ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

নোবিপ্রবি’র দশম বর্ষে পদার্পণ: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

মাহাবুবুর রহমান (ফরহাদ) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
নোবিপ্রবি’র দশম বর্ষে পদার্পণ: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনাপুর-চরজব্বর সড়কের পশ্চিম পাশে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে ১০০ একর জায়গা জুড়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বিস্তার। একাডেমিক কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালের ২২ জুন থেকে।

চারটি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক আর ১৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নোবিপ্রবি’র যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ১৪টি বিভাগ, শতাধিক শিক্ষক ও তিন হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

২২ জুন দশম বর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে নবীণ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইতোমধ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারটি ব্যাচ স্নাতক ও দু’টি ব্যাচ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছে। এছাড়া ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষায় আছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর  আরো একটি ব্যাচ।

নোবিপ্রবির প্রথম ব্যাচের একজন ছাত্র ও পরবর্তীতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার সৌভাগ্য অর্জন করায় প্রত্যক্ষ করেছি ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি পট পরিবর্তন। তাই দশম বর্ষে পদার্পণের প্রারম্ভিকে আমাদের হিসেব করতে হবে গত নয় বছরে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছি। সত্যি কথা বলতে, সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তুলনা করলে অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে নোবিপ্রবি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেণি কক্ষ, ল্যাব ও শিক্ষক সংকট।

এছাড়াও অপর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা ও যাতায়াতে পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। এর জন্য অবশ্য অল্পসময়ে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিভাগ চালু হওয়াটায় অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। তবে যে বিষয়টি সব চেয়ে বড় হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সবার, তা হলো ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের এখনো উচ্চগতি সম্পন্ন ওয়াইফাই সংযোগ নেই। ফলে বেশিরভাগই শিক্ষার্থীই  বঞ্চিত ইন্টারনেট সুবিধা থেকে।

তবে এত অপ্রাপ্তি ও বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও থেমে নেই আমাদের এগিয়ে চলা। বয়স, ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিচারে দেশের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় নোবিপ্রবি হয়তোবা এখনও দুগ্ধপোষ্য শিশুই। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের বিচারে নোবিপ্রবি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবেই মাথা সমুন্নত রেখে প্রতিযোগীতার বাজারে লড়ে যাচ্ছে।

এছাড়া সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে দেশের অন্যতম সেরা একটি বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। কারণ অবকাঠামোগতে উন্নয়ন ও অত্যাধুনিক ল্যাব গড়ে তোলার জন্য যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় শিক্ষা ও মাঠ পর্যায়ের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

সরকারের উদ্দেশ্যে বলব, উচ্চশিক্ষার প্রসারে দেশের সব অঞ্চলের মানুষদের জন্য নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তা সত্যিকার অর্থে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো, অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা ও শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বর্তমান সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। যার ফলে রাষ্ট্রের জন্য গড়ে তোলা যাবে একঝাঁক দক্ষ কর্মী ও সেবক। তাই আশা করি বর্তমান সরকারের  সুনজর থাকবে প্রান্তিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নে।

তবে নোবিপ্রবি পরিবারের জন্য সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছেন বর্তমান সরকারের আশির্বাদপুষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। তার নিয়োগ পাওয়ায় সবারই আশা, সব অপ্রাপ্তিকে পেছনে ফেলে নোবিপ্রবি’র নতুন দিনের পথচলার শুরু হবে।

‘উপকূলের অক্সফোর্ড’ হিসেবে পরিচয় পাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যাতে করে অত্র অঞ্চলের শিক্ষা ও গবেষণার তীর্থস্থানে পরিণত হতে পারে এবং ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় উন্নয়নে সেই প্রত্যাশাই রইল দশম বর্ষে পদার্পণের প্রারম্ভিকে।

ব্যক্তিগত একটি অনুভূতির কথা না বললেই নয়, শত অপূর্ণতা ও অপ্রাপ্তি সত্ত্বেও নোবিপ্রবির বর্তমান একজন শিক্ষকের তুলনায় একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবেই পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ও গর্ববোধ করি। দশমবর্ষের মত প্রত্যক্ষ করতে চাই বিশ, ত্রিশ,পঞ্চাশতম বর্ষটি। শুভ হোক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা।

লেখক: প্রভাষক, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।