ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

নিউইয়র্কে পণ্ডিত রামকানাই দাশকে স্মরণ

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
নিউইয়র্কে পণ্ডিত রামকানাই দাশকে স্মরণ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

উপমাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী পণ্ডিত রামকানাই দাশের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে একটি আলোচনা সভা ও সংগীত সন্ধ্যা আয়োজিত হয়।

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে ‘সংগীত পরিষদ, নিউইয়র্ক’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।



অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সংগীত গবেষক এবং সংগীত শিল্পী মুত্তালিব বিশ্বাস শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বলেন, ওস্তাদ মোজাম্মেল হোসেন পদক (১৯৯৭), ওস্তাদ মোশাররফ হোসেন পদক (২০০৭), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০১১), বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ (২০১২), দেশের শ্রেষ্ঠ সংগীত গুণী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ থেকে রবীন্দ্র পদক (২০০০), একুশে পদক (২০১৪ ) সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন পণ্ডিত রামকানাই দাশ। পুরস্কার প্রাপ্তিগুলোর সবই ছিল দেশের সংগীতের ক্ষেত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি। একজন বড়ো মাপের সংগীতজ্ঞ হয়েও রামকানাই দাশ অহংবোধবর্জিত, আত্মপ্রচার বিমুখ, গুণগ্রাহী ব্যক্তি ছিলেন।

রামকানাই দাশের ‌স্মৃতিচারণ করে শিল্পী মুত্তালিব বিশ্বাস বলেন, আমি নিউইয়র্কে এসেছিলাম ২০০২ স‍ালে, তিনি এসেছিলেন ২০০৪-এ। জেনেছিলাম, তিনি কয়েক মাসের বড়ো হলেও, আমরা সমবয়সী, তাই ‘দাদা’ হয়ে গিয়েছিলাম একে অপরের। সান্নিধ্য-বাসনায়, তার আন্তরিক আমন্ত্রণেও বটে, আমি প্রায়ই যেতাম তার কাছে, কাবেরী দাশের বাসায়। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের আলোচনা হতো, প্রধানত সংগীত বিষয়ে । তিনি বক্তা আমি শ্রোতা। তার আবাল্য সংগীত-জীবনের কাহিনী শুনে এবং তার অর্জিত সংগীত-বিদ্যার অনুপম নমুনার পরিচয় পেয়ে বুঝেছিলাম: দেহে-মনে তিনি ছিলেন মূর্তিমান সংগীত। রাগসংগীতে পারদর্শী হয়েও তিনি ছিলেন লোকসংগীতের একনিষ্ঠ স্তাবক ও সাধক। এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা, কারণ, লোকসংগীতের প্রতি এমন মূল্যবোধ সব রাগসংগীত-শিল্পীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। তার গাওয়া লোকসংগীতে পাওয়া যায় তার জীবন-দর্শন ও প্রাণের পরিচয়। রামকানাই দাশের আত্মজীবনীমূলক পুস্তকে, তার অকপট উক্তিই শুধু নয়, তার ভাষাজ্ঞান, সাহিত্যবোধ ও শিল্পগুণসম্মত প্রকাশ ক্ষমতা আস্বাদনে আমি বিমুগ্ধ।

একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্য ব্যক্তিত্ব  জামাল উদ্দিন হোসেন বলেন, এই অসাধারণ মানুষটির সাথে সৌভাগ্যক্রমে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো। নিউইয়র্কে তার কন্যার বাসায় বসে একাধিকবার সংগীতসহ শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার বিরল সুযোগ আমার হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে, যে মানুষটি বাংলা লোকসংগীতের একজন প্রবাদপুরুষ, তিনিই আবার রবীন্দ্রসংগীত এর একজন সেরা শিল্পী এবং শিক্ষক হিসেবে সম্মানিত হন রবীন্দ্র পুরস্কারে।

সাপ্তাহিক বাঙালি সম্পাদক এবং পণ্ডিত রামকানাই দাশের প্রিয়ভাজন কৌশিক আহমেদ তাকে বলেন, সংগীতের পাশাপাশি প্রকৃতির সাথেও ছিলো তার গভীর প্রেম। তিনি গাছপালা, ফুল, পাখি নিয়ে অনেক সময় কাটাতেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ তার সংক্ষিপ্ত স্বাগতিক বক্তব্যে বিভিন্ন সময়ে টিভি, বেতার এবং সংবাদপত্রের জন্যে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে গিয়ে নিজেকে বারবার সমৃদ্ধ করবার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

কিরণ বলেন, পণ্ডিত মশাই আমার কাছে পিতার সমান ছিলেন। তিনি আমাদের সাউথ এশিয়ান মিউজিক সোসাইটি পরিদর্শন করে ধন্য করেছিলেন সবাইকে।

বাংলাদেশ থেকে আসা অন্যতম জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী ও গবেষক অনিমা মুক্তি গোমেজ পণ্ডিত রামকানাই দাশের লেখা এবং সুরে ২টি গান অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে সবাইকে বিমোহিত করেন। ধামাইল পর্যায়ের গানটি পরিবেশনের সময় তিনি শিল্পী এবং সংগীত শিক্ষক কাবেরী দাশকেও মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান।
popndit
উত্তর আমেরিকার শীর্ষ বাংলা সংগীত তারকা মাহবুব শাহ পণ্ডিত রামকানাই দাশের কাছে তার গানের বিশেষ তালিমের কথা বিশেষ শ্রদ্ধায় স্মরণ করে ভিন্নমাত্রার ২টি গান পরিবেশন করে সমবেত সংগীতপ্রেমীদের মুগ্ধ করেন। শিল্পী চন্দ্রা রায়ও রামকানাই দাশের লেখা গান পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানের আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ ছিলো তার দৌহিত্রী এবং উচ্চাঙ্গ সংগীতের অনন্য প্রতিভা পারমিতা মুমুর রাগ মালকোষ পরিবেশন। পণ্ডিতজির বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে নিরঞ্জন দে যাদু নির্মিত বিশেষ তথ্যচিত্র ‘সুরের পথিক’ এর নির্বাচিত অংশ উপস্থাপন করেন সংস্কৃতিসেবী মিনহাজ আহমেদ। এই পর্যায়ে তার একুশে পদকপ্রাপ্তির পরপর নিউইয়র্কে আকবর হায়দার কিরনের নেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষও দেখানো হয়।

শিল্পী এবং শিক্ষক কাবেরী দাশের পরিচালনায় সংগীত পরিষদের একেবারে ক্ষুদে থেকে বড়দের পরিবেশিত এবং পণ্ডিত রামকানাই দাশ রচিত এবং সুরারোপিত সংগীত এক ভিন্ন আবহের জন্ম দেয়। পুরো অনুষ্ঠানটি বিশেষভাবে ধারন এবং বড় পর্দায় প্রদর্শন করে নিউইয়র্ক বাংলা টিভির প্রধান মীর শিবলী সবাইকে চমৎকৃত করেন। শিল্পী জাহেদ শরীফের তৈরি বিশাল ব্যাকড্রপ ছিলো চোখে পড়বার মতো। নিহার সিদ্দিকীর তোলা অনেক ছবিতে সমৃদ্ধ এবং নোঙর থেকে প্রকাশিত বিশেষ স্মারক গ্রন্থ অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে যন্ত্রসংগীতে ছিলেন প্রবাসের খ্যাতনামা সারগাম ব্যান্ডের মাসুদ, তুষার এবং তবলায় পিনাক পানি গোস্বামী। অনুষ্ঠানটি আয়োজনের ব্যাপারে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করে সাউথ এশিয়ান মিউজিক সোসাইটি, অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন প্রবাসী শারমিন রেজা ইভা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ