নিউইয়র্ক: নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে অধীর অপেক্ষায় রয়েছে ‘বিগ অ্যাপেল’-এর শহর নিউইয়র্ক। দিন পেরুলেই সেইক্ষণ ‘নিউইয়ার্স ইভ’।
‘এভরি ওয়ান হ্যাজ এ বাইট’- ঘড়ির কাঁটায় বছরের শেষ দিনের রাত ঠিক ১২টা ১ সেকেন্ডে স্বর্গ থেকে বিধাতার আশীর্বাদ হয়ে ‘বিগ অ্যাপেল’ নেমে আসবে নিউইয়র্কবাসীর জন্য।
বহুমাত্রিক সংস্কৃতির রাজধানী নিউইয়র্কে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জীবন-জীবিকার প্রতীক এই ‘বিগ অ্যাপেল’। আর হিমাঙ্কের নিচে ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এক লাখ দর্শনার্থী ‘নিউইয়ার্স ইভ’ উৎসবে যোগ দেবেন ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ারে। নতুন বছরকে বরণ করতে টাইম স্কয়ারে উপস্থিত থাকতে ইতোমধ্যেই টিকেট কিনেছেন তারা।
৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ সেকেন্ডে কয়েক টন রঙিন কাগুজে পুষ্পবৃষ্টিতে সিক্ত হবে গোটা টাইম স্কয়ার। রাইয়ান সিক্রেস্ট বলড্রপ অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন শিল্পী টেইলর সুইফট ও ইন্ডিয়ানা মেন্ডেজ।
এদিকে, কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ছেয়ে ফেলা হয়েছে নিউইয়র্ক সিটিকে। কয়েক হাজার ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায় ছেয়ে গেছে লোয়ার ম্যানহাটন থেকে মিডটাউন ম্যানহাটন পর্যন্ত।
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার সঙ্গে সাম্প্রতিককালে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না নিউইয়র্ক পুলিশ। এ জন্য কয়েক হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাস প্রতিরোধ বাহিনী, বোম স্কোয়াড ও বোমাসন্ধানী কুকুর পাহারা দেবে পুরো টাইম স্কয়ার ও আশেপাশের এলাকা।
ভবনগুলোর ছাদে নিরাপত্তা টহল ছাড়াও টাইম স্কয়ারের জমায়েতের ওপর নজরদারি করবে হেলিকপ্টার টহল। এছাড়া থাকবে সাদা পোশাকধারী পুলিশ। কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল হামলা হুমকি মোকাবেলায় থিয়েটার, পার্কিং গ্যারেজ ও কনস্ট্রাকশন এলাকা এবং হোটেলগুলোতে দিনের শুরু থেকেই তল্লাশি চালাবে পুলিশ। সাবওয়ে চলাচল ব্যবস্থাতেও একই সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
বর্ষবরণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্যানিটেশন কর্মীরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করবেন। নতুন বছরের পার্টিহ্যাট, বাঁশি, লাইট স্টিক, চশমা ও কাগুজে পুষ্পবৃষ্টির কাগজসহ প্রায় ৫০ টন আবর্জনা দ্রুত পরিস্কারে প্রস্তুত হয়েছেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা।
‘নিউইয়ার্স ইভ’-র ‘বিগ অ্যাপেল’ খ্যাত অ্যাপেল সদৃশ ১১ হাজার ৮শ ৭৫ পাউন্ড ওজনের আলো ঝলমলে কাচের (ক্রিস্টাল) বল ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন বছরের শুভাগমনের মুহূর্তে ম্যানহাটনের ১ টাইম স্কয়ার ঠিকানার সুউচ্চ ভবনের ছাদে বিশেষ ফ্ল্যাগপোস্ট বেয়ে নেমে আসবে এই অ্যাপেল।
মঙ্গলবার রাতে এর মহড়াও হয়েছে। ১২ ফুট ডায়ামিটারের ১১ হাজার ৮শ ৭৫ পাউন্ডের এই ক্রিস্টাল বলে ২ হাজার ৬শ ৬৮টি ওয়াটারফোর্ড কাচের প্যানেলে নকশা করা অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমে ৩২ হাজার ২শ ৫৬টি এলইডি লাইট রয়েছে। ১৬ মিলিয়ন ভাইব্রেন্ট রঙ এবং বিলিয়নস প্যাটার্ন তৈরি করতে সক্ষম এই বলটি।
প্রতিবছরই ক্রিস্টাল বলের আলোক বিচ্ছুরণে ‘থিম’ পরিবর্তন হয়। যেমন, লেট দেয়ার বি লাইট লেট, দেয়ার বি পিস। এবার ২০১৫ সালের দুটো থিমে সাজানো হয়েছে বলটিকে, ‘গিফট অব ফিউচার’ এবং ‘গিফট অব ইমাজিনেশন। ’
গত ১০০ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই আলো ঝলমলে ক্রিস্টাল বলের প্রচলন হয়ে আসছে নিউইয়ার্স ইভ উৎসবে। ক্রিস্টাল বলের শুরুতে ২৫ ওয়াট থেকে বর্তমানে আধুনিকতম এলইডি লাইট ব্যবহার হচ্ছে। তবে আধুনিকায়নে সময়েরই প্রতিফলন ঘটছে আলোতে।
নিউইয়ার্স ইভ উৎসব আয়োজন তদারককারী টাইম স্কয়ার অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট টিম টমকিন্স সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নিউইয়ার্স ইভ-এ টাইম স্কয়ারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জমায়েত হবে এবং এক লাখ দর্শনার্থী বর্ষবরণের শুভক্ষণ উপভোগ করবেন।
তিনি বলেন, সুন্দর আগামীর জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে এই আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪