‘দ-এ দোয়েল’। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখী।
এক বাক্যে বলা চলে এই চিন্তা- হয় প্রতিক্রিয়াশীল নয়তো চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
দায়িত্বজ্ঞানহীনতা হয়তো বলা যাবে না, কারণ নিজেদের দায়িত্বের বিষয়ে এই সংস্থাটি বেশ সচেতন। প্রতিবছর দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরছে। মনগড়া রিপোর্ট বানাচ্ছে। তা নিয়ে মামলা মোকদ্দমাও হচ্ছে।
সে নিয়ে আলোচনা নয়। কারণ সেটি নিয়ে বিতর্ক বড়। আর তাতে টিআইবি নিজেকে খুব একটা শক্ত ভিতে রাখতে পারেনি। কথা উঠেছে- ‘টিআইবি দুর্নীতি দেখে, টিআইবি’র দুর্নীতি দেখবে কে?’
এই সংস্থাটির সঙ্গে দেশের তথাকথিত এলিটরা রয়েছে। তারা সুশীল হিসেবেই সুপরিচিত। এই সুশীলরা আবার সুযোগ বুঝে দেশের রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে মোয়া খাওয়ার চেষ্টায় রত হয়েছিলেন ফলে তাদের অন্তরের কলুষ দেশবাসীর জানা। ফলে এদের কারণে ‘সুশীল’ আজ গালিতেও পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে চিলির টিআই প্রধানের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ার পর ঢাকায় এদের নিয়ে ম্যালা জল্পনা কল্পনাও হচ্ছে। খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। আর এই দাবি যে শুধুই রাজনৈতিক- তা নয়, সমাজ-সাধারণের মাঝেও এদের নিয়ে সন্দেহ কম নয়।
তবে এসব নিয়ে কথা বাড়ানোও এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। কথা বলতে চাই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে। দেশের শিশুতোষ শিক্ষার একটি ধরণকে দুর্নীতির প্রচারে টেনে আনার যে ‘ঘৃণ্য’ প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করেছে এরা তা নিয়ে।
ঘৃণ্য এই কারণে যে, ২০ এপ্রিল বিষয়টি নজরে পড়ার পর এ পর্যন্ত কয়েক ডজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সকলেরই মত পেলাম টিআইবি যা করেছে তা ঘৃণ্য।
কার্টুনটি নতুন নয়। বছর পাঁচেক আগে একটি কার্টুন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এটি পায় টিআইবি। সে ছিলো স্রেফ প্রতিযোগিতা। যা থেকে দেখা হচ্ছিলো কি কি ভাবে দেশের দুর্নীতিকে তুলে ধরা যায়। জনৈক কার্টুনিস্ট তখন এঁকেছিলেন, একটি শিশু তার শিশুতোষ বইখানা সামনে ধরে আছে। বইয়ের ‘দ’ এর দিকে নয়, তার চোখ উপরে- সেখানে লেখা রয়েছে ‘দ-এ দুর্নীতি’। তাতেও ক্ষতি ছিলো না। সে ছিলো স্রেফ প্রতিযোগিতা। তাতে একজন কার্টুনিস্ট আঁকতেই পারেন।
কিন্তু এখন টিআইবি সেই কার্টুনটিকেই তাদের প্রচার কাজে ব্যবহার করছে। ২০ এপ্রিল তাদের একটি কর্মসূচিতে একটি টি-শার্ট বিতরণ করা হয়েছে। যার পীঠেই ছাপানো রয়েছে কার্টুনটি।
এখানেই আপত্তি। এখানেই ঘৃণা। কারণ কাজটি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার।
টিআইবি হয়তো বলবে, কেনো দেশে কী দুর্নীতি চলছে না! তাহলে লিখতে ক্ষতি কি।
বেশ! তাহলে এই শিশুটিকে শেখানো আরও যেতো ‘ক-এ কোপানো, খ-এ খুন, গ-এ গবেট, ঘ- ঘুষ, ঙ- ঠাঙানো, চ-এ... ইত্যাদি। দেশেতো এসবও রয়েছে কমবেশি।
টিআইবিতো সুশীলদের সংগঠন। সুশীলরা মিলে তাদের উর্বর মস্তিষ্ক খাটিয়ে এমন একটা বই অবশ্যই লিখে ফেলতে পারবে। আর শিশুরা ছোট বেলা থেকেই শিখে নেবে। কোন অক্ষরে কি হয়! কারণ এর সবগুলোই দেশে রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কতটা লেখা যায় কতটা যায় না। কি সামনে আনা যায়! কি যায় না! সমাজ পাল্টে দেওয়ার জন্য হলে নিশঙ্কচিত্তে বলতে চাই এই কার্টুন সমাজের ক্ষতিই ডেকে আনবে।
আর সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই যদি লক্ষ্য হয় তাহলে বলতে হবে এর চেয়েও জোড়ালো কার্টুন হতে পারে যা সরকারকে ভাবিয়ে তুলবে।
টিআইবি’র এই কার্টুন দেখার পর অনলাইনে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে ঘাটাঘাটি করে ‘সি-ফর করাপসন’ এর অস্তিত্ব পাওয়া গেলো না। সি ফর কার, কাউ, ক্যাটল এগুলোই আসে।
ওদের মস্তিষ্ক হয়তো টিআইবি’র কর্তাব্যক্তিদের মতো এতটা উর্বর নয়। তবে হ্যা ২০১৫ সালের হিসেবে বিশ্বের ১৭৫ দেশের মধ্যে ১৪৫ তম দুর্নীতিমুক্ত দেশ ছিলো বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে বলা যায় দুর্নীতিতে এগিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু যারা ১৭৫-১৭৪ নম্বরের দেশ তাদের দেশে কি ধরনের কার্টুন হয়! ঘাঁটাঘাটি করে দেখা গেলো সবচেয়ে বড় দুর্নীতির দেশ উত্তর কোরিয়া। কিন্তু দেশটির দুর্নীতি নিয়ে কার্টুন বানালে মিসাইলের ভয় আছে। সে কারনেই বুঝি একটি কার্টুনও মিললো না অনলাইনে। দ্বিতীয় সোমালিয়া। ‘কার্টুন অন করাপশন ইন সোমালিয়া’ লিখে সার্চ দিয়ে প্রথমেই একটি কার্টুন মিললো পুলিশের দুর্নীতির। যা দারুণ অর্থবহ।
এখানে আরেকটি বিষয় দেখা গেছে যেখানে যে দেশের কথা লিখেই আপনি সার্চ দেন প্রথম এক দুটি ছাড়া বের হয়ে আসবে বাংলাদেশের দুর্নীতির কার্টুন। আর বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে কার্টুন লিখে সার্চ দিলে পাতার পর পাতা টিআইবি’র সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে।
যেনো দুর্নীতি কেবল বাংলাদেশেই হয়। আর বাংলাদেশের- টিআইবি’ই বেশি সক্রিয়।
এই সক্রিয়তা ক্ষতির নয়। তবে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে শিশুতোষ শিক্ষার ধরণটিতে এই দুর্নীতির সঙ্গে তুলে আনা নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। আর ঘৃণ্য।
শিশুবেলা থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করার প্রয়োজন নেই। বরং ওরা দ-এ দোয়েল, দ-এ দয়া, দ-এ দই এগুলোই শিখুক।
টিআইবি তাদের এই কার্টুন প্রত্যাহার করবে এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময় ১৬১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৬
এমএমকে