কয়েকবছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দেশের বোরো ফসল। এতে অভাব-অনটনের পুরো কবলেই আছে কৃষক সমাজ।
আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পেতে এবার বোরো মৌসুম শুরু হয়েছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় কমপক্ষে ১৫ দিন আগে। বীজতলা থেকে শুরু করে ধানের চারা রোপণ, পরিচর্যাসহ সবকিছুই আগে আগে সম্পন্ন হয়। এখন ধান কাটাও শুরু হলো। আবার অভাবের টান সইতে না পেরে অনেকেই নতুন ধান সস্তা দরে বিক্রিও করে দিচ্ছেন। তাছাড়া যাদের ঘরে চালের সঙ্কট ছিল, মিলে চাল করে খাওয়াও হয়ে গেছে তাদের।
সবকিছুর পরে কৃষকের মনে এখনো আনন্দ নেই। ধান তোলা পর্যন্ত তাদের চিন্তা থাকবে, কখন কি হয় দুর্যোগে। তাদের মধ্যে আতঙ্ক, ভালোভাবে সব ধান ওঠবে তো গোলায়! কয়েকবছরের ধারাবাহিক বড় ক্ষতির মুখে পড়ে হতাশায় কৃষকের মধ্যে এ আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টদের মতামত। তবে এ বছরও যে ক্ষতি হয়নি তা নয়। সম্প্রতি শিলাবৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
এদিকে, বাড়তে শুরু করেছে দেশের তাপমাত্রা। কম-বেশি শিলাবৃষ্টিও হচ্ছে। বৈশাখীর এ মৌসুমেও শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রপাতের আশঙ্কা বিগত বছরের চেয়ে বেশি বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে, অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার অধিক পরিমাণ শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রসহ ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুইটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে অন্তত একটি। মে মাসেও এ আশঙ্কা রয়েছে।
প্রকৃতির এমন বিরূপ অবস্থার কারণ হিসেবে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক তারতম্যকেই দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মূলত এপ্রিল থেকে মে মাস কালবৈশাখীর মৌসুম। এসময়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ঝড়-শিলাবৃষ্টি হবে। এসময়ে প্রচুর বজ্রপাতও হবে। ঝড়-বৃষ্টির সময় মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঋণ করে জমিতে ফসল ফলিয়েছেন এবার অনেক কৃষক। তাছাড়া বলতে গেলে ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝে তারা ভয় পাচ্ছেন। কখন জানি তাদের স্বপ্নের ফসল ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তাই তাদের মনোবাসনা, সব দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে ভালোয় ভালোয় যেনো সোনার ধান উঠাতে পারেন গোলায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
টিএ