হ্যাঁ ট্রাম্প সমর্থকদের মর্মাহত হওয়ার অধিকার অবশ্যই আছে। তবে তাদের বিস্মিত হওয়ার অধিকার নেই।
ট্রাম্প মনে করেন তার ক্ষমতার কারণেই নারীকে যেমন ইচ্ছা পেতে পারেন।
“যখন তুমি স্টার হয়ে যাবে, তখন নারীরা তোমাকে এসব করতে দিতে একটুও বাধা দেবে না,” এইতো বলছিলেন ট্রাম্প!
বিবাহিত নারীদের নাকি তার কাছে বেশি আকর্ষণীয় লাগে। রেকর্ডটিতে এই কথা বলতে ট্রাম্পের মুখ থেকে যা বের হলো তা লেখারও অযোগ্য।
ওয়াশিংটন পোস্টে শুক্রবার যখন কথাগুলো প্রথম প্রকাশিত হলো- তখন ট্রাম্প সমালোচকরাই কেবল না, তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররাও এবার মুখে ছি! ছি! ছোটালেন।
রিপাবলিকান চেয়ারম্যান রিন্স প্রিবাসের পক্ষে পাঠানো একটি দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জিওপির মূলমন্ত্রকেই অপমানিত করেছেন ট্রাম্প।
বলা হয়েছে, “কোনো নারীর ক্ষেত্রে কখনোই এসব কথা বলা যাবে না, তাদের নিয়ে এমন ভাষার ব্যবহার করা যায় না... কখনোই না। ”
ট্রাম্পের তরফ থেকে, ক্ষমা চাওয়া গোছের একটা কিছু করা হয়েছে- তবে এই কৃতকর্মটি যে তার ভুল ছিলো সে কথা ঘুণাক্ষরেও বলেননি ট্রাম্প।
বরং এরচেয়েও বাজে বাজে কথা নাকি সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মুখে শোনা গেছে- সে অভিযোগ তুলে ট্রাম্প বলেন, “যাইহোক, আমার এসব কথায় কেউ আহত হলে তার জন্য ক্ষমা চাইছি। ”
আর ট্রাম্পের এমন নোংরামি এই প্রথম নয়। নারীদের নিয়ে প্রকাশ্যেই তো তিনি অনেক নোংরামি করেছেন।
এনবিসি’র ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’র কাস্ট অ্যান্ড ক্রুদের নিয়ে মন্তব্য করতে একবার এক ক্যামেরাউম্যানকে নিয়ে বলেছিলেন, “ওর সঙ্গে বিছানায় যেতে অনেকেরই ভালো লাগবে। ”
একবার মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার সময় উটাহ সুন্দরীর সঙ্গে কী কাণ্ড করেছিলেন তা নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্টে এসেছে। সাবেক এই মিস উটাহ বলেন, “ট্রাম্প সরাসরি আমার ঠোঁটে চুমু দেন। সে সময়ে তার স্ত্রী ছিলো মার্লা মেপলস। আর আমার ধারণা সেসময় বেশ কয়েকটি মেয়েকেই ট্রাম্প এমন করে মুখে চুমু দিয়েছেন। ”
ট্রাম্পের সাবেক স্ত্রী ইভানাকে নিয়েও রয়েছে তার নোংরামির গল্প। বলা হয় একবার ক্রুদ্ধ হয়ে সাবেক স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেন ট্রাম্প। ইভানার বাড়িতে তার তখনকার স্বামী পাশের রুমে থাকা অবস্থায় ইভানার ওপর চড়াও হন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইভানা প্রথম দিকে এই ঘটনাকে ধর্ষণ বলে উল্লেখ করলেও পরে অবশ্য বলেছেন ঠিক ধর্ষণ নয়, তবে যৌন নিপীড়ন বলা যাবে।
ট্রাম্প অবশ্য তার সাবেক স্ত্রীর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে। আর মিস উটাহর কথা বলেছেন, তিনি আসলে মেক-আপ আর্টিস্টের কারণেই এমনটা করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।
টাইমসকে তিনি বলেন, “অনেক অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু এর কিছুই সত্য নয়, আমি আসলে মেয়েদের ভীষণ সম্মানের চোখে দেখি। মেয়েরাই তা বলবে। ”
যাই হোক এতদিন না হয় এসব কেবলই শোনা কথা, ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছিলো। এবার ট্রাম্পের নিজের কণ্ঠেই শোনা গেলো তার ভেতরের নোংরামির প্রকাশ।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, রিপাবলিকান নেতারা এখন কী করবেন? তারা অবশ্য এরই মধ্যে নিন্দার ঝড় তুলেছেন। হাউজ অব রিপাবলিকান কনফারেন্সের চেয়ারম্যান ক্যাথি ম্যাকমরিস রজার্স বলছিলেন, “নারীদের নিয়ে এমন কথা বলা কখনোই উচিত নয়। মি. ট্রাম্পের অবশ্যই বুঝতে হবে, তিনি আজ বলেছেন নাকি অতীতে বলেছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ”
হাউস স্পিকার পল রায়ান শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ট্রাম্পের এই কথাগুলোকে ‘অসুস্থতা’ বলেই উল্লেখ করেছেন, আর উইসকনের একটি কর্মসূচিতে ট্রাম্পের সঙ্গে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে বিরত থেকেছেন।
তবে রিপাবলিকানরা এখন কেনো এমন করছেন? তারা কি আগেও জানতেন না ট্রাম্প এমনই? সে প্রশ্ন তুলেছে মিডিয়াগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৬
এইচএ/এমএমকে