ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

সিআরবিতে হাসপাতাল নয়, ইকোপার্ক হোক

যিকরু হাবিবীল ওয়াহেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
সিআরবিতে হাসপাতাল নয়, ইকোপার্ক হোক

চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে রেলওয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে।  

চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুত সরে এসে হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত জায়গায় ইকো জোন হিসেবে গড়ে তোলার দাবি রাখছি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মারফত জানতে পারি, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সিআরবি এলাকায় বেসরকারি ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে বহুতল হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তি করেছে রেলওয়ে। এটা চট্টগ্রামের মানুষকে চরমভাবে ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে।

হাসপাতাল হলে অসুস্থ মানুষের আনাগোনা হবে, বিভিন্ন ধরনের দোকান ফার্মেসি খাবারের হোটেল গড়ে উঠবে, যা এলাকার পরিবেশকে চরমভাবে হুমকির মুখে ফেলবে। আর তাতে সাধারণের স্বাস্থ্য, প্রাতঃভ্রমণ ও বৈকালিক ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তাছাড়া বাৎসরিক বাংলা নববর্ষ উদযাপন ফাগুন উৎসব করার সুযোগ হারাবে চট্টগ্রামবাসী এবং তরুণদের খেলার, আড্ডার বিভিন্ন শিক্ষামূলক ইভেন্ট আয়োজনের স্থান সংকোচন হওয়ার পাশাপাশি প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকারও ক্ষুণ্ন হবে নিশ্চিতভাবে।  

এছাড়া একজন রোগীকে কেন্দ্র করে বহুজনের আগমন গঠবে, অ্যাম্বুলেন্সসহ অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের কারণে এলাকাটির নির্জনতাও উবে যাবে।

সিআরবি এলাকার আরো বিবিধ গুরুত্ব তুলে ধরে যিকরু হাবিবীল ওয়াহেদ বলেন, সিআরবি, সাত রাস্তার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালা মণ্ডিত যে এলাকাটি রয়েছে, তা চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবেই গণ্য করা হয়। সমুদ্রবর্তী নদীবেষ্টিত এ পাহাড়ি নগরীটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যুগ যুগ ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ঐতিহাসিক ও রাজনীতিকদের মনোযোগ ও প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। এ আকর্ষণের অন্যতম কারণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার সিআরবি এলাকাটি।

কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়, এলাকাটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৩০ সালের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহীরা অর্থসংগ্রহের জন্য অভিযান চালিয়েছিল সিআরবিতে। এছাড়া সিআরবি ভবনটি ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিবেচনা করেই এলাকাটিকে ইতিপূর্বে ‘ঐতিহ্য ভবন’ ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষের মনে রাখা উচিত অবকাঠামোগতভাবে দ্রুত বর্ধমান আমাদের চট্টগ্রাম নগরে রাজধানী ঢাকার মতো রমনাপার্ক নেই, নেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা চন্দ্রিমা উদ্যান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মতো সবুজে ঘেরা কোনো বড় অঞ্চল। নগরের মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র এই একটি এলাকা। তাই সবদিক বিবেচনা করে দ্রুত এ হঠকারী সবুজ বিধ্বংসী সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্নিষ্টদের সরে এসে চট্টগ্রামের প্রাণ প্রকৃতির স্বর্গভূমি সিআরবি রক্ষার পাশাপাশি হাসপাতাল করার প্রস্তাবিত জায়গায় 'ইকোপার্ক (জোন)' গড়ে তোলার জোরালো দাবি রাখছি।

লেখক:  নাগরিক সংগঠক

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।