বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে ভূমি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা করেন গণসংহতির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের ধাক্কাধাক্কি হয়।
সমাবেশে হাওরের জলমহালের ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, হাওরে সরকারি আমলা, ঠিকাদার ও ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারণে বিপন্নতার মুখে পড়েছেন বিশাল এক জনগোষ্ঠী। এই দুর্যোগ জাতীয় দুর্যোগ হিসেবেই মোকাবেলা করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার হাওরের প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করে দেশকে আরও বড় বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ধান-গবাদি পশু বিনষ্ট হওয়া হাওরবাসীর এখন একমাত্র অবশিষ্ট জীবিকা হলো মাছ ধরা। হাওরে ইজারা প্রথার কারণে সেই মাছ ধরার সুযোগও অনেকাংশে কমে আসছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, সাম্প্রতিককালে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জসহ হাওর এলাকায় বিপুল পরিমাণ মানুষ ঘরবাড়িতে তালা দিয়ে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে এসেছেন। এই মানুষগুলোকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হাওরে অবিলম্বে ইজারা প্রথা বাতিল করা দরকার। অন্যদিকে, হাওরে মাছের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে, এরও প্রধান কারণ ইজারা প্রথা। ইজারাদাররা কারেন্ট জালের চেয়েও সুক্ষ্ম বিশাল কোনা জাল দিয়ে মাছের পোনা-ডিম সবই ধ্বংস করে ফেলছে। হাওরে ইজারা প্রথা বাতিল হলে মাছের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে, সরকারের আয়ও বাড়বে, অন্যদিকে অজস্র মানুষের স্থানীয় ভিত্তিতেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত প্রতিটি দুর্গত হাওরবাসীর জন্য খাদ্য সহায়তা ও স্বল্পসুদে ঋণের বন্দোবস্ত করার দাবি জানান জোনায়েদ সাকি।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য আবুল হাসান রুবেল বলেন, এত বড় বিপর্যয়ের পরও হাওরকে দুর্গত এলাকা না ঘোষণা করে সরকার প্রমাণ করেছে, সাধারণ মানুষের দুর্দশায় তার কিছুই আসে যায় না। সরকারি হিসেবেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ, প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে তা অনেক কম। কিন্তু সরকার চাল বরাদ্দে এক লাখ মানুষকেও ত্রাণের আওতায় আনেনি, ত্রাণ বরাদ্দেও দেখা গেছে বিপুল অনিয়ম। লন্ডনপ্রবাসীর নাম, শিশুদের নাম ত্রাণের তালিকায় এসেছে, কিন্তু প্রকৃত ফসল হারানো কৃষকের নাম সেখানে আসেনি।
হাওরের পরিবেশ রক্ষায় এবং হাওরবাসীকে রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে বাংলাদেশের সবচে বড় ধান, মাছ, গবাদি পশু ও হাঁসের এত বড় প্রাকৃতিক উৎসটি অবিলম্বে বিপর্যয়ের মাঝে পড়বে বলে হুঁশিয়ার করেন আবুল হাসান রুবেল।
কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুদ্দীন পাপ্পু বলেন, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের শাস্তি না দিলে এভাবে আগাম বন্যায় তলিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। হাওর এলাকায় প্রতিবছরই বেশিরভাগ ফসল এইভাবে দুর্নীতিবাজদের অবহেলা ও চুরির কারণে বিনষ্ট হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে তিনি তাই অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও প্রয়োজেন শাস্তি প্রদানের আহবান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
পিআর/এমজেএফ