ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বাস্থ্যবিভাগের পূর্ণ চিকিৎসা প্রয়োজন

লেলিন চৌধুরী, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
স্বাস্থ্যবিভাগের পূর্ণ চিকিৎসা প্রয়োজন

গত ৪ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা একটি প্রজ্ঞাপন নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটির তিনটি অংশ।

প্রথম অংশে বলা হয়েছে,  'করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের পরে দেশের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালসমূহে আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখার সদস্যগণ নানা বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। একটি হাসপাতালে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করায় তাদের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং এ কারণে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। ' 

দ্বিতীয় অংশে ‘একটি টাস্কফোর্স কমিটি’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এরপর ‘ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অপারেশন পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাথে পরামর্শক্রমে তা করা যাবে। ’

তৃতীয় অংশের মূল কথা- ‘এরূপ অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকা এবং জরুরি অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণবিভাগের সাথে সমন্বয়পূর্বক পরিচালনা করার জন্য করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। ’ 

করোনা সংকটকালে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতিসহ উদ্ভুত নানাবিধ বাস্তবতার কারণে প্রজ্ঞাপনটি তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রশ্ন হলো- হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা র‌্যাব-পুলিশের অভিযান কেন এবং কিভাবে হলো? মূলত এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ জনঅধিকারের বিষয় জড়িত। যেসব হাসপাতালে অভিযান পরিচালিত হয়েছে, সেসব স্থানে দুর্নীতি, টেস্ট জালিয়াতি ও অনিয়ম হচ্ছিলো। ভুক্তভোগী মানুষ অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিকারের জন্য অভিযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়েছে। তারা প্রতিকার প্রার্থী হয়েছে। ফলে অভিযান হয়েছে।  

হাসপাতালে দুর্নীতি বা অনিয়ম হলে মানুষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে না গিয়ে র‌্যাবের কাছে কেন যায়? মানুষের অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন অফিস বা দপ্তর আছে কি? যেসব দপ্তরে সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে গিয়ে তাদের অভিযোগ দাখিল করবে এবং নিশ্চিত থাকবে একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটার ফয়সালা হবে। কোন নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়ে থাকলে তার যথাযথ বিচার হবে এবং অপরাধী দণ্ডিত হবে। আমার জানা মতে দেশে এরকম কোন ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই। কাগজেকলমে আছে কিনা সেটাও আমার মতো সাধারণ মানুষের জানা নেই।

দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে সরকার নিজে হাসপাতাল ও নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। স্বাধীনতার পর দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রধানত রাষ্ট্রায়ত্ত ধারায় প্রবাহিত হচ্ছিলো। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দর্শনের পরিবর্তনের কারণে ক্রমশ বেসরকারি সেবাখাতের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। এটা শুরু হয় ১৯৮২ সালের ‘দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২’-এর মাধ্যমে। সেই থেকে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাত বিকশিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার এক-তৃতীয়াংশ সরকারি খাত এবং বাকি দুই-তৃতীয়াংশ বেসরকারি খাত দ্বারা পরিচালিত হয়।  

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো স্বাধীন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে বলে আমার জানা নেই। দেশের স্বাস্থ্য সেবার কতো ভাগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখা হবে এবং কতো ভাগ বেসরকারি ব্যবাস্থাপনায় প্রদান করা হবে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নীতিমালা বা ঘোষণা নেই। বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, তদারকি ইত্যাদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করে থাকে। কিন্তু বিশাল বেসরকারি খাতকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করার মতো সুসংগঠিত পরিকল্পনা, জনবল ও পেশাদারিত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেই। মূলত পেশাদারিত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোথাও নেই।  

পেশাদারিত্বের প্রশ্নটি কেন আসছে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে জনবলের নিয়োগের দিকে লক্ষ্য করলেই পেশাদারিত্বের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাধারণত একজন অধ্যাপককে (এনাটমি/ বায়োকেমিস্ট্রি/ মেডিসিন/ চক্ষুবিভাগ/অন্য যে কোনো বিষয়/বিভাগ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। একদিন আগে যিনি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ছিলেন, ছাত্র পড়াতেন অথবা রোগী দেখতেন বা অপারেশন করতেন পরের দিন তিনি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। বলা বাহুল্য এই পদটি স্বাস্থ্য প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। অন্য পরিচালকদের অধিকাংশের পদায়ন একই পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এখানে স্বাস্থ্য প্রশাসনে কাজ, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব একেবারেই নেই।  

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিব প্রমুখদের পদায়ন আরও চমকপ্রদভাবে। গত সপ্তাহে যিনি কৃষি/ভূমিসংস্কার/সংস্কৃতি/অন্য যে কোনো মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন, এই সপ্তাহে তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পদায়ন হলো। স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিকে জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে ধারণ না করেই তিনি স্বাস্থ্য সেবার অধিকর্তা হয়ে বসলেন এবং মহা দাপটে আদেশ নির্দেশ দেওয়া শুরু করলেন। এমনকি স্বাস্থ্য সেবাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন আদেশও তারা দিয়ে থাকেন। (স্মর্তব্য- করোনা পরীক্ষায় দুইশত টাকা ফি ধার্য করা)।  

অন্যদিকের দৃশ্যপট দেখা যাক। একজন তরুণ এমবিবিএস পাস করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। তার চাকরিতে প্রবেশকালীন পদ হচ্ছে সহকারী সার্জন। স্থানভেদে এটি কখনো মেডিক্যাল অফিসার, লেকচারার অথবা অন্য কোনো নামে পরিচিত হয়। এই তরুণ কর্মকর্তাটি সারাজীবন যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে চাকরি করে এবং বিভাগীয় সব পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে, পদোন্নতি পেয়ে পেয়ে কখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অথবা মন্ত্রণালয়ের সচিব হতে পারবেন না। ক্রমাগত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন কর্মকর্তা মহাপরিচালক এবং সচিব হলে স্বাস্থ্যসেবা খাতের পরিচালনা নিঃসন্দেহে অনেক যোগ্যতর ও ত্রুটিমুক্ত হতো। এভাবে না-হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য ক্যাডারে কর্মরতগণ যতোটা বঞ্চিত হয়েছে তারো চেয়ে অনেকগুণ বেশি বঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের নাগরিকগণ।  

আমরা প্রতিনিয়ত দেখে থাকি স্বাস্থ্য বিভাগের অধিকর্তারা নানারকম অবাস্তব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমার চাকরিকালে দেখেছি, যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই সেখানে এক্সরে মেশিন দেওয়া হয়েছে। গাড়ি চলার রাস্তা নেই সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। এরকম নানা ধরনের কাহিনী নিয়ে উপজেলায় কর্মরত চিকিৎসকরা হাস্যরসে মেতে উঠতো। স্বাধীনতা অর্জনের এতো বছর পরেও আমাদের রাষ্ট্র স্বাস্থ্যসেবা খাতে পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে সমর্থ হয়নি। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের বিশেষায়িত বিভাগগুলোকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাপ্রাপ্তদের দিয়ে পরিচালিত করতে হবে। এটি স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রকৌশল, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ধর্মসহ বিশেষায়িত সবগুলো বিভাগের জন্য সত্য। একটি রাষ্ট্রের সফলতার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে যোগ্য ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় স্থান দেওয়া। তাহলেই সেই বিভাগে সবচেয়ে ভালো কাজটি বেরিয়ে আসবে।

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আমরা এখনো দেশব্যাপী সার্বজনীন করতে পারিনি। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মশার শরীরের সাথে তুলনা করা যায়। মশার পেট রক্ত খেয়ে ফুলে যায় কিন্তু বাকি শরীর শীর্ণ থাকে। বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রধান অংশ রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। দুয়েকটি বড় শহর বাদে সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ণ শীর্ণ। এখনো এই করোনাকালেও অনেক জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নেই। ঢাকার বাইরের একটি নামকরা বড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই করেনাকালে বেশ কয়েকটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা (রোগীকে দ্রুত অধিক পরিমাণে অক্সিজেন প্রদানের যন্ত্র) মহৎপ্রাণ কিছু মানুষ অনুদান হিসাবে দিয়েছে। কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইন না থাকায় হাসপাতাল সেগুলো ব্যবহার করতে পারছে না। এরকম অবস্থা ঠিক কতোগুলো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিরাজ করছে সে হিসাব পাওয়াও কঠিন।  

কথাগুলো এই কারণে আসছে যে সারা দেশের মানুষের নিকট উন্নত চিকিৎসার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কাজটি কখনো করা হয়নি। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাজেট বরাদ্দ বিস্ময়কর রকমের কম। গত একযুগ সময় ধরে জিডিপির ০.৯% কাছাকাছি বরাদ্দ পেয়ে আসছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আরও বিস্ময়কর যে, এই পরিমাণ বরাদ্দ কাজে লাগানোর সামর্থ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। প্রতি বছর বেশ কিছু পরিমাণ অর্থ খরচ না হওয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যমান এই ব্যবস্থাপনা -কাঠামো দেশবাসীকে সেবা দানে অসমর্থ -এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো অনেক সমৃদ্ধ। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুধু ব্যবস্থাপনার অভাবে আমরা জনগণকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছি না।  

কোভিড-১৯- এর তীব্র ঝড়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার শেষ আবরণটুকু উড়ে গেছে। মহামারি প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য বা পাবলিক হেলথ বিভাগের সীমাহীন দুর্বলতা মানুষ দেখেছে। দেশের স্বাস্থ্য খাতে গবেষণার দৈন্যতা দেখেও আমরা হতাশ। একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও একশ দশটি (কমবেশি) মেডিক্যাল কলেজের কোথাও কোনো গবেষণার চর্চা নেই। একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ (গণস্বাস্থ্য), একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা) এবং ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠান (বিসিএসআইআর বা সাইন্স ল্যাবরেটরি) অন্তত কিছুটা গবেষণা করেছে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক অনুভব করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা। দেশের ১৬ কোটির অধিক মানুষকে সেবা দেওয়ার উপযোগী একটি ব্যবস্থা গড়তে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পুনর্বিন্যাস করা অপরিহার্য।

স্বাস্থ্য বিভাগে হেলথ ইকোনমিস্ট, হেলথ স্ট্যাটিস্টিশিয়ান,কীট তত্ত্ববিদ, বায়োটেকনোলজিস্টসহ প্রয়োজনীয় জনবল যুক্ত করতে হবে। কারণ আধুনিক স্বাস্থ্য-ধারণার সাথে এই বিষয়গুলো ভীষণরকম প্রাসঙ্গিক। স্বাস্থ্যসেবার দর্শনেও পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষকে ভালো থাকতে হলে সকল প্রাণী, বৃক্ষ,মাটি, পানি,বায়ু,বন, সমুদ্রসহ প্রকৃতি ও পরিবেশের সমস্ত উপাদানের সুরক্ষা করতেই হবে। এই জায়গাটিতে সমন্বয়ের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। শিল্প,কৃষি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, বন ও পরিবেশ, শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছুর সাথেই স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সেটি রক্ষা করা না গেলে স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব হয় না। এজন্যও প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বয়সাধন। এতোসব কাজ করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করতে হবে। এগুলো হবে- জনস্বাস্থ্য বিভাগ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও মেডিক্যাল শিক্ষা, স্বাস্থ্য গবেষণা, সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। পাঁচটি বিভাগই স্বাস্থ্য ক্যাডারভুক্ত হবে। প্রতিটি বিভাগে প্রবেশ পদ হবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (জনস্বাস্থ্য/মেডিক্যাল/গবেষণা/সমন্বয়/ প. পরিকল্পনা) । প্রতিটি প্রবেশ পদ থেকে উচ্চতর শিক্ষা/প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্যতা বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে পদন্নোতি হবে। এই ধারাবাহিকতায় সচিবের পদে পদায়ন ঘটবে। এভাবে প্রবেশ পদ থেকে সর্বোচ্চ সচিব পর্যন্ত প্রতিটি পদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ দ্বারা পূর্ণ হবে। এখনকার ফ্রিল্যান্সার সচিবদের হাত থেকে স্বাস্থ্য বিভাগ রেহাই পাবে। একমাত্র এভাবেই দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের সামর্থ্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। যে বাস্তবতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছিলো তার অবসান হয়েছে। তাই এই অধিদপ্তরের অবলুপ্তি এখন সময়ের প্রয়োজন। মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি বিভাগ স্ববিষয়ে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা দ্বারা পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালিত হলে অধিদপ্তরের কোনো কাজ থাকবে না।

স্বাস্থ্য একটি জটিল এবং বিশেষায়িত বিষয়। সঠিক ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত না হলে এখানে অব্যবস্থাপনা, অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত, অদূরদর্শী কার্যকলাপ সংগঠিত হতেই থাকবে। সেটা পুলিশ-র‌্যাব, ভ্রাম্যমাণ আদালত বা অন্যকোন বাহিনী দিয়ে ঠিক করা সম্ভব নয়। কলসিতে অসংখ্য ফুটো রেখে তাতে জল ঢাললে সেটা অরণ্যে রোদনে পরিনত হতে বাধ্য। আবার পাঁচ লিটারের পাত্রে বিশ লিটার পানিও রাখা যায় না। আমদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আকৃতি পাঁচ লিটারের সমান। কিন্তু জনগণের জন্য প্রয়োজন বিশ লিটারের স্বাস্থ্যসেবা। অতএব পাত্রের সামর্থ্য বাড়াতেই হবে। তাই শেষকথা হলো, অভিযানের অল্পস্বল্প মলম নয়, স্বাস্থ্য বিভাগের অসুখ সারাতে হলে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দরকার।

লেখক: অধিকার কর্মী এবং চিকিৎসক 
e-mail: [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।