ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

ধৈর্য ও বিশ্বাসই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি

সায়মা সাঈদা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৫
ধৈর্য ও বিশ্বাসই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই আন্দোলন সমাজের সব স্তরের মানুষকে প্রভাবিত করেছে এবং তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে কীভাবে দুর্নীতি ও বৈষম্য আমাদের সামাজিক কাঠামোকে নড়বড়ে করে দিয়েছে।

তাই জুলাই বিপ্লবের পর একটি নতুন সুগঠিত সমাজ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা আরো স্পষ্ট হয়েছে।

সমাজ পরিবর্তনের জন্য কী ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন তা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে।

তবে প্রথমত, রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার অতি জরুরি। একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রই দেশের অগ্রগতির জন্য মূল ভিত্তি। এ জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পক্ষপাতহীন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য ও বিশৃঙ্খলা রোধে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন থাকা জরুরি।

কোটা আন্দোলনের সময় দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। অনেকেই চুরি, ডাকাতি ও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে এবং তাৎক্ষণিক প্রতিকার নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ করা অপরিহার্য। শান্তি ও সততার পরিবেশ বজায় রাখতে দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে।

একজন দক্ষ রাষ্ট্রনেতার মানবিক চিন্তাধারা নাগরিকদের মধ্যে দেশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করে। এ ধরনের নেতা শুধু দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ নন, সাধারণ মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের সুখ-দুঃখেরও সঙ্গী হন। তাঁরা নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করেন এবং তাঁদের কাজের মাধ্যমে জনগণকে অনুপ্রাণিত করেন। এর উদাহরণ নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁর নেতৃত্ব দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

তাঁর মানবিক চিন্তাধারা এবং জনগণের প্রতি আন্তরিকতা দেশটিকে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যায়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এমন নেতারা যাঁরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন, তাঁদের সময়ে দেশের গড় উন্নয়ন হার বৃদ্ধি পায়। দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কার্যকর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এই অংশগ্রহণই জনগণের আস্থা তৈরি করে এবং গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও নিরপেক্ষ, যা নিশ্চিত করবে যে প্রতিটি নাগরিক তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারছে। এর জন্য নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং যথাযথ আইনি কাঠামো অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটদানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের সুযোগ রাখা যাবে না। কারণ এ ধরনের হস্তক্ষেপ জনগণের আস্থা নষ্ট করে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে। নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া আরো জরুরি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা গেছে,  যেখানে নারীরা এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত, সেইসব দেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি করেছে।

নাগরিকদের শিক্ষিত ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং সামাজিক ভেদাভেদ দূর করে একটি ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হবে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। সঠিক নেতৃত্ব এবং সুষ্ঠু নীতিমালার বাস্তবায়ন দেশের জনগণকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে রূপান্তর করতে পারে।

সংস্কার আনার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হলেও ধারাবাহিকতা ও একতার মধ্য দিয়েই তা সম্ভব। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এক দিনে আসে না; এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থির প্রত্যয়ের ফল। দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৬০-এর দশকে এক দরিদ্র দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে কয়েক দশক সময় নিয়েছে, যা সম্ভব হয়েছিল সুশাসন, ধারাবাহিক পরিকল্পনা এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য নাগরিক, সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সবাই মিলে কাজ করলে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ, যেমন—জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্য মোকাবেলা করা সম্ভব। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। সবার আন্তরিক সহযোগিতা, একতা এবং নিরলস প্রচেষ্টা আমাদের সেই স্বপ্নের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। পরিবর্তনের এই যাত্রায় আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাসই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি।

লেখক: অষ্টম সেমিস্টার, ইংরেজি বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৫
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।