ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

সাফল্যের নায়ক হয়েও অতি সাধারণ একজন মালেক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৬
সাফল্যের নায়ক হয়েও অতি সাধারণ একজন মালেক ছবি: সোহেল সরওয়ার

৭৫ বছর বয়সে ঐতিহ্যবাহী মেজবান খেতে বসেছেন তিনি। সাদা ভাতের সঙ্গে প্রচুর গরুর মাংস তুলে নিচ্ছেন নিজের হাতে।

পাশে বসা তার এক শুভাকাঙ্ক্ষী উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলেন, কী করছেন আপনি? বয়স্ক ভদ্রলোকের সাফ জবাব, কেন মাংস নিচ্ছি দেখতেই তো পাচ্ছেন। মধ্যবয়সী শুভাকাঙ্ক্ষী বললেন, আপনি তো হার্টের রোগী। শুনে বয়স্ক ভদ্রলোক জবাব দিলেন, হ্যাঁ পাঁচটি রিং লাগিয়েছেন ডাক্তার। নড়েচড়ে বসে শুভাকাঙ্ক্ষী আবার প্রশ্ন করলেন, তো, ডাক্তার কি খেতে বলেছেন? বয়ষ্ক ভদ্রলোক হেসে বললেন, চিকেন আর সবজি খেতে বলেছেন। এত গরুর মাংস খাচ্ছেন কেন তাহলে- শুভাকাঙ্ক্ষীর আবেগভরা প্রশ্ন। আবারও বয়স্ক লোক রসিকতা করে জবাব দিলেন, কেন অসুবিধা কী? গরু তো সবুজ ঘাস খায়, সেটিও তো এক ধরনের ভেজিটেবল। আমি সেই গরুর মাংসই খাচ্ছি, অসুবিধা কোথায়? 

৭৫ বছর বয়সী এই ভদ্রলোকের নাম এম এ মালেক। উপরের কথোপকথন থেকে সহজেই বোঝা যায় রসবোধেও তিনি  অনন্য!  চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষ তাকে আজাদীর মালেক সাহেব নামেই চেনেন। মন্ত্রী-মিনিস্টার, এমপি-নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি সবাই তাকে চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় ‘মালেক বদ্দা’ (মালেক ভাই) ডাকেন। সৌম্য-সুদর্শন-বিনয়ী এক মানুষের পথিকৃৎ  তিনি। অহংকার তাকে কখনও ছুঁতে পারেনি। দাওয়াত-নিমন্ত্রণ, সামাজিক অনুষ্ঠান সবকিছুতেই তার সরব উপস্থিতি। খেতে পছন্দ করেন, খাওয়াতেও।  

এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেকের একমাত্র ছেলে এম এ মালেক। বাবা বেঁচেছিলেন ৭০ বছর। মারা যাওয়ার দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন দৈনিক আজাদী। সেটি ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। টানা ৫৬ বছর ধরে এই কাগজটি এ অঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, লড়াই-সংগ্রামের নীরব সাক্ষী। তার পথচলা ছিল কঠিন, একইসঙ্গে সাহসী। টানা ৪০ বছর ধরে লোকসান গোনার পর গত ১৬ বছর ধরে এটি লাভজনক কাগজ। শুধু লাভজনক নয়, এ অঞ্চলের পাঠকপ্রিয়তারও শীর্ষে। আঞ্চলিক কাগজের ভাবমূর্তি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কখনও কখনও। ৬০ এর দশক ও ১৯৯১ এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদ্যুৎবিহীন চট্টগ্রাম অন্ধকারে ডুবেছিল। কিন্তু আজাদী আলো ছড়িয়েছে দিশেহারা এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় কাগজটি বের হয়েছে নিয়মিত।  

আজাদী নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে তার নিরলস চেষ্টা ও আন্তরিকতায়। পাঠকের মনে গেঁথে যাওয়ার মতো সংবাদ পরিবেশন করেছে সবসময়। সেকাল-একাল অর্থাৎ অতীত-বর্তমান এ দুই ঘরানার পাঠকদের অদ্ভুতভাবেই এক কাতারে মেলাতে পেরেছে দৈনিক আজাদী। কখনও কখনও আঞ্চলিক ভাষায় হেডিং করে এ অঞ্চলের মানুষকে চমকে দেওয়ার মতো সাহস দেখিয়েছে। এ চট্টগ্রামের সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন তখন আজাদী প্রথম পৃষ্ঠায় পুরো আট কলাম জুড়ে ব্যানার হেডলাইন করেছিলেন, ‘আঁরার ইউনূস নোবেল পাইয়্যে’ (আমাদের ইউনূস নোবেল পেয়েছে)। অতি সাধারণ এক হেডিং, কিন্তু আবেদন অসাধারণ। চট্টগ্রামবাসীর মনে গেঁথে আছে এখনও এই হেডিং। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামের সাবেক জিওসি মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে চট্টগ্রামে আনা হবে। এরশাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তখন ছিল খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু। পরীর পাহাড়ের আদালত ভবনে নাকি সার্কিট হাউজে এরশাদের জবানবন্দি নেওয়া হবে সেটি বের করার জন্য চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিকরা দলবেঁধে রাতদিন চেষ্টা করেও বের করতে পারেনি। যেদিন এরশাদ চট্টগ্রাম এলেন সেদিন সকালে একমাত্র দৈনিক আজাদীতেই লেখা হয়েছিল ‘আদালত বসবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে’। সকালে আজাদীর এই খবর দেখে নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিমানবন্দরের দিকেই চট্টগ্রামের এমনকি ঢাকা থেকে আসা সংবাদকর্মীরা ছুটতে লাগলেন।  একজন সংবাদকর্মী হিসেবে খবরটি আমার কাছে এখনও এক বিস্ময়কর  এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট।

এতো সুনাম-ভাবমূর্তি অর্জনের পরেও যে কোনো কিছুরই সীমাবদ্ধতা থাকে। আমার বিবেচনায় সংবাদ পরিবেশনে দক্ষতা যেরকম অর্জন করেছে আজাদী, একইভাবে তার ছাপার মান, প্রোডাকশন কোয়ালিটি বিশ্বমানে পৌঁছার তাগিদ দেখা যায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার 

বাকি অংশ পড়তে>>>

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।