ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

একজন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যজন যুক্তরাজ্যে

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৩
একজন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যজন যুক্তরাজ্যে

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত দুই তরুণ হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে দু’জনই নিজেদের বক্তব্য, বিবৃতির মাধ্যমে বেশ আলোড়ন ও ঝড় তুলেছেন।

দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় এ দু’জনের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে আলোড়ন, আলোচনা, মতামত, বিশ্লেষণ, সমালোচনা, তর্ক, বিতর্ক চলছে। ঝড় উঠছে টক শো’তে।

টকশোগুলোতে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অত্যন্ত জোরালো ও শানিত যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে দু’জনের গ্রহণযোগ্যতার প্রেক্ষিত তুলে ধরার চেষ্টা যেমন করছেন, তেমনি তাদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে দুই দলের রাজনৈতিক কর্ণধারদের নানা তির্যক ও কিছুটা হালকা আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক বক্তব্যের ভেতর দিয়ে অরাজনৈতিক বক্তব্যও প্রকাশিত হচ্ছে।

মোটা দাগের হরফে বলা যায়, নতুন প্রজন্মের এই দুই তরুণ রাজনৈতিক কর্ণধারকে নিয়ে এখন ভাবতে শুরু করেছে জনগণ। চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে কৃষকের মাঠের ধান আর হাল চাষের অবস্থান, হাট-বাজার, শহর, রেডিও, টেলিভিশন আর পত্র-পত্রিকায় এই দুই তরুণের বক্তব্য নিয়ে বাজার গরম করা পরিবেশ সহজেই আঁচ করা যায়।

সন্দেহ নেই এই দুই তরুণ রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতি ঘুরপাক খাবে, নিয়ন্ত্রিত হবে, আবর্তিত হয়ে এগিয়ে চলবে। যা এ দেশের রাজনীতিতে বেশ একটা পরিবর্তন এনে দেবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

তারেক রহমান এবং সজিব ওয়াজেদ জয়- এই দু’জনের মধ্যে মিল হলো- দু’জনই রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকার হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গরম হাওয়ার ঝড় তুলেছেন।

আর এত কিছুর পরেও এই দুই তরুণের মধ্যে অমিলগুলো হলো- তারেক নিছক এক অসাংবিধানিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রেক্ষিতে কিছু সন্দেহ প্রবণ ঘটনার (যেহেতু এখনো বিচারাধীন) দায় মাথায় নিয়ে ব্রিটেনে সপরিবারে ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অন্যদিকে সজিব ওয়াজেদ জয় সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ উদযাপন করছেন।

আরেকটা জিনিষ অদ্ভূদভাবে লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের আমি মেজর জিয়া বলছি’র সেই জিয়াউর রহমান সামরিক উর্দিপরা ক’জন সেনার নিষ্ঠুর বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। আজকের তারেক সেই জিয়াউর রহমানের ছেলে।

ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের অকুতোভয় ও অবিসংবাদিত মহান নেতা, বাঙালির মুক্তির বিজয়ের পতাকায় যার ছবি পত পত করে জ্বলে প্রতিনিয়ত, সেই মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সামরিক উর্দিপরা কিছু সেনার নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। আজকের সজিব ওয়াজেদ জয় সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি। তবে সজিবের আরেকটি পরিচয় আছে, যা বহু আগেই তাকে ঘিরে আবর্তিত হওয়া অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হতো। কিন্তু কেন যে সেই পরিচয়টি ঢাকা পড়ে গেলো, তা বোধগম্য নয়।

তারেক রহমান সময়ের স্রোতে ও আগামীর সঙ্গে নতুন ও পুরাতনের মিল খুঁজে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তার দর্শন, চিন্তা ও আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা নিয়ে যখন কথা বলেন, তখন যেন গোটা বাংলাদেশ বলে ওঠে- এক জাদুকরি মন্ত্র তারেক গোটা বাংলাদেশ ও বিশ্ব বাঙালির কাছে তুলে ধরেন। যার ফলে তারেকানুরাগী এবং তারেক বিরোধী শক্তি একাট্টা হয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এখানেই তারেকের সব চেয়ে বড় ক্যারিশমা।

আর সজিব ওয়াজেদ জয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থেকেও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করে নিজের অনুকূল স্রোত আর অনুকূল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে যখন কথা বলেন, তখন যেন আওয়ামী লীগও পেছন থেকে ছাঁয়ার মতো দাঁড়িয়ে থেকে এমনকি খোদ সরকার প্রধানকে সজিবের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই সার্টিফিকেট দিতে হয়।

এই দুই অমিলের সঙ্গে আরো এক অমিল লক্ষ্য করা যায়, একজন শুধু অসাংবিধানিক সরকারের মামলার ঝুলি মাথায় নিয়ে বিদেশে কষ্টকর জীবন-যাপন করেন। যার পেছনে বিতর্ক সমান তালে বয়ে চলে।

অপরজন নিতান্ত আরাম-আয়েসের জন্য নিয়ম বহির্ভূত ড্রাইভিং করার অপরাধে সাজা প্রাপ্ত ও জরিমানা পরিশোধ করে চলেন।

এখানে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির নিয়ামকের ভূমিকায় আসা দুই তরুণকে জনগণের (Public Assett) দুর্লভ সম্মানজনক সম্পত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, অন্য কোন কিছু নয়।

সন্দেহ নেই এই দুজন বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতিতে এক বড় ভূমিকা রাখবেন, যা আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাবে।

এই দুই তরুণের রাজনৈতিক ক্যারিশমা ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আসন্ন নির্বাচন বেশ ভালোভাবে জমে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সব নিঃসন্দেহের মাঝে যে সন্দেহ ভর করে ওঠে তাহলো- চরম বিপরীত স্রোতের এই রাজনৈতিক অবস্থায় কেমন করে তারেক দেশে ফিরবেন!

ঠিক একইভাবে সজিব ওয়াজেদ জয় তোটুকুইবা পাশ্চাত্যের আরাম-আয়েসের জীবন পেছনে ফেলে বাংলাদেশের নিরন্ন জনগণের জন্য কতোটুকু সময় দিতে পারবেন। যেখানে পিরোজপুরে ভোটের আহ্বান জানিয়েই স্ত্রী নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন ঈদের জন্য।

তারপরও আমরা আশাবাদী, এই দুই বড় দলের দুই তরুণ আগামীর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথ বিনির্মাণে বিরাট ভূমিকা রাখবেন।

শাহ সৈয়দ সেলিম আহমেদ: লন্ডন প্রবাসী লেখক, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৩
জেডএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।