ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও লক্ষ্যে পৌঁছাবে আওয়ামী লীগ

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৯
ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও লক্ষ্যে পৌঁছাবে আওয়ামী লীগ

২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে ঘরে-বাইরে। দলটিতে গত ১০ বছরে সুবিধাভোগী অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘাপটি মেরে থাকা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। এই চক্রটি বারবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কৌশলে লেগে আছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযান ব্যর্থ করতে নানা ষড়যন্ত্র থাকলেও লক্ষ্যে পৌঁছাবে আওয়ামী লীগ। দেশের সাধারণ মানুষ এ শুদ্ধি অভিযানকে সমর্থন দিয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া প্রভাবশালীরা ধরা পড়ছে একের পর এক। এতে অস্তিত্ব সংকটে থাকা রাঘববোয়ালরা পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় পেঁয়াজের দাম নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি আর মানুষের ভোগান্তির শেষ হতে না হতেই চালের দাম বৃদ্ধি করা নিয়ে শুরু হয় অপতৎপরতা। এর মধ্যে দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয় লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব। একইসঙ্গে ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি তুলে কতিপয় পরিবহন মালিক-শ্রমিককে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। যা মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানির ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। বাকি পেঁয়াজ আসে মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক থেকে। পণ্যটি পচনশীল হওয়ায় কম সময়ের মধ্যে বাজারে ছাড়ার জন্য কাছের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে পরিবহন খরচও অনেক কম পড়ে। সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের মজুদ ও দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হলে ব্যবসায়ীদের মজুদ করা শত শত বস্তা পচা পেঁয়াজ ফেলে দেওয়া হয় নদীতে-ভাগাড়ে।

এদিকে সরকারিভাবে চাল-গম মিলে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিকটন মজুদ থাকা এবং সরকারি গোডাউনে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৭৪ টন চাল এবং ৬ লাখ মেট্রিকটন লবণ মজুদ থাকার পরও নিত্যপণ্যের বাজারে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতাকে ভালোভাবে দেখছেন না সরকারের নীতিনির্ধারকরা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খুঁজে দেখছে- এর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে কারা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো দল যখন টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকে, তখন নেতা-কর্মীরা সুযোগ সুবিধা নেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারও হয়। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও বসে নেই সুযোগসন্ধানীরা। তারাই আওয়ামীলীগার সেজে এখন মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে সেলফিবাজি করছে, ইন্ধন যোগাচ্ছে সহিংসতা ও অস্থিরতায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার নেপথ্যে কারা ছিল, তা উদঘাটনে কমিশন করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি দলের ভেতর শুদ্ধি অভিযান আরও জোরদার করে এবং তৃণমূলে থাকা ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করে দল কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে। অবশ্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।

২০২০ সালে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।  ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালন করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন, তার আগেই আওয়ামী লীগ দল ও সরকারে একটি শক্ত অবস্থানে গিয়ে পৌঁছাতে পারে, এটাই দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৯

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।