ঢাকা: নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। নতুন কেউ তৈরি না হওয়ায় একই নেতারাই বার বার নেতৃত্বে আসছেন।
আবার বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদেরও রয়েছে নানা দুর্বলতা। তাদের মাঝে গতিশীলতা না থাকায় নতুন নেতৃত্বও উঠে আসছেন না।
এতোসব দুর্বলতা ও উভয়মুখী এ সংকটে দেশের প্রাচীনতম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই রাজনৈতিক দলটিই দিন দিন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে।
সদ্য সমাপ্ত সিপিবির চার দিনব্যাপী একাদশ কংগ্রেসে পার্টির সভাপতি পদে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলরদের ভোটে তারা পুনর্নির্বাচিত হলেও পুরনোদেরই নতুন নেতৃত্বে আসা নিয়ে পার্টির নেতাকর্মীদের একটি অংশের মধ্যে চাপা অসন্তোষ রয়েছে।
বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের ফের দায়িত্বে আসার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি অনেকেই।
সিপিবির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে থেকেই পার্টিতে আসছেন না নতুনরা, দুর্বল হয়ে পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে গতিশীলতা না থাকায় রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশেও পার্টির কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
সিপিবির ওই নেতাকর্মীরা জানান, গত ২০১২ সালের দশম কংগ্রেসে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সভাপতি এবং সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গত চার বছরের মূল্যায়ন করা হলে বলতেই হয় যে, পার্টিতে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি। ঢাকা কেন্দ্রিক গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি ছাড়া পার্টির দৃশ্যমান বড় ধরণের কোনো কার্যক্রমও নেই।
আবার ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন নিয়ে পার্টির মধ্যে একটা বিতর্ক তৈরি হয়। পার্টির অনেকেই ওই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিবি। সেবার বিএনপিও নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিএনপি নির্বাচনে যায়নি বলে সিপিবিও নির্বাচনে যায়নি- ওই সময় এ ধরনের একটা কথা ওঠে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়।
তখনও এ বিভ্রান্তি দূর করতে এবং সিপিবির অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেননি পার্টির নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮-৩১ অক্টোবরের কংগ্রেসেও কথা ওঠে।
কাউন্সিলরদের কেউ কেউ সমালোচনা তুললেও কেন্দ্রীয় নেতারা সঠিক জবাব দিতে পারেননি বলে দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সিপিবির ওই নেতাকর্মীরা আরও জানান, ১৯৯৩ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশ সিপিবিকে বিলুপ্ত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নিজেরাই পার্টি ত্যাগ করেন। ওই সময় রক্ষা পেলেও দীর্ঘ ২৩ বছরে পার্টির কোনো অগ্রগতি নেই।
এদেশের সকল গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন-সংগ্রামে সিপিবির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সে কারণে থেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে মানুষের মাঝে দলটি সম্পর্কে একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও আছে। কিন্তু নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা ও দুর্বলতার কারণে দেশের রাজনীতিতে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন ওই নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এসকে/এএসআর