<< আগের অংশ
প্রথমেই বলি, এখানে দৃষ্টিভঙ্গিটাই সবকিছু। কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে মোটামুটি আধা-বিদ্যান, আধা-বিচক্ষণ আর কলেজ অবধি অধ্যায়ন শেষ করলেই কাজ মিলে যায়।
ভাবনা যদি এই হয়, কলেজের পাট চুকিয়ে সরাসরি দেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমের আন্তর্জাতিক ডেস্কে গিয়ে বসে যাবেন... কিংবা হয়ে যাবেন স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট, রাজনীতি কিংবা কূটনীতি বিষয়ের রিপোর্টার, তাহলে বলতে হবে আপনি মোহে আচ্ছন্ন। এমন একটা কাজের জন্য পরিশ্রম যেমন প্রয়োজন তেমনি থাকতে হবে নিষ্ঠা। বছরের পর বছর ছোট ছোট সংবাদমাধ্যমে সামান্য আয়ে কাজ করে তবেই আপনাকে পরের ধাপে পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে আরও সামনে গিয়ে আর তারপর আরও সামনে নিজের প্রত্যাশার স্থানটি হয়তো মিলবে।
অনেক ক্ষেত্রেতো এমনও দেখা গেছে, স্রেফ এন্ট্রি লেভেলে কাজ পাওয়ার আগে ইন্টার্নশিপেও কেটে যায় কয়েক বছর। আর একটা ভালো কাজ পেতে ডজন খানেক বায়োডাটা ড্রপ করাতো লাগতেই পারে।
এসবে যদি আপনার মন না মানে তাহলে সাংবাদিক হওয়ার ভাবনা থেকে পাশ কাটিয়ে দাঁড়ান। প্রতিবছর সারা দেশের পাবলিক আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত হাজার খানেক গ্রাজুয়েট বের হয়ে আসেন, তাদের মধ্যে যারা এমনটা মোকাবেলায় নিজেদের প্রস্তুত করেছেন তাদের এগিয়ে আসতে দিন।
তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা খুশিমনে এই পরিশ্রমটুকু মেনে নেবেন, নিজের মেধাকে শানিয়ে নিয়ে তবেই তারা বড় কিছু হবেন।
সাংবাদিকতাকে আসলে দেখতে হবে কাজ হিসেবে, চাকরি হিসেবে নয়। সাংবাদিকতার চেয়ে সহজ আর বেশি মাইনের চাকরি আরও অনেক রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর প্রায় সবগুলোই চাকরি, তাতে আপনি সত্যের উদঘাটন, সঙ্কটের বিশ্লেষণ, বিপদের ব্যাখ্যা, অজানা তথ্য জানানোর সুযোগ পাবেন না। আর সেগুলোই সাংবাদিকতাকে আলাদা করে রেখেছে।
আরও বড় কথা হচ্ছে- সাংবাদিকতায় আপনি আনন্দ পাবেন, আর এখানে পুরুষ্কৃত হওয়ার সুযোগটাও অনেক বেশি।
তবে সে সুযোগগুলো আর আনন্দটুকু নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে। এখানে দৃষ্টিভঙ্গিটাই হয়ে থাকবে বড় বিষয়। কোনটাকে আপনি পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করবেন, কোনটাকে নয় সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
“অপেক্ষাকৃত কঠিন, পরিশ্রমের অ্যাসাইনমেন্টটি যখন আপনাকে দেওয়া হয়- সেটিও আপনার জন্য একটি পুরস্কার। ” বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন এভাবেই বলেন।
এর মানে হচ্ছে, এই আপনাকে ভেবে নিতে হবে- আমাকেই সম্পাদক এই কাজের যোগ্য মনে করেছেন। আমিই দলের মধ্যে অন্যতম যে এই কাজটি করার জন্য সম্পাদকের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আর সেটাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
অব্যাহতভাবে দক্ষতা বাড়িয়ে যাওয়াও একটি প্রধানতম কাজ। নিজেকে যদি নিজেরই পছন্দের কোনও অবস্থানে দেখতে চান, প্রতিযোগীদের মধ্যে যদি নিজেকে ব্যতিক্রমীভাবে তুলে ধরতে চান কিংবা হতে চান বড় কিছু... আপনাকে একটা কাজই করে যেতে হবে তা হচ্ছে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়িয়ে চলা।
আপনি খুব ভালো লিখতে পারেন...কেবল তাতে চলবে না। এমন তথ্যও রয়েছে- পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিককেও ছাঁটাই করা হয়েছে।
সুতরাং সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে হলে আপনাকে আসলে প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব প্রয়োজন মাফিক কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর এই সময়ের জন্য তা কিন্তু স্রেফ মাল্টিমিডিয়ার দক্ষতা। এখন যে কোনও সংবাদমাধ্যমেই আপনি কাজ নিন না কেনো, সাংবাদিকতা পেশায় ঢোকা মানেই আপনার অনলাইনে কাজের দক্ষতা থাকতে হবে।
এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার ডিগ্রি নিচ্ছেন তাদের জন্য এই নতুন মিডিয়া সম্পর্কে ধারনা নিয়ে, এতে কাজ করার দক্ষতা নিয়েই কর্মজগতে ঢুকতে হবে। এ অবস্থায় নিজের দক্ষতা নিজেকেই বাড়াতে হবে। কেউ আপনাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেবে না। আর নিয়োগকর্তারা আপনার সেই বাড়তি দক্ষতাটুকুতেই বেশি আকৃষ্ট হবেন। আপনাকেই তারা বেছে নেবেন কাজের জন্য।
সুতরাং এখনই একটি ওয়েব ডিজাইন কোর্স করে ফেলুন কিংবা ওয়েবসাইট তৈরির বইগুলোর একটা কিনে নিন। আইটি কঠিন, তবে এর একটা দারুণ দিক হচ্ছে- ঘাঁটাঘাটি করে নিজেই শিখে ফেলা যায়। বলা হয় কম্পিউটার একটি পথ-নির্দেশক। সে নিজেই ধাপে ধাপে এর ব্যবহারকারীকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
একটা ডিজিটাল ক্যামকর্ডারও কিনে ফেলুন- যার দাম একটা আইফোনের চেয়েও কম। কম্পিউটারে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার নিয়ে নিন। ম্যাক হলে আইমুভি আর স্বাভাবিক পিসি হলে মুভিমেকার আপনার কম্পিউটারে থাকাই উচিত। আর এগুলো যখন ঘাঁটাঘাটি করতে থাকবেন, আপনার দক্ষতা ও এই কাজে আপনার হাত পাকা হবেই। আর বড় কথা কি জানেন, ঠিত যতটা ভাবছেন ততটা ভয়ের কিংবা কঠিন কিন্তু নয় এই কাজগুলো।