোই আছি। তবে কষ্ট শুধু একটাই, দেশের কথা মনে হলেই প্রাণটা কেঁদে ওঠে। ফেলে আসা স্বজনদের খুবই মনে পড়ে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বললেন, এ দিনটি অবশ্যই অভিবাসীদের স্বীকৃতির দিন। শ্রম ও নিষ্ঠা, সততাকেই মর্যাদা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।
মনিরুল হুদা অনেক পুরনো মানুষ এই নিউইয়র্কে। এসেছেন ১৯৮১ সালে। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হতেই তার চোখে-মুখে ভেসে ওঠে আলোর ছটা। তার কথাগুলো দেশের স্বজনরা জানবেন বাংলানিউজের মাধ্যমে।
মধ্যম সারির কাজে আয়-রোজগারও ভালো। বললেন, ভালো আছি। পরিশ্রম করি। সৎ উপার্জনে ভালোই আছি।
প্রবাসে ভালো থাকার বড় আরেকটি কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, বাংলাদেশের সব জেলার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়। সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, নোয়াখালী প্রতিটি জেলার মানুষই এখানে রয়েছেন। তাদের পেলেই মনে হয়, স্বজনদের পেলাম।
বাঙালি অধ্যূষিত এক চিকিৎসা ক্লিনিকে গিয়ে দেখা মিললো এনায়েত আলীর সঙ্গে। শীতের রোগবালাইয়ের মৌসুমে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এদেশে তিনি ভালো আছেন। তবে অভিবাসীদের সত্যিকার ভালো থাকতে আরো অনেক দূর যেতে হবে। এখনো অভিবাসীদের কাছে বসবাসের এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ বসবাসের জন্য অভিবাসীবান্ধব এলাকা এখন খোঁজ করে সবাই।
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতির উন্নয়নে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল অভিবাসী দিবসে প্রবাসীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে এস্টোরিয়ার বাঙালি অধ্যূষিত ৩৬ অ্যাভিনিউ এলাকায়। নিউইয়র্কে এটি বাঙালিদের বসবাসের সবচেয়ে পুরনো এলাকা।
খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে আব্দুল্লাহ-আল-মামুন নিজেই ছুটে এলেন পাশের একটি কফিশপ থেকে। ফুটপাথ দিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ডাকলেন, এক্সিকিউজ মি ভাই! আমি কিছু বলতে চাই। আনন্দের সঙ্গেই কথা হলো তার সঙ্গে।
মামুন সাহেব জানালেন, তিনিও প্রায় দুই দশক ধরে বসবাস করছেন এই নিউইয়র্কেই। কাজের মর্যাদা আর সম্মান নিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আইন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার পদক্ষেপ নিউইয়র্ক বাঙালিদের জন্য সুখবরই এনে দিয়েছে।
এখন সবাই কোনো ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়াই পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে এতদিনে অন্ততপক্ষে এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
অভিবাসন বিষয়ে নিউইয়র্কে কর্মরত আইনজীবী অশোক কর্মকার বলেন, অভিবাসন অন্যায় কিছু নয়। অভিবাসী মানুষেরা যে দেশেই থাকেন, সেখানকার অর্থনীতি আর সমাজে রেখে চলেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি অভিবাসী মানুষেরা নিজেদের কর্মদক্ষতায় এ প্রবাসে আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল।
বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪