অবশ্য ক্রিকেটারদের প্রেমের বিয়ে হয়েছে অনেক। এই আমাদের সাকিব আল হাসান আর শিশিরের ‘প্রেমঘর’ তো অনেক ভালবাসা যুগলেরও ঈর্ষার কারণ।
বাবা ফরিদের দরবারে গিয়ে বুশরা মানেকার সঙ্গে প্রণয় হয় পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার এবং বর্তমানের বিরোধীদলের রাজনীতিক ইমরান খানের। কিন্তু বাবা ফরিদের মাজারেইবা যেতে হলো কেন ইমরানকে? আর এই শেষ বয়সে বিয়ের রাজনীতি কী? এটা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। ইমরান বলছেন, ‘শান্তি আর সান্ত্বনা খুঁজতেই’ তিনি যেতেন বাবা ফরিদের মাজারে।
এককালের জনপ্রিয় ক্রিকেট অলরাউন্ডার ইমরান একসময় এসে রাজনীতিবিদে পরিণত হলেন। যিনি এক সময় ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মীর স্বামী ছিলেন, সেই ইমরানই এখন পুরো পয়সার উল্টো দিক। ইমরান খানের বর্তমান স্ত্রীকে বলা হচ্ছে তার ‘আধ্যাত্মিক পরামর্শদাতা’! মিডিয়ায় যে ছবি প্রকাশ হয়েছে, সেখানে ইমরান খানের পাশে বোরখা পরা এক নারী বসে আছেন। যার চোখ পর্যন্তও দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি লাহোরে ছোট্ট এক পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান বিয়ে করেছেন বুশরা মানেকাকে।
আশির দশকের শেষে এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ক্রিকেটাঙ্গনের ‘ক্রেজ’ ইমরান খান ক্রিকেটবিশ্বে সেরা অলরাউন্ডারের পাশাপাশি আরেকটি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ‘প্লে বয়’ হিসেবে। নিজ দেশ বা উপমহাদেশ নয় শুধু, পশ্চিমেও তরুণীদের মনে দাগ কেটেছিলেন ইমরান। ‘প্লে বয়’র এই তকমা কিন্তু রাজনীতিতে নেমেও যাচ্ছিল না ইমরানের গা থেকে।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দিকে পাকিস্তানের ক্রমেই ঝুঁকে পড়ার মুহূর্তে ধার্মিক এবং রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে হয়তো সেই অপবাদ ঘোচাতে চাইছেন ইমরান। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ৩৯ বছর বয়সী ইমরান খানকে সে সময় বলা হতো পাকিস্তানের সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাচেলর।
ইমরান তার ৬৫ বছরের জীবনে স্বর্ণকেশী ইংরেজ তরুণী জেমিমা গোল্ডস্মিথের পর পাকিস্তানের টিভি সাংবাদিক রেহাম খানের সঙ্গে ঘর বাঁধেন। সেই সংসার ভাঙার পর এবার তিনি ‘আধ্যাত্মিক পরামর্শক’ বুশরার সঙ্গে ঘর বাঁধলেন। পাকিস্তানের সেরা স্কুল কলেজে পড়াশোনার পর ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে সর্বোচ্চ পাঠ নেন ইমরান। তার আগের দু’টি বিয়ে আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে বেশ ঘটা করেই প্রকাশ করা হয়, বিশেষ করে ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ সমাজকর্মী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ের খবর। যে ঘরে তাদের সুলায়মান এবং কাশেম নামে দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে। ২০১১ সালে নিজের বইয়ে ইমরান লিখেছেন, ‘৯ বছর পর এই সংসার ভেঙে যায়। বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ৬ মাস এবং পরবর্তী ৬ মাস ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। ’ গণমাধ্যম জানায়, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জেমিমা সে সময় পাকিস্তানের সমাজের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না।
এরপর ২০১৫ সালে পাকিস্তানি টিভি সাংবাদিক রেহাম খানের সঙ্গে ইমরানের বিয়ে হয়। রেহামের সঙ্গে তার ১০ মাসের সংসারও ভেঙে যায়। তবে ইমরানের এই তৃতীয় বিয়ের খবর তার অনুসারী এবং দলীয় নেতাদের যেমন অবাক করেছে, তেমনি আনন্দিতও করেছে।
যেমন পিটিআই’র জ্যেষ্ঠ নেতা শিরীন মাজারি এক টুইটে বলেছেন, ‘অভিনন্দন আইকে (ইমরান খান)। আশা করি তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনে সুখি হবেন এবং সেরা সময়টা কাটাবেন। ’ তবে ইমরানের আরেক ভক্ত টিপ্পনী কেটে বলেছেন, তিনি মাঠের বাইরে বিবাহিত জীবনেও হ্যাটট্রিক করলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন যখন দরজার গোড়ায়, তখন ইমরানের এই তৃতীয় বিয়ের প্রভাব ফলেও পড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মারিয়া হায়দার বলেই বসেছেন, ‘আমিতো অবাক, তিনি কখন রাজনীতির জন্যে সময় পান! এখন তো দেখা যাচ্ছে, তিনি তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই ব্যস্ত। অথচ নির্বাচনের আগে এখন তিনি জনসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। ’
সম্প্রতি পাঞ্জাবের লোধরানের উপ-নির্বাচনে হেরে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে ইমরানের দল। বিশ্লেষকরা বলছেন, লোধরানের এই ফল পিটিআইয়ের নেতৃত্বের দুর্বলতার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। জর্জ স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষক আদনান রসুল বলেন, বর্তমানে দলটির প্রধান দু’টি অভাব হচ্ছে, দলের মধ্যে শৃঙ্খলা এবং স্থানীয় রাজনীতি বোঝার অভাব।
গত কয়েক বছরে ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যে অন্যতম প্রার্থী হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। ২০১৩ সালে খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাতীয়ভাবেও শক্তিশালী অবস্থায় পৌঁছেছে তার দল।
এরইমধ্যে আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যমকে পিটিআই জানিয়েছে, আগামী জুলাইতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হচ্ছেন ইমরান খান। এরই মধ্যে সমালোচনায় জর্জরিত করে নওয়াজ শরিফকে অনেকটাই পেছনে ফেলেছেন ইমরান। তিনি নিজেই বলছেন, এই বছর ক্ষমতায় আসার এটাই তার শ্রেষ্ঠ সময়।
গত জানুয়ারি থেকেই নাকি ইমরান খানের তৃতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে, কে এই বুশরা মানেকা? বুশরা মানেকার আরেক নাম বুশরা ওয়াত্তু। পাকিস্তানের গণমাধ্যম তাকে বুশরা বিবি বা ‘পিঙ্কি পীর’ নামেও অভিহিত করছে। পূর্ব পাঞ্জাবের রাজনৈতিক প্রতাপশালী এবং রক্ষণশীল পরিবার ওয়াত্তু থেকে এসেছেন বুশরা। তিনি লাহোর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে বাবা ফরিদগঞ্জ শাকরের মাজারের বাসিন্দা এবং অনুসারী।
আধ্যাত্মিক পরামর্শ এবং ধ্যানের জন্যে ২০১৫ সালের দিকে এই মাজারে যাওয়া-আসা শুরু করেন ইমরান খান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বুশরার আগের স্বামী ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুলাম ফরিস মানেকার ছেলে খাওয়ার ফরিদ মানেকা। সেই ঘরে তার তিন সন্তান এবং দুই মেয়ে রয়েছে, যাদের বিয়ে হয়েছে রাজনৈতিক পরিবারেই।
ইমরান বলছেন, নিজের রাজনীতি নিয়ে বুশরার কিছু ভবিষ্যদ্বাণী কাজ করায় তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তার আধ্যাত্মিক পরামর্শের ওপর ভরসা এনেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্ব পাঞ্জাবে নিজের রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানো ছাড়াও নিজামউদ্দিন আউলিয়ার গুরু বাবা ফরিদের বিপুলসংখ্যক ভক্তদের ভোটও হয়তো ইমরানের লক্ষ্য। এখন দেখা যাক, আসছে নির্বাচনে বুশরার আধ্যাত্মিক পরামর্শ কতটুকু কাজে লাগে বাস্তবের নির্বাচনে!
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
এমএন/এইচএ/