ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত ট্রেন চাই

তপন চক্রবর্তী, ডেপুটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত ট্রেন চাই

দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের বেড়ানোর অন্যতম পছন্দের জায়গা কক্সবাজার। এই রুটে রেললাইন চালু হওয়ায় সারা দেশের মানুষের ট্রেনে পর্যটন শহরে যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন উদ্বোধন করেন। এরপর ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

রেললাইন চালুর পর চট্টগ্রাম থেকে নতুন ট্রেন না দেওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর দাবি তুলেছেন।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে ছয়টি সেতুর জন্য বাণিজ্যিক দূরত্ব ১৮৯ কিলোমিটার। কক্সবাজার যাওয়ার পথে স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম, ঝাউতলা, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক, ষোলশহর জংশন, জান আলীর হাট, গোমদন্ডি, বেঙ্গুরা, ধলঘাট, খান মোহনা, পটিয়া, চক্রশালা, খরনা, কাঞ্চন নগর, খানহাট, হাসিমপুর, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু এবং কক্সবাজার।

বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। তাদের বেশিরভাগই আগে যাতায়াত করতেন বাসে। অনেকে উড়োজাহাজে চলাচল করেন, তবে এ রকম পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। ট্রেন চালু হওয়ায় এখন টিকিট হয়ে উঠেছে ‘সোনার হরিণ’।

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে মাত্র দুটি ট্রেন চলছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে একটি ট্রেনও নেই। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে কক্সবাজার স্পেশাল-৯ ট্রেন ১৮ দিন চলেছে, এ সময়ে আয় হয়েছে ৪২ লাখ টাকা। গত ৮ এপ্রিল এই ট্রেনের চলাচল শুরু হয়। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস শুরুর পর সব ট্রেনই ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করলেও বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করায় এটির চাহিদাও বেশি ছিল। এ কারণে কক্সবাজার স্টেশন মাস্টারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০ মে পর্যন্ত ৯ নম্বর স্পেশাল ট্রেনের সার্ভিস বর্ধিত করা হয়েছে।

শুরুতে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা থাকলেও সমালোচনার মুখে চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য দুটি কোচ বরাদ্দ রাখা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার প্রথম যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেন কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে একই সুবিধা সম্বলিত দ্বিতীয় আন্তঃনগর ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস চালু করে রেলওয়ে। দুটি ট্রেনেই চট্টগ্রামের জন্য ৬০টি নন-এসি ও ৫৫টি এসি চেয়ার বরাদ্দ রাখা হয়। এতে টিকিট না পেয়ে অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন। বাধ্য হয়ে তাদের ভ্রমণ করতে হয় বাসে। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অভিযোগ, বাস মালিকদের সুবিধা দিতেই রেলওয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন দিচ্ছে না।

চট্টগ্রামের যাত্রীদের অসুবিধার কথা পৌঁছেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছেও। গত ২৭ এপ্রিল নগরের সিআরবিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক তার সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত ট্রেন চালুর বিষয়টি রেলওয়ের এক নম্বর প্রায়োরিটিতে রয়েছে। কিন্তু নিজস্ব কিছু হিসাব–নিকাশ আছে। দৈনিক কত যাত্রী যায়, আমরা কয়টা ট্রেন চালাতে পারি–এসব। এই রুটে ট্রেন চালু হলে মানুষের কষ্ট কম হবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। সমস্যা হচ্ছে জনবল ও ইঞ্জিন সংকট। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে আমরা ট্রেন চালাতে পারবো। কিন্তু সেক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ আমাদের ট্রেন চালক, ইঞ্জিন নেই। আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, কিন্তু অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে’।  

সড়কপথে যানজটের পাশাপাশি দূরত্বের কারণে এই রেললাইন ঘিরে স্বপ্ন দেখছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। রেল স্টেশনে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে, কিন্তু টিকিট না পেয়ে তারা ফেরত যায়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারাও বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আলাদা ট্রেন দরকার। অন্য কোনো ট্রেন চট্টগ্রামে স্টপেজ দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে গেলে এখানকার যাত্রীরা কোনো সুফল পাবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।