ঢাকা, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

একজন অনয়ের গল্প

মুহম্মদ জাফর ইকবাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৪
একজন অনয়ের গল্প মুহম্মদ জাফর ইকবাল

১.
ঘুম থেকে উঠেই আমার মনে পড়ল আজকের দিনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, সেটা স্বচক্ষে দেখার জন্যে আমার সকাল সাড়ে এগারোটার সময় একটা জায়গায় পৌঁছাতে হবে।

ঢাকা শহরে এক জায়গা থেকে ‍অন্য জায়গায় যেতে কতোটুকু সময় লাগবে তার কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই।

এ সম্পর্কে একজন একটা থিওরি দিয়েছে সেটা এরকম- ঢাকা শহরে গাড়ি করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। রিকশায় গেলে দুই ঘণ্টা, হেঁটে গেলে সময়টাকে এক ঘণ্টায় নামিয়ে আনা যায়।

আমি গাড়ি করে যাব। তাই আমার তিন ঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু আমি আশাবাদী মানুষ তাই দেড় ঘণ্টা হাতে নিয়েই বের হয়ে গেলাম। আমার ভাগ্য ভালো, পথে নানারকম ছোট বড় মাঝারি সরল এবং জটিল ট্রাফিক জ্যাম অতিক্রম করে আমি ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।

আমার গন্তব্য ছিল সিদ্ধেশ্বরি বয়েজ হাই স্কুল। আমি আগে কখনো আসিনি, কিন্তু জায়গাটা খুঁজে পেতে সেরকম সমস্যা হল না। পৌঁছে দেখি অন্যরা সবাই চলে এসে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে, যারা একটু দূর থেকে এসেছে। তাদের কেউ ভোর সাতটায় রওনা দিয়েছে, তারা সবাই এই ঘটনাটি নিজের চোখে দেখতে চায়।

আমি পৌঁছানো মাত্রই সেখানে একটা উত্তেজনা শুরু হল, কারণ আমি জানতে পারলাম আমি নাকি প্রধান অতিথি! (আমাদের দেশের এই প্রধান অতিথি এবং অ-প্রধান বা গণ্য অতিথির কালচারটা আমি ভালো করে বুঝতে পারি না। আশা করছি ধীরে ধীরে এটা উঠে যাবে-এক সময় সব অতিথিই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া হবে)। আমাকে ঢাউস একটা ফুলের তোড়া দেওয়া হল এবং আট দশ বছরের ছেলেরা আমাকে ঘিরে ধরল। তাদের হাতে ছোট বড় মাঝারি কাগজের টুকরো- কিছু কিছু কাগজের টুকরোর অবস্থা রীতিমতো শোচনীয়- মনে হয় রাস্তা থেকে তুলে এনেছে!

সবারই অটোগ্রাফের দরকার, যাদের হাতে কাগজ নেই তারা তাদের হাতটাই বাড়িয়ে দিল- সরাসরি হাতের তালুতে অটোগ্রাফ দিতে হবে। (এটি নতুন পদ্ধতি এবং খুব দ্রুত জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে!) আমি বাচ্চাগুলোর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, আগে যে কাজটা করতে এসেছি সেটা সেরে ফেলি, তারপর সবাইকে অটোগ্রাফ দেওয়া যাবে। আমি তাদের কথা দিলাম তাদের সবাইকে অটোগ্রাফ না দিয়ে যাব না।

ছোট বাচ্চারা মোটেও রাজনৈতিক নেতাদের মতো না, তারা আমার কথা বিশ্বাস করে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছোটাছুটি শুরু করল। এই বয়সী বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি, হুটোপুটি থেকে সুন্দর দৃশ্য খুব বেশি নেই।

আমি তখন যে কাজটি করতে এসেছি, সেই কাজটি করতে এগিয়ে গেলাম। আমার মনে হয় আমি কী কাজ করতে এসেছি, এখন সেটি বলার সময়  হয়েছে।

এই স্কুলে ‘অনয়’ নামে একটি ছোট ছেলে লেখাপড়া করে। তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার কারণ এই ছেলেটি অন্য দশটি ছেলের মতো নিজের পায়ে ছোটাছুটি করতে পারে না, তাকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত নিচের তলায় ক্লাসরুম-তার কোনো সমস্যা হয়নি, সিক্সে ওঠার পর ক্লাসরুম দোতলায়-হঠাৎ করে তার ক্লাসে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

যাদের  এরকম ছেলে মেয়ে আছে এবং যারা তাদের সেই ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করতে চান তারা সবাই এই কাহিনীর সঙ্গে পরিচিত। হঠাৎ করে আবিষ্কার করেন শুধুমাত্র ক্লাসরুম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না বলে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। যখন এই দেশের শিক্ষানীতি তৈরি করা হয় তখন অনেকের ছিলাম। আমিও সেই শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য ছিলাম।

আমার সবাই মিলে খুব আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে এই শিক্ষানীতি  একীভূত (Inclusve) শিক্ষা নামে একটা শব্দ ঢুকিয়েছিলাম, যার অর্থ এই দেশের সব ধরনের ছেলে মেয়ে একাই সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী নামে একটা ভয়ংকর শব্দ আবিষ্কার করে বিশেষ ধরনের ছেলে-মেয়েদের শরীরে এই সিল মেরে  দিয়ে আমরা তাদেরকে আলাদা স্কুলে পাঠিয়ে দিতাম।

এই শিক্ষানীতি নেই প্রক্রিয়াটিকে বাতিল করে সবার জন্যেই  জানি একই ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থাটি চালু করে দিয়েছিল। আমি যতদূর আইনের অবস্থা ট্রাফিক আইনের মত, কেউ সেটা মানে না। যদি কোনো অসহয় বাবা মা হুইল চেয়ার আটকে থাকা তার ছেলে কিংবা মেয়ের লেখা পড়ার জন্যে এই আইনটির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন কোনো লাভ হয়না। ওটকো একটা ঝামেলা নেড়ে যেন নিতে না হয় তা জন্যে তার নানা রকম ফন্দিফিকির বের করেন। ভর্তি করার জন্যে তাদের  টেস্ট নেওয়া হয়, সেই টেস্টে তাদের ফেল করে দেয়া হয়। এই গল্পগুলো আমি  হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে সেরকম ছেলেমেয়ের বাবা মায়ের মুখে শুনেছি।

সিদ্ধেশ্বরি বয়েজ হাই স্কুলের ছাত্র অনয়ের কপালেও এরকম একটা কিছু ঘটতে শুরু করল এতোদিন একতালায় ক্লাস হয়েছে কোনো সমস্যা হয়নি, দোতালায় ক্লাসটা চলে যাবার পর অনয় আর তার বাবা মায়ের কথায় আকাশ ভেঙে পড়ল! ঠিক তখন একটা চমৎকার ঘটনা ঘটল  বিস্ক্যান ( BSCAN: Bangladeshi System Change Advocacy Group) নামের একটা প্রতিষ্ঠান এই ব্যাপারটা জানতে পারল।

আমার মনে হয় বিস্ক্যান সম্পর্কে দুই একটা কথা বলা দরকার, অনেকদিন আগে সাবরিনা সুলতানা নামে  একটা মেয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, সে এই সংগঠনটি গড়ে তুলছে অনেক স্বেচ্ছাসেবক এই কাজ করে। যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী তাদের অধিকার সম্পর্ক সবাইকে সচেতন করাই হচ্ছে এই সংগঠনেরই মূল কাজ। সাবরিনা খুব সুন্দর লিখতে পারে, ক্লাসে সে অসাধারণ কিছু লেখা লিখে অনেক তরুণদের এই ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলেছে।

আমার প্রথম যেদিন  সাবরিনার সঙ্গে দেখা হল, আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম, কারণ সে হুইল চেয়ারে আটকা পড়ে আছে একটা হাতের এক দুইটা আঙ্গুল ছাড়া আর কিছুই সে ব্যবহার করতে পারে না। আমি  আমার সমস্ত শরীর হাত পা ব্যবহার করেই তার থেকে বেশি কাজ করতে পারে দেখে ‘প্রতিবন্ধী’ মানুষ সম্পর্কে মানুষ আমার ধারণাই পাল্টে গিয়েছিল। আমি এখন প্রতিবন্ধী বলে এই কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করি না- আমার কাছে তারা বিশেষ (Special) মানুষ।
 
আসাধারণ সঙ্গে পরিচয় হবার পর আমি তাকে আমার নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছি, সে আমাকে কিছু একটা করতে বললে আমি সেটা করার চেষ্টা করি। সে আমকে আজ সাড়ে এগারটায় এই স্কুলে আসতে বলেছে- আমি তাই চলে এসেছি।

সাবরিনা চট্টগ্রাম থাকে, তার জন্যে ঢাকা আসা রীতিমত একটা বিশাল এডভেঞ্চার, তাকে সবকিছুর জন্যে এই এডভেঞ্চার করতে হয় না কারণ বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব ঢাকা থাকে। সালমা-সাবরিনা একটা অসাধারণ জুটি তাদের কাজের কোনো তুলনা নেই। এই স্কুলের ছেলেটিকে কীভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ দেওয়া যায় সেটা নিয়ে তারা চিন্তা ভাবনা করতে লাগল এবং তারা যে সমাধান বের করল তার কোনো তুলনা নেই। ঠিক করা হল স্কুলের দোতলায় ওঠার জন্য একটা লিফট বসানো হবে।

আমি জানি সবাই চমকে উঠেছে, একটা স্কুলে লিফট বসানো নিশ্চয়ই সোজা কথা নয়- এটা তো লাখ লাখ টাকা খরচের ব্যাপার শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের সাধারণ একটা স্কুলে একট লিফট বসানোর সুযোগ কোথায়? কিন্তু এসব কিছুই সমস্যা নয়, কারণ যে লিফটি বসানো হবে সেটা ম্যানুয়েল লিফট। এটা চালাতে ইলেকট্রিসিটি লাগবে না, একজন হাত দিয়ে হ্যান্ডেলের মতো একটা জিনিষ ঘুরিয়ে ওপরে তুলে নিতে পারবে, নিচে নামিয়ে আনতে পারবে।

যিনি সেই ম্যানুয়েল লিফট ডিজাইন করেছেন তার নাম মহিউদ্দিন বাবুল। এটি তার প্রথম ডিজাইন নয়। সাভারের সিআরপি এর জন্যে তিনি আগেও এটা তৈরি করেছেন। এই লিফটটি বসানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছেন, অনয়ের বাবা ছেলের লেখাপড়ার জন্য খবরটা বহন করেছেন। আজকে সেই ম্যানুয়েল লিফটি উদ্বোধন করা হবে এবং আমি সেটা নিজের চোখে দেখার জন্য ছুটে এসেছি।

মহিউদ্দিন বাবুল নামে যিনি এই লিফটি তৈরি করেছেন তার সঙ্গে পরিচয় হল-ঘটনাক্রমে তিনিও হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। শৈশবে গাছ থেকে পড়ে মেরুদণ্ডতে আঘাত পেয়েছিলেন। সাবরিনা-সালমা জুটি চলে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অনয় নামের যে শিশুটির জন্যে এই দজ্ঞযজ্ঞ সেও চলে এল। এখন বাকী আছে এই ম্যানুয়েল লিফটটা উদ্বোধন করা।

আমরা সবাই মিলে রওনা দিলাম। নিচতলায় স্কুলের বারান্দায় ওঠার জন্য এবং একটা বারান্দা থেকে অন্য বারান্দায় যাবার জন্যে দুটো র‌্যাম্প (ঢালু পথ) তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো তৈরি করে দিয়েছে কানাডার টরেন্ট শহরের একটি সংগঠন। আমাদের সঙ্গে এই স্কুলের ছোট ছেলেদের বিশাল একটা বাহিনী তাদের উৎসাহের কোনো সীমা নেই।

লিফটের সামনে হাজির হওয়ার পর আমি আবিষ্কার করলাম আমার জন্য ছোট একটা বিস্ময় অপেক্ষা করছে। ফিতা কেটে আমাকেই এই লিফটের উদ্বোধন করতে হবে। সালমা-সাবরিনার কিংবা লিফট ডিজাইনার মহিউদ্দিন বাবুলের এটি উদ্বোধন করে দেওয়ার অধিকার আমার আমার থেকে একশত গুণ বেশি, কিন্তু কিছু করার নেই। ঘটনাটি সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, আমি এক ধরনের আনন্দ মেশানো বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করলাম অনেক সাংবাদিক, টেলিভিশনের ক্রু চলে এসেছেন। এই অসাধারণ ঘটনাটি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অনেক মানুষ দেখতে পাবে। অনয়, আর হেডমাস্টারকে নিয়ে আমি লিফটের ভেতর ঢুকে গেলাম, সামনে একটা ফিতা লাগানো হয়েছে সেটা কেটে দেবার পর একটা গগন বিদায়ী চিৎকার দেওয়া হলো। যে সকল অনুষ্ঠানে ছোট ছোট বাচ্চা থাকে সেখানে অত্যন্ত চমকপ্রদ গগণ বিদারী চিৎকার দেওয়া সম্ভব।

উদ্বোধনের পর আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হল অনয়কে নিয়ে এই লিফটে করে দোতলায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে। আমি জবুথবু ধরনের মানুষ, ভুল কিছু করে ফেলে মাঝপথে ‍আটকা পড়ে যাই কিনা-কিংবা উপর থেকে নিচে ফেলে দিই কিনা সেটা নিয়ে নিজের ভেতর দুর্ভাবনা ছিল, তাই আরেকজন সঙ্গে উঠে গেলেন। তারপর হ্যান্ডেলটা ঘোরানো শুরু করতেই এই ম্যানুয়েল লিফট তরতর করে উপরে উঠতে শুরু করল। দেখতে দেখতে আমরা দোতলায় উঠে গেলাম। অন্য বাচ্চারা এর মাঝে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। সবাই মিলে একটা আনন্দোল্লাসের মাঝে অনয়ের হুইল চেয়ারটা ঠেলে তার ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়া হল।

আমার হিসেবে বাংলাদেশে একটা ইতিহাস রচিত হল।

২.
আমি জানি অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন উশখুশ করছে, এই ম্যানুয়েল লিফটটা তৈরি করতে কতো খরচ হয়েছে? আমি জানি-শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যাবে। একটা ভাল ল্যাপটপ কিনতে যত টাকা খরচ হয়- এই লিফটটি তৈরি করতে সেরকম খরচ পড়েছে- মাত্র নব্বই হাজার টাকা। যার অর্থ একটা স্কুলে এরকম একটা লিফট বসানোর জন্যে কাউকে বিদেশি অনুদানের জন্য বসে থাকতে হবে না, বড় বড় কর্পোরেশনের কাছে হাত পাততে হবে না, কয়েকজন মিলেই এটা তৈরি করে ফেলতে পারবে। আমার ধারণা মোটামুটি বড় একটা স্কুলের ছেলে মেয়েরা নিজেরাই চাঁদা তুলে তাদের স্কুলে এ রকম ম্যানুয়েল লিফট বসিয়ে ফেলতে পারবে।

সবাই নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছে এই ঘটনাটি নিয়ে আমি খুবই উত্তেজিত-হওয়ার কারণও আছে। পৃথিবীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী যে কোনো দেশের শতকরা পনেরো ভাগ মানুষ হচ্ছে কোনো না কোনো ধরনের ‘প্রতিবন্ধী’ (কুৎসিত শব্দটা আবার ব্যবহার করতে হলো!)। তার মাঝে একটা অংশকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। যারা হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে তারা যেন যে কোনো বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতে পারে, বাথরুমে যেতে পারে- অর্থাৎ তাদের প্রবেশগম্যতা থাকে তার জন্যে দেশে আইন আছে। অন্য অনেক আইনের মতো এই আইনটিও এখনও সেভাবে মানা শুরু হয়নি।

আমরা আশা করছি সেটা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এর মাঝে সিদ্ধেশ্বরি বয়েজ হাইস্কুলের ঘটনাটি আমাদের মাঝে নূতন একটা আশা দিয়েছে। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে এরকম অসংখ্য ছেলে মেয়েকে এই দেশের অনেক স্কুল ফিরিয়ে দিয়েছে- এখন তাদের আর ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এরকম একটা খবর পেলে বি-স্ক্যানের মত সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে সবাই মিলে সেই স্কুলের ওপর চড়াও হতে পারবে। তাদের বাধ্য করা যেতে পারে একটা ছোট শিশুর লেখা পড়া যেন তারা নিশ্চিত করে। এরকম একটা ছোট শিশুকে স্কুলে নেওয়া হলে কারও কারও একটু বাড়তি ‘ঝামেলা’ হতে পারে। কিন্তু আমি সবাইকে বলে দিতে পারি এই ছোট একটুখানি ঝামেলা সহ্য করার পরিবর্তে সবাই যে ‍আনন্দটুকু পাবে সেই আনন্দের কোনো তুলনা নেই। যারা আমার কথা বিশ্বাস করে না তারা চেষ্টা করে দেখতে পারে।

৩.
এই প্রসঙ্গে শেষ কথাটুকু বলে দেওয়া যাক, পৃথিবীতে যতভাবে আনন্দ পাওয়া সম্ভব তার মাঝে সবচেয়ে তীব্রভাবে সেটি পাওয়া যায় যখন অন্যের জন্যে কিছু একটা করা হয়। সিদ্ধেশ্বরি বয়েজ হাই স্কুলে গিয়ে আমি সেটা নিজের চোখে দেখেছি, বি-স্ক্যানের স্বেচ্ছাসেবকেরা সেখানে হাজির ছিল। তাদের আনন্দের কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না।

আমি দেশের তরুণদের এই কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই, শুধু নিজের জন্যে বেঁচে থেকে কোনো আনন্দ নেই, বেঁচে থাকার পরিপূর্ণ আনন্দ পেতে হলে অন্যের জন্যে কিছু একটা করতে হয়। তাই যারা বেঁচে থাকার পরিপূর্ণ আনন্দটি কী সেটা জানতে চায় তাদেরকে বি-স্ক্যান বা এরকম অন্য কোনো একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিছু একটা করার জন্যে অনুরোধ করছি।

আমি এটা নিশ্চিতভাবে জানি, আমি অনয়ের মুখের হাসিটি নিজের চোখে দেখেছি।

ফিরে আসার আগে আমি সব শিশুদের অটোগ্রাফ দিয়ে এসেছিলাম-তাদেরকে যে কথা দিয়েছিলাম সেই কথাটি রেখে এসেছিলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০০০০৫ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।