(১) বিএনপি, (২) যুদ্ধাপরাধী জামায়াত, (৩) বঙ্গবন্ধু’র ঘাতক আর (৪) জঙ্গি- একই সুতায় গাঁথা। এই সব অপশক্তি এক হয়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণ করেছিল ২১ আগস্টে।
২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ের ঠিক আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, মামলার তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়নি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমান এবং বিএনপির নেতাদের জড়ানো হয়েছে। মির্জা ফখরুল যে একথা বলবেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বলেছেন যখন তখন কিছু প্রশ্ন চলে আসেই।
গ্রেনেড হামলা যখন হয়, তখন বিএনপিই ক্ষমতায় ছিল, মির্জা ফখরুলরাই ছিলেন সরকার। সুষ্ঠু তদন্ত তখন করা হলো না কেন? জজ মিয়াকে দোষী সাজিয়ে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করলেন কেন? বিদেশি চরের কাল্পনিক গল্প আপনারা বলেছেন, জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এ ন্যাক্কারজনক হামলা নিয়ে রসিকতা আপনারা করেছেন। যেসব কথা এখন বলছেন, সেসব তখন মনে ছিল না?
সুষ্ঠু তদন্ত আওয়ামী লীগের সময়েই হয়েছে, আর অপরাধীদের নাম তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ইচ্ছা থাকলে এত সময় ক্ষেপণ করে মামলা চালানো হতো না।
মির্জা ফখরুলের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আজ এ প্রশ্নও করার প্রয়োজন হয়েছে যে বিএনপি আসলেই একটি রাজনৈতিক দল কি না। সংবাদ মাধ্যমে মুফতি হান্নান যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে উঠে আসা নামগুলো দেখলেই এ প্রশ্নের যৌক্তিকতা বোঝা যায়। গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতির জন্য মিটিং হয়েছিল কোথায়? তারেক রহমানের হাওয়া ভবনে। মিটিংয়ে কারা ছিল? খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা ও তথ্য উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু। আর কে ছিল? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী নূর চৌধুরী। আর কে ছিল? জামায়াতে ইসলামের নেতা যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। আরো ছিল দুই জঙ্গি সংগঠন হুজি আর আল মারকাজুল ইসলামীর নেতারা। মুফতি হান্নানই জানিয়েছে তারেক রহমানের জড়িত থাকার কথা। তাহলে একথা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে বিএনপি, জামায়াত আর জঙ্গিবাদ একই চক্রের বিভিন্ন অঙ্গ মাত্র। এদের উদ্দেশ্য একই এবং সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের এক একটি স্তরে এক একটি পক্ষ কাজ করে। কেউ পরিকল্পনা করে, কেউ ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, কেউ বাস্তবায়ন করে। পঁচাত্তরের পর থেকে তাই করে এসেছে এরা। ইতিহাস বিকৃতি, রাজনীতিতে মেধার অপসারণ এবং অস্ত্রের ব্যবহার চালু করেছে এরাই।
এ যে 'আনহলি ট্রিনিটি', এরাই প্রগতিশীল উদারপন্থী রাজনীতির প্রকৃত শত্রু। বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে এই নেক্সাসটিকে ভাঙতে হবে। তাদের সব অপরাধের বিচার করে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, রায় এবং সাজাও কার্যকর হয়েছে অনেকগুলোর। জঙ্গিদের বিচার হচ্ছে। এবার ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের মাধ্যমে রাজনীতির অশুভ উপাদানকে বিতাড়নের পথ আরো সুগম হবে।
লেখক: প্রফেসর মোহাম্মদ এ আরাফাত, চেয়ারম্যান সুচিন্তা ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
এসএইচ