সংবাদপত্রের কাটতির অব্যাহত পতন, চাকরিচ্যুতি, নতুন কাজের সুযোগ কমে যাওয়া এসব এখন গোটা বিশ্বের চিত্র। এ থেকে বিশ্বাস জন্মাতেই পারে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সাংবাদিকতা বেঁচে আছে, ভালোভাবেই বেঁচে আছে। আর বেঁচে থাকবে। আসলে যা ঘটেছে তা হচ্ছে- সংবাদকর্মীর কাজের ধরনটি পাল্টে গেছে, কিংবা যাচ্ছে।
ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মতো সনাতনি মিডিয়াগুলো বিপাকে পড়েছে সে কথা বলাই বাহুল্য। সন্ধ্যার বুলেটিনে সব খবর জানা যাবে কিংবা কাল সকালে দরজার নিচে ঠেলে দেওয়া হবে আজ কি ঘটেছে তার সব ছাপা কপি এই ধারনা থেকে বের হয়ে যেতে শুরু করেছেন পাঠক। কারণ এখন প্রায় সব সংবাদমাধ্যমই তাদের ওয়েব সাইটে ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে। ফলে সংবাদচক্রটি আজ হয়ে উঠেছে ২৪ ঘণ্টার আর সাত দিনের (২৪/৭)।
মিডিয়ার ধরন যখন পাল্টাচ্ছে- সাংবাদিকদের পাল্টে যেতে হবে এর সাথে সাথে। নিদেজের মুদ্রণ সাংবাদিক বা সম্প্রচার সাংবাদিক করে না রেখে তাদের হয়ে উঠতে হচ্ছে- সময়ের সাংবাদিক। তাদের এখন একসাথে মুদ্রণের জন্য খবর, অনলাইনের খবর আর মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সম্প্রচার মাধ্যমের খবর পরিবেশনায় সমান দক্ষ হয়ে উঠতে হচ্ছে।
তবে সাংবাদিকের কাজের এই ধরনটি যখন পাল্টাচ্ছে, তখন মৌলিক বিষয়গুলো কিন্তু সেই আগের মতোই থেকে যাচ্ছে। সাংবাদিককে আজও তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে, তুলে ধরতে হচ্ছে তা খবরের আদলে। আর তাদের যে চিন্তার যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, তা আগেও ছিলো এখনো আছে।
সাংবাদিকের কাজের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো হচ্ছে তাদের নোটপ্যাড, টেপ রেকর্ডার, ডিজিটাল ক্যামকোর্ডার, কম্পিউটার আর সর্বোপরি লেখার হাত। আরেকটি অন্যতম উপাদান মেধা। আমরা সবাই জানি, সর্বসাধারনের জন্য লেখেন একজন সাংবাদিক, এ অবস্থায় তাকে তথ্যের রাজ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে এনে গল্প সাজাতে হয়।
এ জন্য তাদের তিনটি কাজই করতে হয়, প্রশ্ন করা, প্রশ্ন করা আর প্রশ্ন করা।
ওই যে বলা হয়- সাংবাদিকতা হচ্ছে প্রশ্নের পেশা। তাই কী ঘটেছে? কে ঘটিয়েছে? কেনোটি গুরুত্বপূর্ণ? কেনো গুরুত্বপূর্ণ? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করে আনাই একটি ভালো স্টোরি লেখার সেরা পথ। সুতরাং চিন্তা করতে শেখাই সাংবাদিকের বড় কাজ।
পাশাপাশি তাদের আরেকটি কাজ শিখতে হয়, তা হচ্ছে- ঠিক কিভাবে আরও বেশি বেশি শেখা যায়।
কেবল যে গণমাধ্যই পাল্টে যাচ্ছে তা নয়। গোটা কাজের বিশ্বেই আসছে পরিবর্তন। মানুষ ক্রমেই আরও বেশি বেশি হারে বহুকাজের কাজি হয়ে উঠছে। তাদের অনেক প্রকল্প, অনেক অগ্রাধিকার, অনেক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে হয়। আর সে কাজে সদাই দেখাতে হয় যথার্থ দক্ষতা।
আজ যারা কাজের জগতে ঢুকছেন তাদের ২০৫০ সাল অবদি এই জগতে টিকে থাকতে হবে। আজকের তরুণ সাংবাদিককে একটি বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে হবে, আগামী দিনগুলোতে তাদের এমন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যা এখন চিন্তাও করা হয়নি। তাদের নতুন করে শিখতে হবে।
এ অবস্থায় সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে আর পেশায় টিকে থাকতে আরও কতিপয় বিষয় জানা জরুরি।