আতিকুর রহমান খান । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ।
বিভাগের চেয়ার ও অন্যান্য শিক্ষকদের চোখের পাতা ভিজে নরম হয়ে উঠেছে । বন্ধু ও সতীর্থরা অঝরে কাঁদছে। বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সবার আহাজারি দেখে মনে হয়েছে অসাধারণ ভালোবাসার বলয় তৈরি করবার অসামান্য ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিল ব্রাম্মণবাড়িয়ার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সম্ভাবনাময়, প্রতীভাবান ও প্রাণচঞ্চল এই ছেলেটি ।
![](files/2014_May/10_May/Atiq_BG_915394460.jpg)
ডাক্তার জানালেন, লাইফ সাপোর্ট খুলবার সিদ্ধান্ত দিলেই ......!!! কিন্তু কে দিবে জীবননাশী অতি কঠিন এই বাস্তব সিদ্ধান্ত ? বাবা মা কেউ কিছু বলছিলেন না, কী বলবেন তারা !
তখন বেলা এগারোটা । বাবার মন মানছেনা, বললেন আর একটু দেখি, দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেখি.... কলিজার টুকরো আর নেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হছ্ছে অশান্ত মা আর বিমর্ষ বাবার। কী অদ্ভুত , কী ভয়ন্কর এই সিদ্ধান্তগ্রহণের অপেক্ষার সময় !
এরই ফাঁকে যেনো সবাই বলছে- এ্যাই ছেলে, শোনো ! তুমি জগন্নাথের বারান্দায় আর চঞ্চল হাঁটবে না , কচি মুখে আর মৃদু হাসবে না কিন্তু রানা, সজল, রিয়াজ, রণি, নিজাম, শীষ, ইষা, শারমীনসহ বিভাগের সকল শিক্ষার্থীদের চোখে তুমি অনন্ত সজীব হয়ে ভাসবে, এটা দৃশ্যমাণ সত্য । শূন্যতার অনুভবে ক্রমাগত চোখে জল ঝরছে, এত জল নামবার পর তাদের চোখ নিশ্চয় অনেক পরিষ্কার থাকবে। তাদের কাঁচনয়নে অবশ্যই তোমার অস্তিত্ব প্রাণবান প্রস্ফুটিত হবে।
মায়ের আঁচলে চোখ ঘষছে জল মুছছে ভাইসকল, কত্ত মায়ায়
তুমিও তাই বেঁচে থাকবে বন্ধুদের চোখের আরশিতে-
আশা, ভালোবাসা আর আনন্দময়তায় !
বেলা চারটার দিকে জানা গেলো ছেলেটি আর নেই।
মনের কোনে অদ্ভুত কোন আনন্দ আর সৌন্দর্য্যবোধ খেলা না করলে বন্ধুদের নিয়ে হাতীরঝিলে কেউ বেড়াতে আসে না!!! বলা যায় বাসচালকের বেপরোয়া গতিতে একটি সৌন্দর্যবোধেরও মৃত্যু হলো!
বাংলাদেশ সময় ১৬২০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪