ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

যত দোষ সম্রাটের বাকি সবাই ধোয়া তুলসী

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
যত দোষ সম্রাটের বাকি সবাই ধোয়া তুলসী

আজকের লেখা শুরু করছি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে। নতুন কমিটিতে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। অনেকে বলছেন, নতুন বোতলে পুরনো মদ। কেউ বলছেন, কারও পদোন্নতি হয়েছে। বাকিরা বহাল। তবে নতুন একজনকে চোখে পড়েছে। তিনি শাজাহান খান। প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন। সবাইকে অভিনন্দন।

ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ দীর্ঘ পথ পরিক্রমার এই দলটি এখন সুসময় অতিক্রম করছে। আবার দেখেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর নিষ্ঠুর রাজনীতির নেতিবাচক কঠোরতম সময়ও।

ইতিহাস বলে, ক্ষমতা ও পদপদবি ক্ষণস্থায়ী। আজ আছে কাল নেই। কিন্তু অবস্থান পাওয়ার পর কেউ তা মনে রাখে না। রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে একরকম। বিরোধী দলে আরেকরকম। এই ছোট্ট জীবনে দেখেছি বিরোধী দলের চেনা মানুষগুলো ক্ষমতার মসনদে এসে সব ভুলে যায়। তারা অনেক কিছু মনে রাখতে পারেন না। নতুনকে ঘিরেই সামনে চলেন।

এই পথচলায় আওয়ামী লীগের এই তিন মেয়াদে ক্ষমতার অনেক বছর চলে গেছে। ২০০৮ সালে জন্ম নেওয়া শিশুটির বয়স এখন ১২ বছর। আর ছয় বছর পর এই শিশু নিজেকে পরিপূর্ণ যুবক মনে করবে। চোখের সামনের ঘটনাগুলোই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর ২০০৯ সালে যার বয়স ১০ বছর ছিল আজ সে পরিপূর্ণ যুবক। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে। অতীত নয়, তার চোখের সামনের বর্তমানই গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে মনে রেখেই আগামীর রাজনীতি পরিচালিত হবে। বর্তমান কমিটি নতুন প্রজন্মের সেই চ্যালেঞ্জ কতটা অনুধাবন করতে পারবে সময় বলে দেবে। আগাম কিছু বলতে চাই না। সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে।

পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। শুনতে হয়। অনেক ধরনের মানুষ আসেন। অনেকে ফোন করেন। সব ফোন ধরা হয় না। সেদিন ছাত্রলীগের এক নেতা এলেন অফিসে। বললেন, ভাই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতে চাই। বললাম, বল, সমস্যা নেই। ছেলেটি এবার বলল, সম্রাট ভাইকে দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। সাধারণ ওয়ার্ডে তাকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। জেলখানায়ও থাকেন সাধারণ কয়েদির মাঝে। দীর্ঘদিন রিমান্ডে ছিলেন। শরীর-মন ভেঙে গেছে। আমি বললাম, সমস্যা কী? অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। আইন সবার জন্য সমান। সম্রাট হোক আর সাধারণ প্রজা হোক, সবাইকে এক চোখে দেখাই আইনের কাজ।

ছেলেটি এবার বলল, অপরাধ করলে শাস্তি পাবে ঠিক আছে। আপনার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করছি না। কিন্তু ইসমাইল হোসেন সম্রাট ছিলেন যুবলীগের নগর সভাপতি। দল বিরোধী দলে থাকার সময়ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ছাত্রলীগেরও নেতা ছিলেন। সেই সম্রাটকে কেন পদপদবি দিয়ে সামনে আনা হলো? উত্তর দিতে পারলাম না। ছেলেটি আবার বলল, তখন হয়তো রাজপথের জন্য প্রয়োজন ছিল। এখন অন্য হিসাব। দল সরকারে আসার পর ক্যাসিনো কান্ড তো এক দিনে হয়নি। কেন্দ্রীয় যুবলীগের কমিটি বেচাকেনাও হঠাৎ হয়নি। দীর্ঘ সময় লেগেছে। দল কি তা টের পায়নি? পেলে কেন ব্যবস্থা নিল না? আর সম্রাটদের যারা সৃষ্টি করেছেন তাদের কি বিচারের আওতায় আনা হবে? নাকি তারা সবাই ধোয়া তুলসী পাতা?

গত ১০ বছর ঢাকায় বড় বড় শোডাউনের নেতৃত্বে সম্রাটকে কেন প্রশ্রয় দেওয়া হতো? ছেলেটির দিকে তাকালাম। বুঝতে চাইলাম কী বলতে চাইছে। সে আবার বলল, সম্রাটরা বিরোধী দলে থাকতে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে আনতেও অনেক খারাপ কাজ করে। পুলিশের খাতায়ও তাদের নাম আসে নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে। দল সরকারে এলে তারকা নেতাদের পাল্লায় পড়ে সম্রাটরা ক্যাসিনো কান্ড ঘটায়। ভাগবাটোয়ারা পাঠায় নেতাদের। শুধু মাসিক বখরা না, ভোটের সময়ও অনেক সিনিয়র নেতা সম্রাটের কাছ থেকে খরচ নিয়েছেন। বিস্ময় চোখ নিয়ে তাকালাম! বলে কী। ছেলেটি বলল, শুনেছি কমপক্ষে ৬০ নেতাকে সম্রাট ভোটের সময় খরচ পাঠিয়েছেন। এর মাঝে ভালো ইমেজের নেতাই বেশি। অনেকে এখন প্রভাবশালী সুশীল মন্ত্রী। এ ছাড়া আরেক দল নেতা নিয়মিত ক্যাসিনোপাড়া থেকে অর্থ নিতেন। এসব কথা শুনতে ভালো লাগল না। ছেলেটিকে বিদায় দিলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

আমাদের রাজনীতি সম্রাটদের তৈরি করে। সময়মতো রাজনীতিবিদরা সরে পড়েন। ছুড়ে ফেলে দেওয়া সম্রাটদের ঠিকানা হয় কারাগার। সব দায় গিয়ে পড়ে সম্রাটদের ওপর। বাকিরা থাকেন ধোয়া তুলসী পাতা হিসেবে। এবার ক্রীড়াঙ্গনের অপরাধীরা চিহ্নিত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। অবশ্যই ইতিবাচক খবর। কিন্তু দেশের অর্থনীতির বড় লুটেরাদের কী হবে? ধরাছোঁয়ার বাইরে ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের গডফাদার আর মাফিয়ারা। প্রশ্ন উঠে আসে, ব্যাংকিং খাতের খলনায়করা কেন ঘুরে বেড়াবে? শেয়ারবাজারের লুটেরাদের কেন বিচার হবে না? সরকারি প্রতিষ্ঠানকে লুটের মাল বানানোর কারিগর আমলাদের হিসাব-নিকাশ কে নেবে? তাদের পাচার করা বিশাল অর্থবিত্ত কি ফিরিয়ে আনা হবে? নাকি দুর্নীতিবাজ আমলারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকবেন? টেন্ডার বাণিজ্য কারা করে কারও অজানা নয়। উন্নয়নকাজ না করে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটকারী ঠিকাদার, সরকারি কর্মকর্তাদের সবাই চেনে। রাজনীতির আশ্রয় না থাকলে অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব না।

জনগণের অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনতে হবে। ব্যাংকের লাখ হাজার কোটি লুটের শীর্ষ খলনায়কদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এখন নিরীহ জুনিয়র ব্যাংক কর্মকর্তারা অকারণে জেল খাটেন। এমডি-চেয়ারম্যানদের কিছু হয় না। আড়ালের নির্দেশদাতাও থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঋণের নামে ব্যাংকের টাকা লুটকারীরও কিছু হয় না। সবাই চলেন দাপট নিয়ে। আর নন্দঘোষেরা দোষ বয়ে বেড়ায়। এভাবে হয় না। লুটেরাদের বিরুদ্ধে মানুষ কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চায়। রাষ্ট্র ও সরকারের অর্থসম্পদ লুটকারীদের কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। লুটেরাদের হাসিমুখের ছবি টিভিতে দেখতে কারও ভালো লাগে না। মানুষ কথার ফুলঝুরি নয়, বাস্তব অ্যাকশন দেখতে চায়।

বুঝতে হবে জনমতকে দীর্ঘ সময় এড়িয়ে চলা যায় না। সবকিছুতে অতিষ্ঠ হয়ে জনমত জেগে উঠলে সমস্যা। সংসদে বিরোধী দল নেই বলে কোনো কিছু হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। দিল্লিতে এ মাসের শুরুতে এক শীতের সকালে আড্ডা দিচ্ছিলাম এ উপমহাদেশের বিখ্যাত সাংবাদিক ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে। তার বাসভবনের খোলা লনে গরম চায়ের কাপে ঝড় তুলছিলাম দুজন।

কথায় কথায় তিনি বললেন, যেকোনো রাষ্ট্র ও সমাজের ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের দরকার আছে। প্রয়োজন স্বাধীন মিডিয়ারও। আর তা না থাকলে জনগণই হঠাৎ প্রতিপক্ষ হয়ে বিরোধী হিসেবে ভূমিকা নিয়ে নেয়। আমিও মনে করি, সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থ হলো সবাইকে নিয়ে চলা। সবকিছুতে জগাখিচুড়ি পাকানো নয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে অতি উৎসাহীদের কর্মকান্ড ভয় ধরিয়ে দেয়। অতি উৎসাহীরা দুঃসময়ে থাকে না। ওরা সময়মতো কেটে পড়ে। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সজল চোখে এই সত্যটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এত বড় একটা ঘটনা বাংলাদেশে কোনো লোক জানতে পারল না! কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না! ওই লাশ পড়ে থাকল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে! কেন? সেই উত্তর এখনো আমি পাইনি। এত বড় সংগঠন, এত নেতা, কোথায় ছিল তখন? মাঝেমধ্যে আমার জানতে ইচ্ছা করে, কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে পারল না? বাংলার সাধারণ মানুষ তো বঙ্গবন্ধু মুজিবের সঙ্গে ছিল। ’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঠিক বলেছেন। তার সঙ্গে শতভাগ একমত। সেদিন শুধু রাজনীতিবিদ নন, প্রশাসনেরও কেউ আসেননি। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিডিআর, রক্ষীবাহিনী কাউকে দেশবাসী দেখেনি। অনেকে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন খুনি চক্রের সঙ্গে। শপথ অনুষ্ঠানে গেছেন হাসিমুখে। শুধু নীরবে সাধারণ মানুষের চোখে ছিল অশ্রু।

বড় হতভাগা জাতি আমরা। জাতির জনকের লাশ ফেলে ঘাতকদের পক্ষে যোগদানকারীদেরও দাপটের শেষ নেই। সবাই এখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুখে ফেনা তুলছেন। কান্নাকাটি করে হুলুস্থুল কান্ডকীর্তি ঘটাচ্ছেন। ২০০১ সালে ভোটের বিপর্যয়ের পর কাছ থেকে অনেক কিছু দেখেছি। এখনকার কান্নাকাটির দল তখন ছিল না। তাদের দেখিনি। আগামীতে কোনো দুঃসময় এলে দেখব কিনা জানি না। ইতিহাস বলে সুবিধাভোগীরা থাকে না। এখনকার অতি কান্দুনেরাই সুবিধাভোগী। মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করে অনেকে আখের গোছাচ্ছে। সত্যিকারের যোদ্ধাদের খবরও নেই। এখনো ষড়যন্ত্র ঘাটে ঘাটে। ওয়ান-ইলেভেনের পর নেতাদের জবানবন্দি ইউটিউবে আছে। কেউ ভুলে গেলে দেখে নিতে পারেন। ভালো লাগে না কথা বলতে, লিখতে। ওরাই আজ শক্তিশালী।

আমাদেরও বয়স হচ্ছে। কাউকে খুশি করতে পারব না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাবাহিকতা দেখে যেতে চাই। তোষামোদকারী, চোরদের তোয়াজ করতে পারব না। খারাপ সময়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের কষ্ট হয়। বসন্তের কোকিলরা থাকে না। তখন কাদের সিদ্দিকীদের মাঠে নামতে হয় অস্ত্রহাতে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হয়। সুসময়ে দাপুটে হয় ভেজালরা। স্টান্ডবাজি করে বাজিমাত করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণই কিছু মানুষের মূল কাজ। কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি হয়। সমালোচনা সে হয় কাদের সিদ্দিকীর মতো অনেক যোদ্ধার।

কাদের সিদ্দিকীর রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা কেউ করতেই পারেন। আমিও করি। কিন্তু কী করে মুছে ফেলব এই বীর যোদ্ধার ’৭১? কী করে শেষ করে দেব ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সাহসী প্রতিবাদ? ইতিহাসকে কখনই মুছে ফেলা যায় না। ভারতীয় সেনারা কাদের সিদ্দিকীর মুক্তাঞ্চলে হেলিকপ্টার থেকে প্যারাস্যুট দিয়ে নেমে তাকে নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে এই ঢাকা শহরে প্রবেশ করেছিলেন। তাকে নিয়েই যোগ দেন পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে। এটাই ইতিহাস। যারা ’৭১ ও ’৭৫ সালে দেশপ্রেম দেখাতে পারেনি তাদের মুখে লম্বা লম্বা কথা শুনি। রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে করতে জীবনদানকারী আমার কাছে সবচেয়ে বড় শহীদ। আর জীবন-মৃত্যুর পরোয়া না করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে ময়দানে লড়াইকারীর চেয়ে বড় যোদ্ধা কেউ নেই।

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের এক আহ্বানেই সাড়া দিয়ে বীর যোদ্ধারা জীবন-মৃত্যুর পরোয়া করেননি। তাদের সাহসের নাম শেখ মুজিব। বুকে বাংলাদেশ। সেই যোদ্ধারা কী চান আমাদের কাছে? একটু সম্মান ছাড়া আমরাও বা কী দিতে পারি?

সব বিষয়ে রাজনীতির দরকার নেই। সত্যিকারের ইতিহাস আসুক না। সেদিন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে জামায়াতের অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন। তারা সরকারের বড় বড় পদে রয়েছেন, তাদের কথা বললে হয়তো আমাকে আর দেশে আসতে দেওয়া হবে না। রাজাকারের তালিকা প্রকাশের আগে এসব অনুপ্রবেশকারীর তালিকা প্রকাশের প্রয়োজন ছিল। জানি না কোনো রাজাকারের হাত দিয়েই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ হচ্ছে কিনা। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনাকে তারা সরিয়ে দিতে পারলে তাসের ঘরের মতো আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে।

একমত গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম ভাঙিয়ে অনেকে যা খুশি তা করছে। ভালোই আছে সুবিধাভোগীরা। আগাছা-পরগাছাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাই দিচ্ছেন। ক্ষমতা এখন অনেকের কাছে নষ্টামি, ভন্ডামি আর লুটের কাজকারবার। রাজনীতি চিরস্থায়ী ব্যবসার হাতিয়ার হতে পারে না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ক্ষমতায় না থাকলে অনেকে ঢাকা শহরে হাঁটতেও পারবেন না।

সবারই বোঝা উচিত, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা। এই ঠিকানাকে ধরে রাখার দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সব মানুষের। ’৭৫ সাল অনেক আগের ইতিহাস। ’৯১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অথবা ২০০১ সালের পর এখনকার কান্নাকাটির দলের কাউকে দেখিনি। হাইব্রিড ভাইবোনদের সুধাসদন, ধানমন্ডি ৩২, আর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হাঁটতে দেখিনি। এখন সবাই আওয়ামী লীগ! পুরো দেশটাই আওয়ামী লীগে থৈথৈ করছে। তাই আগের ইতিহাসগুলো গল্পের মতো। সত্যিকারের কাজ করা মানুষ এখনো দূর থেকে তামাশা দেখেন। নীরব কষ্টে বিস্মিত হন। হতাশ হন। হয়তো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, এই সুসময় যেন চিরকাল থাকে আওয়ামী লীগে। আর না থাকলে কী ঘটবে একবারও কল্পনা করতে চান না।

লেখক: সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।