ডলফিনেরা স্মার্ট, বুদ্ধিমান, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মিশুক হয়। কিন্তু স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটির কিছু অন্ধকার দিকও রয়েছে।
১৯৮৪ সালে একটি ক্লাসিক গবেষণায় জীববিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ডলফিনের ধূর্ত ও কদর্য এ রূপটি দেখতে পান। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের অ্যাকুরিয়ামে দু’টি বটলোনোস ডলফিনের ওপর বিস্তারিত গবেষণা করেন তারা।
অস্ট্রেলিয়ার ডার্টমাউথের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডলফিন গবেষণা জোটের সহপরিচালক রিচার্ড কনর বলেন, ‘তারা খুব বুদ্ধিমান হয়। কিন্তু মানুষের মতো কিছু কদর্য দিকও আছে তাদের মধ্যে’।
কনর এবং তার সহকর্মীরা আশির দশকের আর একটি গবেষণায় দেখেন, প্রজনন মৌসুমে হাঙ্গরের মতোই হিংস্র প্রতিযোগিতা শুরু হয় পুরুষ বটলোনোস ডলফিনের মধ্যে। তারা নারী ডলফিনের প্রতি চড়াও হয়। তবে প্রতি চারবারের প্রচেষ্টায় একবার করে সফল হয়।
তারা ১৯৯২ সালে গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে লেখেন, ‘যখন দুই বা তিনটি পুরুষ একটি নারী ডলফিনকে দখল করতে চায়, তখন এ ধরনের হিংস্রতা দেখা দেয়। পুরুষরা নারী সঙ্গীর দিকে আগ্রাসনের ভঙ্গিতে ছুটে যায়, লেজ ও মাথা-ঝাঁকুনি দিয়ে আঘাত করে। শারীরিক মিলনের ব্যর্থতায় কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে নারী ডলফিনকে’।
‘নারী ডলফিনকে নিয়ন্ত্রণে পুরুষ ডলফিনদের এই অব্যাহত প্রচেষ্টা ডলফিন সম্পর্কে একটি অশুভ সত্য বের হয়ে আসে’- বলেন গবেষকরা।
১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে ৩৭টি আহত শিশু বটলোনোস ডলফিন ভার্জিনিয়ার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসে। শিশুগুলোর শরীরে বিশেষ করে মাথা ও বুকে তীব্র ও ভোতা বলপ্রয়োগের চিহ্ন ছিল। তাদের একাধিক পাঁজর ভাঙা, ফুসফুস কাটা এবং নরম টিস্যু রক্তাক্ত ছিল।
২০০২ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে প্রমাণ আছে, প্রচুর শিশু ডলফিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল প্রাপ্তবয়স্করাই। গবেষকরা দেখেন, ভার্জিনিয়া বিচের কাছাকাছি তীরে জলের মধ্যে শিশুদের ওপরের দিকে ছুড়ে মারছে বড় পুরুষ ডলফিনগুলো। এটি খেলা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি একটি উপায় বয়স্ক পুরুষদের শিশু ডলফিন হত্যার ঘটনা। তাদের মায়েদের সন্তান হত্যার মাধ্যমে আঘাত দেওয়া হয়, যেন নারীরা ওই পুরুষ ডলফিনের কাছে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
২০১৩ সালে গবেষকরা একটি পুরুষ ডলফিনকে একটি নবজাত ডলফিনের ওপর আক্রমণ করতে দেখেন। তবে শিশুটি পালিয়ে যেতে সমর্থ্য হয়।
শিশুহত্যার এ ঘটনা প্রকৃতপক্ষে ডলফিন সমাজে একটি বাস্তব এবং বর্তমানে বিপদজ্জনক। একটি নারী ডলফিনকে পুরুষদের সঙ্গে অতিরিক্ত যৌন মিলনে বাধ্য ও প্রস্তুত করতে তা ঘটানো হয়। হত্যাকারী পুরুষরা ওই শিশু ডলফিনদের বাবা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি’- বলেন কনর।
আরও একটি বিস্ময় ডলফিনের প্রজনন আচরণের মধ্যে লুকোনো ছিল। ২০০৪ সালে পিতৃত্ব বিশ্লেষণে দেখা যায়, তারা মাঝে-মাঝে অজাচারও করে থাকে। বিজিএ নামে পরিচিত এক পুরুষ ডলফিন ১৫ বছর বয়সী নিজের মেয়ের সঙ্গে যৌন মিলন করে শুধুমাত্র বংশবৃদ্ধির আশায়।
‘২০১০ সালের একটি গবেষণায় আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এ প্রজাতির পুরুষ ডলফিনদের মাঝে নিজের মেয়ে বা নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনের হার বেশি’- বলেন কনর।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এএসআর/টিআই