ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পাবলিক প্লেসে ধূমপান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত

মাহমুদুল হক মনি, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
পাবলিক প্লেসে ধূমপান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত

ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক; এটি মৃত্যু ঘটায়। এই বাক্যগুলো আমরা সবাই জানি।

কিন্তু এর গুরুত্ব কি আসলেই অনুধাবন করতে পারি? মনে হয় না। কেননা, গত এক দশক ধরে আইন প্রয়োগ করেও বাংলাদেশে ধূমপান বন্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। খুব সহজেই অনুমেয়, ধূমপানের মতো সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণে শুধু আইন প্রয়োগ নয় চাই সামাজিক সচেতনতাও।

অনেকেই ভাবেন উন্মুক্ত জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটাই বা হুমকি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী তামাক সেবন ও ধূমপানের কারণে ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ অকালমৃত্যু বরণ করেছে। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে-এর সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ ভাগ মানুষ ধূমপান অথবা অন্য কোন উপায়ে নিয়মিত তামাক সেবন করে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের জন্য বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫৭,০০০ মানুষ মৃত্যু ও প্রায় ৩,৮২,০০০ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। এ ছাড়াও একথা অনস্বীকার্য যে, ধূমপানের কারণে মানুষ মাদকের দিকে ঝুঁকে। সে অর্থে, ধূমপানকে মাদকের প্রবেশদ্বার বলা হয়। অনেক গবেষণায় ধূমপানের সঙ্গে অপরাধ প্রবণতার সংযোগ পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, আমরা যদি ধূমপানকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই তাহলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, পঙ্গুত্বসহ অন্যান্য বক্ষব্যাধির কারণে অকালমৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়বেই।

ধূমপানের প্রাথমিক ক্ষতির দুটি দিক রয়েছে। এক, ধূমপান করলে ধূমপায়ীর শরীরে শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের ক্যান্সারের উদ্ভব হয়। যার কারণে ওই ব্যক্তির অকালমৃত্যু আশঙ্কা অনেক বেশি পরিমাণেই থাকে। দুই, ধূমপানের কারণে তার আশেপাশে থাকা অধূমপায়ীদের ক্ষতি হয়। যাকে পরোক্ষ ধূমপান বলা হয়। এই পরোক্ষ ধূমপানের ফলে নারী (বিশেষ করে গর্ভবতী) ও শিশুদের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়। এছাড়া একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই অনুধাবন করা যায় যে, উন্মুক্ত ধূমপান সামাজিক অবক্ষয়েরও কারণ। তাই আইন করে উন্মুক্ত ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৫ সালে। আইনের ভাষায় তা হচ্ছে— ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান’।

তামাক সেবনের ফলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে ২১ মে ২০০৩ সালে ১৬৮টি সদস্য রাষ্ট্র একটি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করে, যা ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এই কনভেশনের স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ পাশ করে। এ আইনের ৪(১) ধারার বিধান অনুযায়ী, ‘কোন ব্যক্তি কোন পাবলিক পরিবহন বা পাবলিক প্লেসে ধূমপান করিতে পারিবেন না’। পাবলিক প্লেস বলতে এখানে মূলত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, পার্কসহ জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহারের জায়গাকে বোঝানো হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ধূমপানকে নিয়ন্ত্রণে আইনের ৭ ধারায় পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করার বিধান রাখা হয়েছে। এখানে আইনের স্পিরিট শুধুমাত্র উন্মুক্ত ও পরোক্ষ ধূমপান বন্ধই নয়, বরং সবাইকে বোঝানো যে ধূমপান খারাপ কাজ, যা লুকিয়ে করতে হয়। এ আইনের অধীন সম্ভাব্য অপরাধের ধরন ও অপরাধীর দ্রুত এবং জনসম্মুখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করার জন্য আইনটিকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করা হয়েছে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫-এর কার্যকরি প্রয়োগ ও তামাক সেবনে স্বাস্থ্যক্ষতির বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’ গঠিত হয়। এ সেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা করে থাকে।

২০১৫ সালে এ আইনের ১৬ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিধিমালার ৮(ক) বিধি অনুসারে প্রতিটি পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ‘ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ এই সতর্কতামূলক নোটিশটি দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এ বিষয়টি নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যেতে পারে। আর এ বিধান লংঘিত হলে আইনের নির্দেশনা অনুসারে আদালত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।