ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

এমন চৌর্যবৃত্তি গোটা সাংবাদিকতার লজ্জা!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
এমন চৌর্যবৃত্তি গোটা সাংবাদিকতার লজ্জা! সাংবাদিকতায় কাট-পেস্ট নিষিদ্ধ

ওয়াইজমেন থিংক অ্যালাইক... এই আপ্তবাক্য অন্তত এদের ক্ষেত্রে খাটে না। পাশের ছবিটির সংবাদ শিরোনামগুলো দেখুন একটির সঙ্গে অপরটির পার্থক্য নেই। ধারণা করার কোনও কারণ নেই এই সংবাদমাধ্যমগুলোর কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচিতে হাজির থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে তবেই এই রিপোর্ট লিখেছেন। আর সবার লেখাই একই রকম হয়েছে।

মূলত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ছাড়া এই তালিকার আর কারোই প্রধানমন্ত্রীর খবর সরাসরি সংগ্রহের সুযোগ নেই। তাহলে তারা কোথায় পেলেন এই খবর? স্রেফ কাট-পেষ্ট।

স্রেফ চুরি। প্রতিদিন কনটেন্ট চুরি করে চলে এসব ওয়েবসাইট।

প্রিয় পাঠক বাংলানিউজের এই লিংকটি খুলে পড়ে ফেলুন। http://www.banglanews24.com/national/news/bd/544366.details

কাট-পেস্ট সাংবাদিকতার নমুনাএবার ভোরের পাতা নামের ওয়েব সাইটটির কনটেন্ট দেখুন (নিচের ছবিতে) যতটুকু তুলে ধরা হলো তাতে বাংলানিউজের কনটেন্টের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। মূলত বাংলানিউজের ইন্ট্রো থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই স্রেফ কপি পেস্ট করা হয়েছে এখানে। এমনকি বাংলানিউজের নিজস্ব স্টাইলও হয়ে গেছে তাদের স্টাইল। তারিখের ব্যবহারে বাংলানিউজের নিজস্ব স্টাইল এমন- রোববার (০১ জানুয়ারি)। ঠিক সেভাবেই প্রকাশিত হয়েছে ভোরের পাতায়। এখানে পাঠক নিশ্চয়ই একটি বিষয় লক্ষ্য করছেন উপরে এই সংবাদপত্রটি ডেটলাইনে তারিখ লেখার সময় লেখে ‘রবিবার ০১ জানুয়ারী’। অথচ কাট পেস্ট করার সময় নিজেদের রবিবার হয়ে যাচ্ছে রোববার আর জানুয়ারী হয়ে যাচ্ছে জানুয়ারি সেদিকেও খেয়াল নেই।

তাওতো ভোরের পাতার কিছুটা লজ্জ্বাবোধ রয়েছে, নিউজটিকে ‘নিজস্ব প্রতিবেদক’ নামে প্রকাশ করেছে। কিন্তু একই কাণ্ড ঘটিয়ে বিডিটাইমস২৪ এই খবর হুবহু প্রকাশ করেছে রাজিব রজব নামে জনৈকের বাইলাইনে।

আহা! কাট-পেস্টে সে কি কষ্ট! যা এই সাংবাদিক করেছেন। অতএব খবরটি তার বাইলাইন হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

পিটিবিনিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে এখানে আবার একজন সম্পাদনা করে খবরটি একটু ওলট-পালট করেছেন। রাজু আহমেদ নামের এই সম্পাদনাকারীর হাতে হয়তো সময় কম ছিলো তাই পুরো খবরেই চৌর্য্যবৃত্তির সকল নজির রেখে গেছেন।
কাট-পেস্ট সাংবাদিকতার নমুনা  

আরেকটি খবরের কথা বলি। বাংলানিউজের সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডলের লেখা ‘এখানে একদা যশোরেশ্বরী ছিলো!’ নিয়ে কী কাণ্ডটাই না হয়েছে। এটি চুরিতে সার্চ ইঞ্জিন প্রথমেই যে চোরকে সামনে এনেছে সেটি কেবল বাংলানিউজের কনটেন্টই চুরি করে না, নামটি পর্যন্ত নকল করেছে। এর নাম বাংলা নিউজ লাইভ।

সাফকানা.কম নামের একটি সাইট খুললে প্রথমেই আসে বাংলাদেশ নিউজ নামের একটি সাইট। এর কাজই হচ্ছে বাংলানিউজে কোনও একটি কনটেন্ট আপ হয়ে গেলে তা কপি পেস্ট করে নিজের সাইটে তুলে ধরা। মজার ব্যাপার হলো এরা কখনো কখনো মূল সাইটের খবরটি লিংক করে। ফলে সেখানে ক্লিক করলেই তা বাংলানিউজে চলে যায়। এই বাংলাদেশ নিউজ বাংলানিউজের কোনও অনুমতি না নিয়েই এই কাণ্ড করে চলেছে।

এগুলোতে পেছনের সারির কিছু অনলাইন। কিন্তু আমাদের সময়.কম’র তো কিছুটা হলেও নাম রয়েছে। এরা বাংলানিউজের ‘লিটন হত্যায় সাম্প্রদায়িক শক্তিকে চরম মূল্য দিতে হবে’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে বাংলানিউজের এই খবরটিকে কাট-কপি-পেস্ট করে সামান্য এদিক সেদিক করে প্রকাশ করেছে।

বাংলানিউজের খবর:
ঢাকা: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগপঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে সম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে এটা ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাপুরুষচিত কাজ। ধর্মীয় মৌলবাদী অপশক্তিকে এই কৃত অপরাধের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। রোববার (০১ জানুয়ারি) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আমাদেরসময়.কমের খবর:
এস.ইসলাম জয়: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগপঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে সম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে এটা ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাপুরুষচিত কাজ। ধর্মীয় মৌলবাদী অপশক্তিকে এই অপরাধের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদক মন্ডলির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলানিউজে খবরটি বেলা ১টা ৫৬ মিনিটে প্রকাশিত হয়। আমাদেরসময়.কম সেটি চুরি করে সন্ধ্যা ৭টা ০৪ মিনিটে। আর বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করা যায় সেটি চুরি করে সামান্য এদিক সেদিক করেই নিজের নামে তা প্রকাশ করে দিয়েছেন জনৈক এস ইসলাম জয়। এ যেনো- চুরি করারও কষ্ট আছে তারও একটা স্বীকৃতি থাকা চাই!

এই খবরটি বাংলানিউজ থেকে নকল করেছে দেশেরসংবাদ.কম, অমৃতবাজার.কম, বিডিপ্রেস.নেট, বাংলানিউজলাইভ, বাংলাদেশনিউজ, সময়েরকণ্ঠস্বর, বিডিবার্তা২৪.নেট।

এখানে একটি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর খবর কাভার করার সুযোগ এসব সংবাদমাধ্যমের নেই। তারা এমন কোনও না কোনও সংবাদমাধ্যম থেকেই খবরটি নেবেন যাদের সেই সুযোগ রয়েছে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম সেগুলোর একটি। কিন্তু সেটা করতে গেলে অবশ্যই ক্রেডিট দেওয়া প্রয়োজন। তার ধার কেউই ধরছেন না। আর কেউ কেউতো এক কাঠি সরেস হয়ে নিজের বাইলাইন স্টোরি করে ফেলছেন।

বিষয়টিতে বাংলানিউজ কিছুটা কঠোর অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন নববর্ষের শুরুতেই ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব সংবাদমাধ্যম বাংলানিউজের কনটেন্ট চুরি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।

এমন চৌর্যবৃত্তি গোটা সাংবাদিকতার লজ্জা। যা থেকে আমাদের বের হতেই হবে।

বাংলাদেশ সময় ১০২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।