দিল্লি গিয়েছিলাম ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে। তিনি মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আমাকে।
৯ আগস্ট বিকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোন আসে, মি. আকবর দুপুরে আপনার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করবেন হোটেল ইমপেরিয়ালের কফি শপ রেস্টুরেন্টে। এর এক দিন পরই রাষ্ট্রপতি ভবনের ফোন। ১১ আগস্ট বেলা ২টায় দেখা হবে বাংলাদেশের বন্ধু প্রণব মুখার্জির সঙ্গে। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও আমি সিদ্ধান্ত নিই ঠিক সময়েই যাব রাষ্ট্রপতি ভবনে। আমাদের গাড়ির নম্বর ১০ আগস্ট রাতে দিয়ে রাখি রাষ্ট্রপতির এডিসিকে। পরদিন সরাসরি গাড়ি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি মেলে। আমরা বসার কিছুক্ষণের মধ্যে এডিসি এসে নিয়ে যান প্রণব মুখার্জির সামনে। এর আগেও তার সঙ্গে আমাদের দুজনের দেখা হয়েছিল। তাই শুরুতেই শুভেচ্ছা জানালেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশাল পাঠকগোষ্ঠীকে। জানতে চান পত্রিকার সার্কুলেশন আগের মতোই এক নম্বরে আছে তো? তাকে বললাম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের অবস্থান আগের মতোই আছে। এর পরে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা। সায়েম সোবহান আনভীর ও আমার সঙ্গে কথা বললেন অনেক কিছু নিয়েই। বাংলাদেশ নিয়ে তার উৎকণ্ঠা আছে, ভালোবাসা আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে এই মানুষটি বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা দেখিয়ে আসছেন। ভারতের রাজনীতিবিদ ও মিডিয়াসহ সর্বস্তরের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে। বাঙালিরা সারা দুনিয়ায় গর্বিত তাকে নিয়ে। ৮ আগস্ট ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখার্জির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে তাকে আঙ্গুল ধরে চলতে শিখিয়েছেন প্রণব দা। প্রণবকে তার অভিভাবক ও গুরু অভিহিত করে মোদি বলেন, এই মহত্ব একমাত্র প্রণব মুখার্জিই দেখাতে পারেন। মোদি আরও বলেন, আমি দিল্লিতে তখন একদম নতুন। পরিবেশটাও আমার কাছে নতুন ছিল। অনেক বিষয়েই রাষ্ট্রপতি একজন অভিভাবকের মতো। একজন গুরুর মতো আঙুল ধরে আমাকে পথ চিনিয়ে দিয়েছিলেন তখন। আমার মতো সৌভাগ্যবান খুব কম মানুষই হন। মোদি বলেন, তার রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ঘরানা বর্তমান রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক ঘরানার থেকে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও প্রণব মুখার্জির সান্নিধ্যে এলে তিনি প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেন গণতন্ত্রে আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারেন। কংগ্রেস নেতা হিসেবে প্রণব মুখার্জি নিজের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে গত চার বছরে প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি ভবনকে জনসাধারণ এবং ক্ষমতার সর্বোচ্চ মিলনমেলায় পরিণত করেছেন।
মোদির এই বক্তব্যের পর প্রণব মুখার্জিকে নিয়ে মূল্যায়নের আর কিছু থাকে না। বসুন্ধরা ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান ও আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যগুলো নিয়ে আলাপ করতে করতে বেরিয়ে এলাম রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে। ব্যক্তিগত জীবনে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিখ্যাত সাংবাদিক এম জে আকবর আমাকে অনেক দিন ধরে স্নেহ করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে তিনি হঠাৎ করেই আমাকে বললেন, দিল্লি আসো ২৮ জুলাই অথবা ১০ আগস্ট। তাকে জানালাম ২৮ জুলাই আসতে পারব না, তবে ১০ আগস্ট আসব। বললেন, লাঞ্চ খাওয়াব তোমাকে। তবে কোনো সাক্ষাৎকার দেব না। আমিও তাকে বললাম, এবার কোনো সাক্ষাৎকার চাই না। শুধু আড্ডা। তাই হলো ১০ আগস্ট হোটেল ইমপেরিয়ালে। এক ঘণ্টা মধ্যাহ্নভোজে নানা বিষয়েই গল্পগুজব। এই হোটেলে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি এসেছিলাম বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে আরও ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, তানজিম আহমদ সোহেল তাজ, নজীব আহমেদ ও আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। শেখ হাসিনা তখন দীর্ঘ বৈঠকে বসেছিলেন তখনকার মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। দিল্লি লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিল বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতাকে। এবার দিল্লি সফরকালে আরও অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বিশেষ করে বন্ধু সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরীসহ অনেকের সঙ্গে আড্ডার কথা মনে থাকবে।
নঈম নিজাম: সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৬