ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

সঙ্গীর খোঁজে স্ত্রী নেকড়ের ৮৭১২ মাইল পাড়ি

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০
সঙ্গীর খোঁজে স্ত্রী নেকড়ের ৮৭১২ মাইল পাড়ি

সঙ্গীর খোঁজে ৮ হাজার ৭১২ মাইল পাড়ি দিয়েছে এক ধূসর নেকড়ে। তবে, সঙ্গীকে খুঁজে পাওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে ওই স্ত্রী নেকড়ে। 

সংবাদমাধ্যম জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের কথা। ভালোবাসার সঙ্গীর খোঁজে ঘর ছেড়ে দূরে পাড়ি জমালো ওআর-৫৪ নামে একটি নেকড়ে।

নামটি বিজ্ঞানীদের দেওয়া। তার গলায় বাঁধা রেডিও ট্রান্সমিটার কলারের মাধ্যমে জানা যায় পরের দু’ বছরে ৮ হাজার ৭১২ মাইল পাড়ি দিয়েছে সে। ঘুরে বেড়িয়েছে পাহাড় ও তৃণভূমি। খাবারের প্রয়োজনে করেছে শিকার।

বিজ্ঞানীরা ওআর-৫৪’র গতিবিধি থেকে জানতে পারেন, এ সময়ের মধ্যে দু’বার যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ওরেগনে তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়েছে সে। হয়তো তখনো কোনো সঙ্গী পায়নি বলে অভিযোগ করতেই গিয়েছিল সে। তারপর গত শরতে সে পৌঁছায় নেভাডা অঙ্গরাজ্যে। হাঁটা থামায়নি সে। সঙ্গীর খোঁজে রোজ গড়ে ১৩ মাইল হেঁটেছে এ নেকড়ে।

কম বয়সী নেকড়েদের জন্য ঘর ছেড়ে দূরে পাড়ি জমানো খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এ তথ্য জানান অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জীববৈচিত্র্য কেন্দ্রের জীববিজ্ঞানী আমারক ওয়েইস। তিনি বলেন, নেকড়েদের বয়স দেড় বা দুই বছর হলেই সঙ্গীর খোঁজে বের হয় ওরা।

ওআর-৫৪’র বাবা ওআর-৭ও সঙ্গীর খোঁজে ক্যালিফোর্নিয়া গিয়েছিল। পরে সঙ্গীসহ ফিরে আসে ওরেগনে। সেখানেই জন্ম নেয় ওআর-৫৪। কিন্তু বাবার মতো সফল হয়নি ওর গল্পটা। এই শীতে তার কলারের রেডিও ট্রান্সমিটারের তথ্যে দেখা যায়, সে একই জায়গায় আটকে রয়েছে। পরে গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার শাস্তা কাউন্টিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার মৎস্য ও বন্যপ্রাণী বিভাগ ওআর-৫৪’র মরদেহের ময়নাতদন্ত করে তার মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করছে।

নেকড়েটির বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। ওয়েইস বলেন, নেকড়েরা সঙ্গীর খোঁজে যাত্রার সময় পথে মূত্র বিসর্জনের মাধ্যমে নিজেদের চিহ্ন রাখে। পরে সেসব জায়গায় আবারও ফিরে আসে তারা। এটা অনেকটা ‘পি-মেইল’। কিন্তু ওআর-৫৪ কোনো সঙ্গী খুঁজে পায়নি; এর মানে এ অঞ্চলে খুব বেশি নেকড়ে নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে একসময় প্রচুর ধূসর নেকড়ে বাস করতো। ১৯ ও ২০ শতাব্দীতে সরকারের চেষ্টায় তাদের একেবারে নির্মূল করে ফেলা হয়। তবে এখন সংরক্ষণবাদীরা তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তারপরও তাদের সংখ্যা নগন্য।

ওয়েইস বলেন, যদি এ অঞ্চলে যথেষ্ট নেকড়ে থাকতো, তাহলে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যেই ওআর-৫৪ সঙ্গী খুঁজে পেতো এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে সে গর্ভবতী হতো। তাহলে এপ্রিলেই কয়েকটি বাচ্চা নেকড়ের জন্ম দিতো সে।

নেকড়েটির মৃত্যু প্রসঙ্গে ওয়েইস বলেন, দলে থাকুক কি একা, নেকড়েদের জীবন বেশ কঠোর। তরুণ ও স্বাস্থ্যবান একটি নেকড়েও নানা কারণে মারা যেতে পারে। হতে পারে হরিণ শিকারের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছে সে বা র‍্যাকুন খাওয়ার সময় দম আটকে গেছে। ইয়েলোস্টোনে এক নেকড়ের সঙ্গে এমন হয়েছিল। কোনো গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়েছে বা শিকারি তাকে হত্যা করেছে, সেটাও হয়ে থাকতে পারে।

এর আগে ওরেগনের নেকড়ে ওআর-৫৯ ক্যালিফোর্নিয়ায় মারা গেছে। ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, নেকড়েটির মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো তথ্য দিলে দুই হাজার পাঁচশ’ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে।

নেকড়েদের রক্ষার জন্য ‘ফেডারেল এনড্যাঞ্জারড স্পিসিজ অ্যাক্ট’ও ‘ক্যালিফোর্নিয়া এনড্যাঞ্জারড স্পিসিজ অ্যাক্ট’ নামে আইন রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার মৎস্য ও বন্যপ্রাণী বিভাগ বলে, নেকড়েসংখ্যা রক্ষায় যে কোনো ঝুঁকি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি আমরা। এখন আমরা ওআর-৫৪’র মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করছি। আমরা জনগণকে মনে করিয়ে দিতে চাই, নেকড়ে হত্যা করা অপরাধ এবং এর সাজা হবে। এতে কারাদণ্ডও হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।