নিউইয়র্ক: দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগের অভাবেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে।
সেখানকার রেমিট্যান্স পাঠানো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে প্রতি বছর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে রেমিট্যান্স উৎসের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে- সৌদি আরব, দ্বিতীয় স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে, বার্ষিক দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিমাসে গড়ে দুইশ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠানো হয় বাংলাদেশে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণের এই নি¤œগতি দেখা গেছে।
তবে চলতি বছরের শুরু থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে রেমিট্যান্সের পাঠানোর পরিমাণ। এর আগে এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ তিন বিলিয়ন থেকে চার বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ছিল।
প্রবাসীদের অর্থ দেশে পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী এক্সচেঞ্জ এবং বেসরকারি আরো ছয়টি প্রতিষ্ঠানসহ দেশি-বিদেশি মোট ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশি বড় প্রতিষ্ঠান তিনটির অন্য দুটি হলো স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস ও প্লাসিড।
সোনালী একচেঞ্জের যুক্তরাষ্ট্র প্রধান আতাউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেবল সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে গত ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রেমিট্যান্সের নি¤œগতি লক্ষ করা গেছে। কেবল ২০১১ সালে সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯২ মিলিয়ন ডলারে। এরপর আবার ২০১৩ সালে কমে গিয়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪ মিলিয়ন ডলারে।
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৭৭ মিলিয়ন ডলার। তবে বছর শেষে এর পরিমাণ ৮৪ মিলিয়নেই দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আতাউর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে আতাউর রহমান বলেন, আগে দেশের সরকারি আবাসন খাতে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ হলেও হঠাৎ করেই এ খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জীবিকা নির্বাহে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের মাসিক আয় কমে গেছে। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আরো একটি কারণ হিসেবে তিনি বেকারত্বকেই দায়ী করেছেন।
তিনি জানান, অনেকেই এখন একাধিক চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে বলে সোনালী এক্সচেঞ্জের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে, বেসরকারি রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসের যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দেশে সঠিক খাতে বিনিয়োগে প্রবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার অভাবেই প্রধানত রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আবাসন খাতে বিনিয়োগের অভাব এবং বিনিয়োগে অনীহা।
বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতিবছর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪