ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আসুন একটু দায়িত্বশীল হই | আহমেদ জামান সঞ্জীব

প্রতিক্রিয়া/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৫
আসুন একটু দায়িত্বশীল হই | আহমেদ জামান সঞ্জীব

গত কিছুদিন ফেইসবুকে ঢোকা বন্ধ। অবশ্য সেটা অত্যাবশ্যকীয় কোনো ব্যাপার নয়।

কিন্তু যে কারণে বন্ধ সেটা জরুরি। কয়েকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি অসম্ভব কষ্টদায়ক কিছু ছবি ফেসবুকে শেয়ার হচ্ছে। কিছু ছবি অনেকবার দেখেছি। ২০১৩-২০১৪ সালে মায়ানমারে ভয়াবহ দাঙ্গার সময়কার ছবি। যেসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধরা শুধুমাত্র অন্য ধর্মের বলে শিশু, মহিলাসহ অসংখ্য মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। এর নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই। এই নির্মমতার কোনো মানবিক ব্যাখ্যাও হতে পারে না।

এসব পুরানো ছবির সঙ্গে এতদিন পরে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু ছবি। যেগুলো দেখে ভীষণভাবে আতঙ্কিত বোধ করি। এই বর্বরতার ভয়াবহতা দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। ছবিগুলো কিছুতেই ভুলতেও পারছিলাম না। কিছুক্ষণ এভাবে কেটে যাওয়ার পর মনে হলো, ‘আচ্ছা নতুন ছবিগুলো কি আসলেই মায়ানমারের দাঙ্গার ছবি?’ সঠিক উৎস্য জানার তাগিদে ছবিগুলো গুগল-এ সার্চ করলাম । দেখলাম বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সময়ের অমানবিক অত্যাচার-এর ছবি এগুলো। কোনটি ফিলিপাইনের, কোনটি চীনের, কোনটি আবার আফ্রিকায় বোকো হারাম-এর কীর্তি, আবার কোনটি আইএস জঙ্গিদের কাজ। কিন্তু পোস্টগুলোতে সবগুলো ছবিকেই মায়ানমারে মুসলমান হত্যার ছবি বলে চালানো হচ্ছে। এসব পৈশাচিক অঘটনের চেয়েও বেশি আতঙ্কের ব্যাপার হলো এসব ছবির নেপথ্যের আসল ঘটনাটা না জেনেই অসংখ্য মানুষ যার যার ফেইসবুক ওয়ালে এগুলো নিয়ে পোস্ট এবং কমেন্ট করে বসে আছে। তারা একটিবারও ভেবে দেখেনি যে, এসব ভুল তথ্য আর ছবি পোস্ট করার ফলে যদি কোনো ধরনের দাঙ্গা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, যদি একটি প্রাণও যায় তাহলে সেই দায় তার নিজের উপরও পড়ে।

জানি না কাজটা কারা শুরু করছে। কী তাদের উদ্দেশ্য? তবে আর যাই হোক মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পূঁজি করে, মহান ইসলামকে নিজেদের হীন স্বার্থে অপব্যবহার করার এই অপচেষ্টায় ভালো কিছু যে হবে না, এটা যে কেউ চোখ বুজে বলে দিতে পারে। অবশ্য যে দেশে পবিত্র মক্কা’র গিলাফ পরিবর্তনের ছবিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিবাদের ছবি হিসেবে একটি জাতীয় দৈনিক তার প্রথম পৃষ্ঠায় ছেপে নিজেদেরকে ইসলামের বন্ধু হিসেবে দাবী করতে পারে, সে দেশে এটা এমন বড় কোনো ঘটনা মনে নাই হতে পারে। কিন্তু আমরা যারা, না জেনে, না বুঝে, ইসলামের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতার দ্বারা তাড়িত হয়ে এসব ছবি পোস্ট ও শেয়ার করে প্রতিবাদী হতে চাইছি, নানান ধরনের কমেন্ট করছি তাদের ব্যক্তিগতভাবে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। আর যাই হোক কোনো ধর্মব্যবসায়ী যেন আমাদের ব্যবহার না করতে পারে।

যারা গুগল-এর পিকচার সার্চ সম্পর্কে জানেন না তারা নিচের ভিডিও লিংক-এ ক্লিক করে পিকচার সার্চ করে ফেলতে পারেন।

https://www.youtube.com/watch?v=YutCm5wQeiQ&feature=youtu.be

ইসলাম অর্থ শান্তি। সেই শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ধারালো চাপাতিতে যদি অহেতুক রক্ত লাগে, সে রক্তের রঙ আমাদের ইসলামকেও কলুষিত করে, প্রশ্নবিদ্ধ করে। আসুন একটু দায়িত্বশীল হই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, ০৭ জুন ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।