ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

মুক্তমত

গণঅভ্যুত্থান: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা

অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল)      | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:২০, জুলাই ১, ২০২৫
গণঅভ্যুত্থান: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা

৫ আগস্ট ২০২৪ সাল। সেদিনের সকালটা আর দশটা সাধারণ সকালের মতো নয়, সারাটা রাত তীব্র উৎকণ্ঠায় জেগে থাকা প্রায় বিশ কোটি মানুষের নিদ্রাহীন রাতের শেষে এক পরিবর্তনের প্রত্যাশিত শুভ সকাল।

সকাল থেকেই ঢাকার গুমোট আকাশে সূর্যহীন ধূসর মেঘ, প্রশস্ত রাজপথ জনশূন্য সুনশান। জনহীন রাজপথে সকালের নীরবতা বিদীর্ণ হচ্ছে পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীর টহল গাড়ির কর্কশ শব্দে। গতরাতে রাস্তায় পোড়ানো টায়ারগুলো থেকে আসছে ধোঁয়ার উৎকট গন্ধ। এদিক-ওদিক ছড়ানো লোহার ব্যারিকেড রাস্তাজুড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোদের তেজ আর সূর্যের আনাগোনা। রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র-জনতার ছোট ছোট জটলা আস্তে আস্তে জনস্রোতে পরিণত হচ্ছে।  

উৎকণ্ঠিত দেশবাসী একটা সুসংবাদের অপেক্ষায় টেলিভিশনের পর্দার সামনে প্রায় নিষ্পলক তাকিয়ে। চারদিকে গুজব আর সত্যের মিশেলে কখনো আনন্দ কখনো আবার ক্ষণিক উৎকণ্ঠার দোলাচল। আজ বাংলাদেশ কারো নির্দেশের অপেক্ষায় নেই, স্বৈরাচারী হাসিনা যুগের পতন মুহূর্তের অপেক্ষায় সারা বাংলাদেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, শনির আখড়ায় জনস্রোত ততক্ষণে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আজ সারা ঢাকা শুধুই এক মিছিলের শহর। সারাদেশে গুজব—গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে পুলিশ আর সশস্ত্র বাহিনী প্রধানদের লম্বা বৈঠক চলছে। দাবানলের মতো খবরটা ছড়াতেই চতুর্মুখী মিছিলের গন্তব্য একটাই ‘গণভবন’। রাস্তায় ছাত্র-জনতার বুকে নির্বিচার গুলি চালানো পুলিশ আর বিডিআর সদস্যরা ছাত্র-জনতার ধাওয়ায় ইউনিফর্ম ফেলে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে। সকাল হওয়ার পরপরই সেনা সদস্যরাও মাঠে নেই ভোর থেকেই।

হঠাৎ সব কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এলো সেই প্রত্যাশিত বিজয়ের মুহূর্ত, যার জন্য সারা বাংলাদেশের অপেক্ষা দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে। জনতার রুদ্ররোষ থেকে প্রাণে বাঁচতে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলে দম্ভোক্তি করা ফ্যাসিস্ট তার অগণিত নেতাকর্মীকে ফেলে শুধু পদত্যাগই নয়, বরং দীর্ঘশ্বাস দৌড়ে আরেক লুটেরা ছোট বোন রেহানাসহ হেলিকপ্টারে উঠে কর্গো বিমানে ভারতে পালিয়ে গেছে। আর কয়েক মিনিট দেরি হলে ঢাকার সকল প্রান্ত থেকে গণভবনমুখী মিছিলের জনস্রোতে শেখ হাসিনা নামের কোনো মানুষকে শনাক্ত করার কোনো চিহ্নই হয়তো খুঁজে পাওয়া যেত না। শেখ হাসিনাকে না পাওয়া বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে বিধ্বস্ত হলো গণভবন আর দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শেখ নামের প্রতিটি চিহ্ন—এসবের সঙ্গে নেই কোনো দল বা সংগঠন, আছে শুধুই বাংলাদেশ। পুলিশ আর প্রশাসনবিহীন সেই বিশৃঙ্খল বাংলাদেশের পরবর্তী কয়েকদিন যে নামের আহ্বানে বিক্ষুব্ধ জনতা যতটুকু সংযত ছিল, সেই নাম ‘তারেক রহমান’।

মুক্ত বাংলাদেশে সর্বত্রই সেদিন বাঁধভাঙা আনন্দ। গণভবনের সবুজ ঘাসের গালিচায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শুকরিয়া মহান আল্লাহর দরবারে। যে মানুষ জীবনে কখনো মিছিলে শামিল হয়নি, আজ সে মিছিলের অগ্রভাগে। বাবার কাঁধে উচ্ছল শিশুর চোখে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সম্ভাবনা, গালে-কপালে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা কিশোরী-তরুণীরা সেদিন মুক্ত বিহঙ্গ যেন। আজ বাংলাদেশে সবাই মুক্ত—শিশু-কিশোর, তরুণ, যুবা, বৃদ্ধ, অন্তঃপুরবাসীনী সবাই, কেউ বাদ নেই এই পতন উদযাপনের উৎসবে।

অথচ এই বিজয় অর্জন এতটা সহজ ছিল না, দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে আগ্নেয়গিরির লাভা উত্তপ্ত হতে হতে মহা বিস্ফোরণে অগ্ন্যুৎপাতে উদগীরিত হয়েছে ৫ আগস্টের দ্বিপ্রহরে।  

এক দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের সূচনা সেই এক এগারোর অশুভ ঐক্যের মাধ্যমে, বিএনপি আর জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার সেই দেশীয় ষড়যন্ত্রের নকশা রচিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়।  

দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলেন অন্তরীণ, গ্রেপ্তার হলেন তারেক রহমান, বাদ গেলেন না তার ছোটভাই রাজনীতি থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা আরাফাত রহমান। অমানবিক নির্যাতনে প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি তারেক রহমান বাধ্য হলেন দেশ ছাড়তে, শুধু চিরস্থায়ী পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পেতে।

এদিকে মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন খালেদা জিয়া, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সামনে নতজানু এ দেশের সেনাপ্রধান তার চাকরির নিশ্চয়তার বিনিময়ে হলেন ষড়যন্ত্রের অংশীদার। বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় এনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বকে বিলীন করার দীর্ঘ পরিকল্পনায় সূচনা হলো শেখ হাসিনার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। প্রথমেই পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিএনপির প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে মানুষের ভোটাধিকারকে করা হলো অর্থহীন। সর্বোচ্চ আদালত থেকে অধস্তন আদালতকে কুক্ষিগত করে ধ্বংস করা হলো বিচার ব্যবস্থা।  

একদা অনুগত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দেশ ছাড়া করা হলো। নির্লজ্জ দলীয়করণে প্রশাসন হয়ে গেল পুরোপুরি তাঁবেদার আর আজ্ঞাবহ । আদালতের অসহায় আত্মসমর্পণে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ হলেন অনিশ্চিত সময়ের জন্য। রিমান্ডে হারুনদের মতো দলীয় ক্যাডারদের হাতে নির্যাতনযন্ত্রে পঙ্গুত্ব থেকে মৃত্যুর মুখোমুখি হলেন অগণিত বিএনপি নেতা-কর্মী। মামলার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সেটা ছাড়ালো ৬০ লাখের ঘর। শিকার হলো প্রায় এক লাখ ষাট হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী। কারও কারও নামে মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো তিনশ ছুঁই ছুঁই। নির্দয় হাসিনার নিষ্ঠুরতায় কারাবন্দি অনেকেই বঞ্চিত হলেন প্রিয়জনের জানাজা থেকে, যদিও কেউ পেলেন কয়েক ঘণ্টা প্যারোল মুক্তি, কিন্তু ডান্ডাবেড়ি থেকে মুক্তি মিলল না। রিমান্ডের সঙ্গে যুক্ত হলো গুম আর ‘আয়নাঘর’ নামের কুখ্যাত নির্যাতন পদ্ধতি। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতো চৌকস উদীয়মান নেতারা একে একে হারিয়ে গেলেন গুমের অন্ধকারে। পরিবার আজও জানলো না মানুষটি জীবিত না মৃত; হলো না জানাজার আয়োজন, হলো না ফাতেহা পাঠ। এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল পাঁচশ’। প্রতীক্ষার পালা দীর্ঘতর হলো, এসবের সঙ্গে যুক্ত হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। ২০১৩ সালের মে মাসে ইতিহাসের বর্বরতম শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো অগণিত নিরীহ মাদরাসা ছাত্ররা। একই বছরে বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ বিচারে প্রাণ দিলেন রাজনৈতিক নেতারা।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে র‍্যাবের মতো চৌকস এক বাহিনীকে পরিণত করা হলো সরকারি লাঠিয়াল হিসেবে আর পুলিশ পরিণত হলো ‘পুলিশ লীগে’। প্রশাসনই বা বাদ যায় কেন, তারাও তাঁবেদারির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লো। নির্লজ্জতার চূড়ান্ত প্রদর্শন করে তারাও হয়ে গেল ‘প্রশাসন লীগ’। এভাবে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তম্ভই ভেঙে পড়ল একে একে। চতুর্থ স্তম্ভ বা জাতির দর্পণ নামের মিডিয়া এবং সংবাদপত্রের বেহায়াপনা আর রুচিহীন স্তাবকতায় ভরসার শেষ আশ্রয়ও সমর্পিত হলো অসহায়ভাবে।  

শিক্ষাঙ্গণ পরিণত হলো সন্ত্রাস আর কুরুচির কারখানায়। ছাত্রলীগ আবির্ভূত হল মূর্তিমান এক দুঃস্বপ্নের নাম হয়ে, যুবলীগ আর দুর্বৃত্তের নাম একাকার হয়ে গেল। লাখ কোটি ডলার পাচার, আর অনৈতিকতার প্রতিটি সংবাদের সঙ্গে অবধারিতভাবে যুক্ত হলো তাদের নাম। সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ধ্বংসের নীল নকশায় সংঘটিত হলো বিদ্রোহের নামে নৃশংস বিডিআর হত্যাকাণ্ড।  

ব্যাংক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নাম ঐতিহাসিকভাবেই জড়িয়ে আছে, শেয়ার বাজারের কারসাজিতে একদিকে লাখ লাখ পরিবার রাতারাতি নিঃস্ব হলো সর্বস্ব হারিয়ে। হলমার্ক, যুবক, ডেসটিনি, বিসমিল্লা গ্রুপ, এস আলমরা সমার্থক হয়ে উঠলো ব্যাংক লুটেরা হিসেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকও তার সঞ্চয় ধরে রাখতে পারলো না, পরিকল্পিতভাবে সুরক্ষিত রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে ডিজিটাল চুরির মাধ্যমে রিজার্ভের ডলার হারিয়ে গেল অজানা গন্তব্যে, নির্র্লিপ্ত নির্লজ্জ সরকার কোটি কোটি ডলারকে ক্ষুদ্র চিনাবাদাম বানিয়ে ফেললো। এমনি অরাজক বিভীষিকার বাংলাদেশে প্রতিবাদের একমাত্র কণ্ঠস্বর হয়ে মাঠে রইলো বিএনপি আর মিডিয়ায় প্রতিবাদী হয়ে রইলেন মোহাম্মদ আসাফউদ্দৌলা, পিয়াস করীম, মাহফুজুল্লাহ, মাহমুদুর রহমান, নুরুল কবীর আর আসিফ নজরুলের মতো কতিপয় নির্ভীক মানুষ। নিত্যপণ্যের বাজার চলে গেল সিন্ডিকেটের হাতে।

১০ টাকা কেজি চাল আর ঘরে ঘরে চাকরির স্বপ্ন পরিণত হলো নিদারুণ দুঃস্বপ্নে, পেঁয়াজ পরিণত হলো মহার্ঘ পণ্যে; বেগুন, কাঁচা মরিচও বাদ গেল না। সয়াবিন তেলও দুর্লভ হতে হতে বিয়ের যৌতুকের কৌতুকে পরিণত হলো।  

আর ভোটাধিকার? ফ্যাসিবাদ আর গণতন্ত্র যেহেতু একসাথে চলে না তাই নির্বাচন পরিণত হলো চরম প্রহসনে, ২০১৪ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নির্বাচন কমিশন মঞ্চস্থ করল শতাব্দীর জঘন্যতম ভোটারবিহীন জাতীয় নির্বাচন। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ আর প্রমাণিত বিশ্বাসঘাতক জাতীয় পার্টির বিশ্বাসঘাতকতায় জন্ম নিল গৃহপালিত বিরোধী দলের এক চাটুকার সংসদ।  

২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সারাদেশ তখন আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ, সরকার দীর্ঘ আন্দোলনের তীব্রতায় যখন কোণঠাসা, ঠিক তখনই পুনঃনির্বাচনের মিথ্যা আশ্বাসে পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপে প্রায় সফল আন্দোলনে স্তিমিত হওয়া মৃতপ্রায় আওয়ামী লীগের প্রাণসঞ্চার হলো।  

তার পর পরই স্বমূর্তিতে আবির্ভূত আওয়ামী নির্যাতনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু তখন শুধু বিএনপি। একের পর এক মিথ্যা মামলায় বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীই তখন মামলা জালে জর্জরিত, দেশের প্রতিটি কারাগার তখন বিএনপি নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ। একজন নেতাকর্মীও রইল না মামলা-হামলা আর আক্রমণের বাইরে। তাঁবেদার পুলিশ বাহিনীর তাণ্ডবে মিছিল মিটিং দূরে থাক, সামান্য মানববন্ধনও হয়ে উঠল অসম্ভব। বিএনপির দলীয় কার্যালয় তছনছ হলো বারবার, নিরাপত্তা আর তদন্তের নামে সেখানে লাগলো তালা।  

প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে স্তব্ধ করতে মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালে করা হলো কারারুদ্ধ, বিশাল নির্জন ভয়াবহ এক কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে কাটালেন বছরের পর বছর। সুদূর লন্ডন থেকে দলের দায়িত্ব নিলেন জনাব তারেক রহমান, মামলা আর হামলায় জর্জরিত দলকে সংগঠিত করে শত বাঁধার মাঝেও একের পর এক তারুণ্যের সমাবেশ, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সমাবেশ আর সেখানে নজিরবিহীন জনসমাগম, নদীর সাঁতরে, শত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে—সাইকেল চালিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রতিবাদের নব দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো প্রতিবাদী নেতাকর্মী। সংগঠনের কাঠামো এতটাই মজবুত করলেন যে শত নির্যাতনে একজন মানুষও দল ছাড়লেন না।  

এরই মাঝে কেএম নুরুল হুদা নির্বাচন কমিশনের প্রযোজনায় প্রশাসন আর পুলিশের নির্লজ্জ ভূমিকায় মঞ্চস্থ হলো কারচুপির নতুন সংস্করণ—‘নিশি রাতের ভোট’। নির্বাচনের আগের রাতেই সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার আওয়ামী পদ্ধতি সুস্পষ্ট হলো একটি সত্যি—আন্দোলন ছাড়া এই সরকার অপসারণের দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। মরিয়া হাসিনার রাক্ষসী চরিত্র তখন এক ভয়াবহ নৃশংসতায় পরিণত হয়েছে, ফেসবুকে সামান্য মন্তব্যও ডেকে আনলো অনন্ত কারাবাস বা অনিবার্য মৃত্যু, ২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের নৃশংসতায় শহীদ হলো আবরার ফাহাদ।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দিলেন আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি, একের পর এক অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বিশাল সমাবেশ। বছরব্যাপী বিভাগীয় সম্মেলন, ২০২২-এর ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ জনতার ঢলে পরিণত হলো, রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞায় তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার তখন নিষিদ্ধ। এরই মাঝে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি দিলেন রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা পরবর্তীতে ৩১ দফা। তেইশের অক্টোবরের নয়াপল্টন জনসমাবেশ ছিল এদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম জনসমাবেশ। সমাবেশের ব্যাপ্তি আর জনতার উদ্দীপনা রুখতে সেই সনাতনী পুলিশি প্রতিক্রিয়ায় ভণ্ডুল করা হলো এক অবিস্মরণীয় সমাবেশ। আবারও শুরু হল নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার, শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই বাদ গেলেন না। বিএনপির সব নেতাকে কারারুদ্ধ রেখে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশন ২০২৪-এর জানুয়ারিতে উপহার দিল আরেক কলঙ্কিত ‘আমি-ডামির নির্বাচন’।

নির্বাচনের পরেও অব্যাহত রইলো আওয়ামী নির্যাতন। নব পরিকল্পনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচির দিকে এগোলেন। প্রতিনিয়ত জনসংযোগে উদ্বুদ্ধ রাখলেন সাধারণ কর্মীদের, খোঁজ রাখলেন ব্যক্তিগত সমস্যার।  

বিএনপির চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সমান্তরাল হয়ে এলো ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সব পদ্ধতিতে তিনি নিজে যেমন সম্পৃক্ত রইলেন—আর তারই নির্দেশে ছাত্রদলও সব বাধা ও নির্যাতন উপেক্ষা করে রইলো ছাত্রদের পাশে। আন্দোলনের সেই প্রাথমিক দিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজন ছিল সর্বোচ্চ সতর্কতা আর নির্ভুল পদক্ষেপ। তারেক রহমান প্রকাশ্য ঘোষণায় ছাত্র-আন্দোলনে সমর্থন যেমন দিলেন, ঠিক তেমনি ছাত্রদল-যুবদলকে সর্বোত প্রস্তুতিতে প্রতি মুহূর্তে মূল আন্দোলনকে সহায়তা করে যাওয়ার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন প্রতিদিনই। জুনে শুরু হওয়া আপাতদৃষ্টির কোটা বাতিলের সাদামাটা আন্দোলনে একটা অগ্নিফুলিঙ্গের প্রয়োজন ছিল, শেখ হাসিনা দাম্ভিক উচ্চারণে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে ১৪ জুলাই ঠিক সময়মতো অপেক্ষমাণ তীব্র আন্দোলনে অগ্নিসংযোগ করলেন। সঙ্গে যুক্ত হলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দম্ভোক্তি।  

বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ‘আমি-ডামি নির্বাচন’ বর্জন আর প্রতিহতের জন্য তারেক রহমানের ডাকে ভোট প্রদান না করে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন আগে থেকেই তৈরি ছিল সমন্বিত আন্দোলনে অংশগ্রহণের প্রতীক্ষায়। আন্দোলনকে বিএনপি-জামায়াতের কাজ বলে অর্বাচীন প্রধানমন্ত্রী নিজের অজান্তেই বাস্তবতাকে প্রকাশ করে ফেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ চত্বর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হলো আন্দোলনে। ‘তুমি কে আমি কে—রাজাকার! রাজাকার!, কে বলেছে! কে বলেছে! স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!’ স্লোগান হয়ে উঠলো সার্বজনীন। ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদেরের দাম্ভোক্তি আর ছাত্রলীগের আক্রমণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিণত হলো রণক্ষেত্রে। সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে আহত হলেন অগণিত ছাত্রদল কর্মীও। ১৬ জুলাই এলো আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দিন হয়ে। সেদিন আওয়ামী পুলিশের সামনে নির্ভীক চিত্তে সাহসী বুক পেতে রংপুরের আবু সাঈদ ঘাতক বুলেট বুকে নিয়ে তাৎক্ষণিক শাহাদাতে কাঁপিয়ে দিলেন সারা বিশ্ব। প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রামে শাহাদাত বরণ করেন ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম, এদের সাহসী আত্মদানে দেশের সব ছাত্র জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়লো একসঙ্গে, এক অভাবিত ঐক্যের বন্ধনে সূচনা হলো এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব। ১৭ জুলাই ঘোষিত হলো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, দেশজুড়ে ১৮ জুলাই ১৯ জেলায় হাসিনা বাহিনীর গুলিতে একদিনে শহীদ হলেন ২৯ জন, ওইদিন সন্ধ্যায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী পলক এবং হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে বন্ধ হলো ইন্টারনেট সেবা। প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা তখনকার গুজবের আঁতুরঘর বিটিভি ভবন, সড়ক ভবন, সেতু ভবন, টোল প্লাজা আগুনে ভশ্মীভূত করে দিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আক্রান্ত হলো মেট্রোরেল। ইন্টারনেট বিহীন বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হলো বহির্বিশ্ব থেকে। হার না মানা তারেক রহমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন ছাত্রদলসহ দলের নেতাকর্মীদের। ১৯ জুলাই হাসিনা বাহিনীর গুলিতে সারাদেশে প্রাণ দিলেন ৬৬ জন। রাতে জারি করা হলো কারফিউ। ২০ জুলাই কারফিউয়ের প্রথম দিনে শহীদ হলেন ২১ জন, অব্যাহত রইলো কারফিউ, গ্রেপ্তার হলেন বৈষমবিরোধী আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম। বিএনপির বিরুদ্ধে শুরু হয় গণ-গ্রেপ্তার অভিযান। প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তার হন রিজভী আহমেদ, গুরুতর অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রীর পাশে থেকে গ্রেপ্তার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই তখন কারারুদ্ধ। নেতৃত্বশূন্যতাকে অগ্রাহ্য করে তারেক রহমান সাধারণ নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিলেন ‘নেতৃত্ব নিন-নেতৃত্ব দিন’। ২৬ জুলাই তিনি আহ্বান জানালেন জাতীয় ঐক্য ও সরকার পতনের। ২৮ জুলাই ডিবিপ্রধান হারুনের প্রযোজনায় অনুষ্ঠিত নাটকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণায় বাধ্য করা হলো। তবে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে সে ঘোষণা ছিল প্রভাবহীন। ছাত্র-জনতার সামনে তখন বিজয়ের হাতছানি। আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব হল। ১ আগস্ট এলো জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার হাস্যকর অসহায় প্রজ্ঞাপন। ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হলো শিক্ষক, অভিভাবক আর সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দ্রোহযাত্রা। এদিকে শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, যাত্রাবাড়ীতে চলছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের বিরামহীন সংঘর্ষ। উত্তপ্ত আগস্টের সূচনায় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন দেয়াল লিখনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, সারাদেশ তখন হাসিনা পতনের এক দফায় ঐক্যবদ্ধ। ৩ আগস্টের বৃষ্টিভেজা বিকেলে শহীদ মিনার চত্বর পরিণত হলো প্রতিবাদের জনারণ্যে। বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়ানো আবু সাঈদ আর ওয়াসিমরা মানুষের মন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে মৃত্যুর ভয়। ৪ আগস্ট হাসিনা বাহিনীর নৃশংসতায় শহীদ হলেন ৯৩ জন। পাগলপ্রায় শেখ হাসিনার নির্দেশে আগস্টের প্রথম দিন থেকেই হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচার গুলিবর্ষণ করা হয়েছে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর। রাজপথ দখলে নেওয়া লাখো কোটি মানুষ দমনে উন্মাদ স্বৈরাচার নির্বিচার গুলি বর্ষণ করতে পারে, কিন্তু অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পারে না। হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তার নির্লজ্জ অসহায় স্বীকারোক্তি—‘একটাকে মারি- একটাই মরে, বাকিডি যায় না’। শুধু জুলাই-আগস্ট শহীদদের সংখ্যা দাঁড়ালো কমপক্ষে দুই হাজারে। এর মধ্যে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শহীদদের সংখ্যা প্রায় পাঁচশতাধিক।  

ছাত্র-জনতার কাতারে শামিল হওয়ায় দুর্লভ মুহূর্ত থেকে বঞ্চিত হতে চায় না কেউই। গৃহবধূ, কিশোর, পর্দাশীল মা-বোন কেউই না। আর তাই বাংলাদেশের সব দেয়াল বর্ণাঢ্য হয়ে ওঠে প্রত্যয় বিজয় আর তারুণ্যের প্রত্যাশার গ্রাফিতিতে। সনাতন আন্দোলনের নতুন মাত্রা প্রতিবাদ আর প্রত্যয় প্রকাশের নবতর ধারণা গ্রাফিতি। সহমর্মিতা জানাতে বিশ্বের সর্বত্রই একই প্রতিবাদ আর প্রত্যয়ের কণ্ঠস্বরে শামিল হয়। বিক্ষুব্ধ হয় লন্ডন, নিউইয়র্ক-প্যারিস, জেগে ওঠে জনতার হয়ে। দুবাইতে প্রতিবাদে অবশ্যম্ভাবী কারাবাস আর শাস্তি হাসিমুখে মেনে নেন ৫৭ জন বীর বাংলাদেশি।

আগস্টের উত্তপ্ত ভ্যাপসা গরমকে অগ্রাহ্য করে ছুঁয়ে দেখা দূরত্বের মুক্তির আরও নিকটবর্তী হতে চলেছে বাংলাদেশ। বুক চিতিয়ে প্রাণ দেওয়া আবু সাঈদদের মৃত্যুঞ্জয় দৃঢ়তা আর অসীম সাহস তখন সঞ্চারিত সবার মাঝে। আর তাই শীর্ণ তরুণী তার সমস্ত শক্তিকে রূপান্তরিত করে পুলিশের ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে দু-হাতে পথ রোধ করে। দুর্বার সাহসে অকুতোভয় মীর মুগ্ধ টিয়ার গ্যাসে জ্বলে যাওয়া দৃষ্টিশক্তিকে প্রাণপণে বাঁচিয়ে রেখে গ্যাসের মেঘের মাঝে চিৎকার করে বলতে পারে ‘পানি লাগবে? পানি?’। একেবারে শেষ নিশ্বাস অব্দি মৃত্যু অবধারিত জেনেও আহত বন্ধুকে টেনে নিতে চায় জীবনের নিরাপত্তার কাছাকাছি- হতাশ ব্যর্থ চেষ্টায়। স্কুটির ডালায় পানির বোতল নিয়ে বুলেট বৃষ্টির মাঝে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন সাধারণ গৃহবধূ। কাঁঠালের কোয়া নিয়ে ছুটতে পারেন বস্তিবাসী বোনেরা, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের অবিশ্রান্ত গুলি বৃষ্টির মাঝেও রাজপথ না ছাড়ার প্রত্যয়ে অবিচল থাকে ফুটপাতের সাধারণ মানুষ। ৬ তারিখ ঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কৌশলগত কারণে এগিয়ে এলো ৫ আগস্টে, ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট জনতার অনিবার্য বিজয় জেনে সেনাবাহিনী সাফ জানিয়ে দিলো- ‘কোনো গুলি নয়’। প্রাণ ভয়ে পালালো এতদিনের বিশ্বস্ত সেবা দেওয়া লাঠিয়াল আওয়ামী পুলিশ। পুরো বাংলাদেশ সেদিন জনতার দখলে, স্বৈরাচারের দম্ভোক্তি কলঙ্কিত হলো লজ্জাজনক প্রাণভয়ে পালিয়ে যাওয়া অমোচনীয় আজন্ম কালিমায়। সামনে রইলো এক অপার সম্ভাবনা আর প্রত্যাশার বাংলাদেশ।  

সাঈদ-ওয়াসিম-মুগ্ধের বুক পেতে দেওয়া আত্মাহুতি, আশুলিয়ায় রিকশা ভ্যানের ওপরে অগ্নিদগ্ধ লাশের সারি, আর্মাড গাড়ি থেকে অসম্মানজনকভাবে ফেলে দেওয়া শহীদের লাশের প্রতি সামান্য কৃতজ্ঞতা বোধ থাকলে নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার এমন সুবর্ণ সুযোগ হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।  
রিমান্ড যাত্রী সন্তানের প্রতি স্নেহময়ী মায়ের প্রত্যয়ী আশ্বাস সত্যি হোক।  
‘ভয় নেই বাংলাদেশ আমরা আছি 
রক্তাক্ত শপথে বন্দি- 
রক্তের শেষ বিন্দু রইল তোমার জন্য জন্মভূমি, 
তোমার স্বাধীনতা, তোমার সার্বভৌমত্বের জন্য, 
আগামী প্রজন্মের জন্য এ আমার দৃপ্ত অঙ্গীকার। ’

লেখক: অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল)
আহ্বায়ক, বিএনপি মিডিয়া সেল।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।