ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘মানবিক ভুল!’ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এই অজুহাত আর কতদিন?

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
‘মানবিক ভুল!’ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এই অজুহাত আর কতদিন?

[উন্নত সেবার প্রতিশ্রুতি দানকারী দেশের অভিজাত নামধারী এক শ্রেণীর হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৌরাত্ম্য যেন থামছেই না। নানা অযৌক্তিক অজুহাতে এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ।

অথচ তাদের প্যাথলজি রিপোর্টে ভুল থেকে যাচ্ছে অহরহ। তাদের এসব ভুলের কারণে পয়সা খরচ করেও বিপন্ন হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। অবহেলা ধরা পড়লেও তাদের অজুহাত ‘মানুষ মাত্রই ভুল করে’। এ রকমই একটি ‘মানবিক ভুল’এর দৃষ্টান্ত বাংলানিউজের পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী পাঠক শফিক সোহাগ। ]

আমার মা বার্ধক্যের কারণে দীর্ঘদিন যাবত বাতব্যথায় ভুগছেন । ২০১২ সাল থেকে তিনি ডা. শেখ আহমদের চিকিৎসা তত্ত্বাবধানে আছেন । ডা. শেখ আহমদের চেম্বার চট্টগ্রাম নগরীর সিএসসিআর (CSCR) (সেন্টার ফর স্পেশালাইজড কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ) প্রাইভেট হসপিটালে হওয়ায় সেখানেই সকল প্রকার টেস্ট করে আসছি ।

প্রতিদিন শত শত মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এখানে বিভিন্ন প্রকার টেস্ট করিয়ে থাকেন । কিন্তু দুঃখজনক; এত টাকার বিনিময়ে টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট যদি হয় ভুলে ভরা হয় তখন সেখানকার চিকিৎসা মান নিয়ে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক ।    

CSCR_bg_Chittagongগত বছর সিএসসিআর (CSCR) –এর রিপোর্টে ভুল প্রমাণ হওয়ায় আমি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি । বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করে এর প্রতিবাদ করবো ভেবেছিলাম । এতে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি পেত। কিন্তু ব্যক্তিগত নানান ঝামেলার কারণে এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্য সময় করে নিতে পারিনি । সম্প্রতি আবারও ভুল রিপোর্ট প্রমাণিত হওয়ায় কলম না ধরে আর পারলাম না ।  

প্রথমেই গত বছরের ভুল রিপোর্টের কথা বলি । ডা. শেখ আহমদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সিএসসিআর –এ আমার মায়ের এক্সরে, ইউরিন টেস্ট, ব্লাড টেস্টসহ বিভিন্ন প্রকার টেস্ট করালাম । ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ইং তারিখের রিপোর্টে Platelet count হল 80,000 (যেখানে নরমাল 1,50,000 to 4,00,000) । ডা. শেখ আহমদ সাহেব বিস্মিত হলেন । ব্লাডে এই সমস্যা ধরা পরায় তিনি পরামর্শ দিলেন হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম বড়ুয়াকে দেখানোর জন্য । আমি আমার মা’কে ডা. অনুপম বড়ুয়ার পপুলার হসপিটালের চেম্বারে নিয়ে যাই । ডা. অনুপম বড়ুয়া আমার মায়ের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় CBC  টেস্ট দিলেন । এবার টেস্ট করালাম পপুলার হসপিটালে । পপুলার হসপিটালের রিপোর্টে Platelet count: 2,31,000 । ডা. অনুপম বড়ুয়া জানালেন Platelet স্বাভাবিক আছে, চিন্তার কিছু নেই । কিন্তু আমি নিশ্চিন্ত হতে পারছিলাম না । কিভাবে বুঝবো কোন রিপোর্টটি সঠিক আর কোনটি ভুল ?

আমি ভেবে দেখলাম,যদি সিএসসিআর এর রিপোর্ট সঠিক হয় তাহলে Platelet সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তা নিরাময়ে কোনো ব্যবস্থা তো নেয়া হচ্ছে না । আর যদি পপুলারের রিপোর্ট সঠিক হয় তাহলে সিএসসিআর এ করানো বাকি রিপোর্টগুলোও কি ভুল ? এসব চিন্তা করে আমি আমার মাকে আবার নিয়ে গেলাম শেভরন হসপিটালে । শেভরন হসপিটালের রিপোর্টে Platelet count 2,30,000 । সুতরাং এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সিএসসিআর –এর রিপোর্টই ভুল। এবার আসি সাম্প্রতিক বিষয়ে । গত মাসে (নভেম্বর ২০১৫ইং) আমার মা’কে ডা. শেখ আহমদের কাছে নিয়ে যাই । তিনি আবার কিছু টেস্ট দিলেন । যথারীতি সিএসসিআর হসপিটালে টেস্টগুলো করালাম । এবারও রিপোর্টে Platelet count 80,000 ! আমি ডাঃ শেখ আহমদকে জানালাম এই রিপোর্টের ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে তাই আমি পুনরায় টেস্ট করাতে চাই। এরপর আমি পুনরায় পপুলার হসপিটালে CBC টেস্ট করালাম । পপুলার হসপিটালের রিপোর্টে Platelet count 1,50,000 । উভয় রিপোর্ট দেখে ডা. শেখ আহমদ সিএসসিআর এর ল্যাবে ফোন দিয়ে তাদেরকে রিপোর্টের পার্থক্যের কথা জানালেন এবং Platelet count রিপোর্ট করতে কোনো ভুল হয়েছে কিনা জানাতে বললেন । ল্যাব থেকে জানানো হলো “Platelet count 80,000 এর চেয়েও কম ছিল, সুতরাং পপুলারের রিপোর্ট 150,000 টাই ভুল” । আমি তাঁদের বললাম, কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক তা আমি জানি না তবে এটা আমি নিশ্চিত যে এখানে যেকোনো একটা রিপোর্ট অবশ্যই ভুল আছে । এখন কার রিপোর্ট ভুল সেটা আমাদের বের করতে হবে । তাই আমি সব রিপোর্ট নিয়ে পত্রিকা অফিসে যাবো, পত্রিকায় এবং অনলাইনে নিউজ করাবো । একথা বলার পর ডা. শেখ আহমদ এবং সিএসসিআর এর ল্যাব কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালেন তাঁরা আবার Platelet টেস্ট রিপিট করাবেন, এর জন্য কোনো ফি নিবেন না । অতঃপর Platelet টেস্ট রিপিট করলেন এবং রেজাল্ট এলো Platelet count 1,20,000 ! আমার ধারণা তাঁরা 1,50,000 কে 1,20,000 শো করেছেন, তবুও তো তাঁদের ভুল প্রমাণ হল । আমি প্রতিবাদ জানানোর পর তাঁরা বললেন “মানুষের তো ভুল হতেই পারে, হয়তোবা টাইপিং এর সময় ভুল হয়েছে, এটা Human Error । মানুষ মাত্রই ভুল” ।   
Report_01
মানুষ হাজার হাজার টাকা খরচ করে টেস্ট করিয়ে থাকেন । টেস্টের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসক রোগ সম্পর্কে অবগত হন এবং রোগ নিরাময়ে অগ্রসর হন । আর সেই রিপোর্টই যদি হয় ত্রুটিপূর্ণ তাহলে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে কি হতে পারে ভেবে দেখুন ! এক্ষেত্রে “Human Error”, “মানুষ মাত্রই ভুল” এসকল প্রবাদ কতটুকু গ্রহণযোগ্য ?

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।