ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

তাঁর লড়াই অন্ধকার ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৮
তাঁর লড়াই অন্ধকার ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে

২০১৮ সালের মার্চ মাসটি ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে আলাদাভাবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য এই মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশে রক্তাক্ত হলেন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

যিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়-রাঙা পথের পথিক। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও কূপমণ্ডূকতামুক্ত আলোকিত বাংলাদেশের জন্য অকুতোভয়ে লড়াই করে চলছিলেন তিনি।

বরেণ্য লেখক ও বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি ও সমস্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার অধ্যাপক জাফর ইকবাল ব্যক্তিগতভাবে হামলার শিকার হয়ে এখন যে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, তা স্পষ্টতই ব্যক্তিগত কোনও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কারণে নয়। তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন মতাদর্শিক কারণে। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, কুসংস্কার ও কূপমণ্ডূকতা, যার মধ্যে র‌্যাগিংয়ের মতো অসভ্যতাও পড়ে, এসবের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি। তিনি লড়ছিলেন অন্ধকার ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে আলোর মশাল নিয়ে। তাঁর লড়াই কোনও ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর পক্ষে।

নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অনাচারের বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। প্রগতি ও মুক্তবুদ্ধির অনুসারী পুরো বাংলাদেশ তাঁর সমর্থক হলেও তাঁর গোপন শত্রু ও আদর্শিক প্রতিপক্ষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়! যারা তাঁকে আঘাত করেছে, তারা বাংলাদেশের ঘাপটি-মারা গণশত্রু।

মুক্তিযুদ্ধ-জয়ী বাংলাদেশে এতো বছর পরেও অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এবং অন্ধকারের অপশক্তির হাতে আলোর পথের যাত্রীদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। অধ্যাপক জাফর ইকবাল হলেন এমনই একজন আলোকবাহী, যিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁকে হত্যার চেষ্টায় হামলা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মহান স্মৃতির মাস মার্চে। কারা এমন দুঃসাহস দেখাতে পারে স্বাধীন বাংলাদেশে?

অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনা জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। । মিডিয়াগুলো প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্তব্য পালন করেনি। মোবাইলে কথা বলছিল নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের পাশেই দাঁড়ানো ছিল হামলাকারীরা। হামলার সময় প্রতিহত করা হয়নি হামলাকারীকে।

খুনের চেষ্টাকে বলা হয়েছে 'ছুরিকাঘাত'। এই শব্দের ব্যবহার খুবই প্যাসিভ, আঘাতকারীকে বাঁচানোর চেষ্টার মত ব্যাপার। যদিও তিনি খোদ প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপে উন্নত চিকিৎসা পেয়ে আপাতত আশঙ্কামুক্ত, তথাপি এই মুহূর্তে আমাদের নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো আরও জরুরিভাবে মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয়তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। স্বাধীন-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধি ও আলোর যাত্রীদের বিরুদ্ধে দানবীয় অপশক্তির হামলার ঘটনাকেও ছোট করে দেখা যায় না।

লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর ঘৃণ্য এই হামলার জন্য দায়ী কারা, র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃত কর্মীদের সমর্থক, নাকি জঙ্গি? এই হামলাকারীদের অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে এবং যথোপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

এরই মাঝে আটক হামলাকারীর প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে। আমরা আশা করি উপযুক্ত তদন্ত ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে হামলার প্রকৃত কারণ উন্মোচন করা হবে। আমরা এটাও আশা করি যে, সংশ্লিষ্ট সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করে ভবিষ্যতে মুক্তবুদ্ধির অনুসারীদের বিরুদ্ধে এহেন বর্বর হামলার পথ রুদ্ধ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এমপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।