ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা, আপনার হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ

তপন চক্রবর্তী, ডেপুটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা, আপনার হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। এমন সময়ে জন্মদিন পালিত হচ্ছে যখন তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এখনও। বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা।  

১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাব। ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সহ তার আন্তর্জাতিক সাফল্যের ঝুড়িতে স্থান পেয়েছে ৪০টির বেশি সম্মাননা । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বাবা-মাসহ সবাই যখন ঘাতকের হাতে নিহত হন, সেই সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর আদরের ‘হাসু’ শেখ হাসিনা শৈশব-কৈশোর কাটানো মধুমতি নদীর তীরে, তার প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরতে পারবেন কি-না তাও ছিল অনিশ্চিত। মা-বাবা, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলকে হারিয়ে যখন তিনি দেশে ফিরতে চাইছিলেন, তখন সামরিক শাসক জিয়া তার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।  

স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার জার্মান ভিসার মেয়াদ শেষ হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর আতিথেয়তায় পরবাসী জীবন কাটান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।  ১৯৮১ সালের  ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলে ওই বছরেরই ১৭ মে তিনি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে দেখার জন্য বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে লাখো মানুষের ঢল নামে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। পরিবারের সব সদস্যের রক্তে ভেজা বাংলার মাটি স্পর্শ করে বঙ্গবন্ধু কন্যাও কেঁদেছিলেন সেদিন, সেই কান্না থামেনি আজও।  

দেশের প্রতি আকর্ষণ আর দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসার টানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেদিন স্বদেশে এসেছিলেন। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাঙলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তাঁর সংগ্রাম চলছে নিরন্তর। এক সময়ের দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এ সংগ্রাম সফল হয়েছে। তাঁর অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নব অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে।

সম্প্রতি গণভবনে এক সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামি দিনের নতুন প্রজন্মের জন্য কীভাবে এই দেশটা এগিয়ে যাবে-কীভাবে চলবে, সেটাই এখন থেকে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো বা আমরা নির্দেশনা দিয়ে রাখবো। সময়ের বিবর্তনে সেটা কিন্তু সংশোধন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে, পরিশোধন করতে হবে। এটা নিয়ম। সেটাও আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক, ধারণাপত্র অথবা একটা দিকনির্দেশনা যদি সামনে থাকে তাহলে যেকোনো কাজ খুব সহজে যারাই ভবিষ্যতে আসুক তারাই করতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমার তো ৭৪ বছর বয়স। কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর কতদিন!’

তবে শেখ হাসিনার হাতেই যে বাংলাদেশ, দেশের মানুষ নিরাপদ-সেটা বেশ ভালোভাবেই বুঝেছেন সবাই। তাই যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সক্রিয় তারা যে কোনও কাজেই ভুল ধরেন। চোর ধরতে গিয়ে সরকারকেই বানাচ্ছে চোর! সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির গতি অব্যাহত রাখতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। সরকারের নগদ অর্থ প্রণোদনা ও সাহায্যপ্রাপ্তি থেকে কোনো শ্রেণি যেন বাদ না যায় সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি-২০৩০, সাসটেইনবেল ডেভলপমেন্ট গোল অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধারাগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলোই সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করেছি। এসডিজি বাস্তবায়নেও আমাদের সাফল্য আসবে বঙ্গকন্যার হাত ধরে।

১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালের ১/১১-এর পর শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তৈরি করা হয় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার পর ওই বছরের ১৬ জুলাই বাসভবন সুধা সদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক  মিথ্যা মামলা। কারাগারে চলে জীবননাশের ষড়যন্ত্রও। কিন্তু জনতার চাপে গড়ে ওঠা জনমতের কাছে পরাজিত হয়ে শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিজয় পায়। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে ৩য় মেয়াদে  এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৪র্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকারের ভেতর ও দলে সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান সারাদেশে প্রশংসিত হয়।

শেখ হাসিনা গড়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্বাধীনতার চার দশক পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে করেছেন কলঙ্কমুক্ত।  বঙ্গবন্ধুর  খুনিদের বিচার, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দান, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার সহ তাঁর কর্মযজ্ঞ প্রশংসিত হয়েছে বিশ্ব দরবারে।

তাঁর লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘ওরা টোকাই কেন?’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, কিছু ভাবনা’, ‘আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘সাদা কালো’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ এবং  Miles to Go, The Quest for Vision-2021 (two volumes) পাঠে জাগে শিহরণ। শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়েছেন অমর কাব্যের কবি।  জন্মদিনে জননেত্রীর প্রতি অতলান্ত শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।  

লেখক: সাংবাদিক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।