জাতীয় সংসদকে ‘স্টুপিড’ ও ‘ফলস’ বলেও অভিহিত করেন মান্না। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায়ে বলা হয়েছে— এই সংসদের দায়িত্ব (বিচারপতি অপসারণ) নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই।
শনিবার (৮ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন মান্না। ‘স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন’ সংগঠনের এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
মান্না বলেন, ‘জনগণের অধিকার নিয়ে এ রকম ছিনিমিনি খেলা হলো। যে লোককে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হলো তিনি কি প্রতিশোধ নিতে চাইবেন না? সেটা সামলাবে কে? সংসদ সার্বভৌম। আগে পলিসি ঠিক করতে হবে, এটা (বিচারপতি অপসারণ) কারা করবে?’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘যেটা হয়েছে সেটা সরাসরি এই পার্লামেন্টের ওপর চপেটাঘাত করা হয়েছে। আপনারা পারেননি। তারা করেছেন বলেই ধন্যবাদ দিতে হবে। সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা যাক, আমি মানি না’।
তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনের নামে এতো বড় ফোর-টোয়েন্টি পৃথিবীর ইতিহাসে হয়েছে কোথাও? সেই সংসদের হাতে আবার বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হবে, এতো বড় বড় বিদ্বান বিচারপতিদের চাকরি দেবেন, আবার খেয়ে দেবেন? যারা জমি দখল করেন, যারা অন্যের মাথায় বাড়ি দেন, যারা ভোটের ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেন, সেসব লোক বিচারপতিদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন? আমি মানি না। ’
মান্না বলেন, ‘আইনের ও বিচারের কান টেনে সরকার লম্বা করতে করতে বঙ্গভবন পর্যন্ত নিয়ে গেছে। ওই জন্যই প্রধান বিচারপতি বলেছেন, একটা নির্দেশ হাইকোর্ট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত যেতে কয় ঘণ্টা লাগে?’
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভিশন-২০৩০ দেবেন, আবার চুপ থাকবেন। ভিশন দিয়ে বলা হলো, ঈদের পর কর্মসূচি দেবেন, সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। এখন তো আর কথা-বার্তা শুনি না। এখন সব শুনে মনে হচ্ছে, কোরবানির ঈদের আগে আর কিছু হচ্ছে না। কেন? যদি ক্যালকুলেশন তাই হয়, কেনো দুই মাস আগে করতে পারেন না। তাহলে ভিশন ঘোষণা করেন কেন?’
মান্না বলেন, ‘ফরহাদ মজহারের ঘটনাটা (দিনভর নিখোঁজ থাকা) বানানো হলো কেন? হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছেন, ওইটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য?’
বিএনপির উদ্দেশ্যে নাগরিক ঐক্যের এ নেতা বলেন, ‘নিম্ন আদালতের স্বাধীনতা আপনারা দিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই প্রথম খর্ব করেছিল চতুর্থ সংশোধনী। কিন্তু জিয়া যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন কি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন? কিন্তু আমাদের দেশে সাহসী প্রধান বিচারপতি এখন দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এটাও বুঝবেন যে, আপনাদের একজন নেতার বিপক্ষে রায় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালত থেকে বের হয়ে সোজাসুজি বিদেশে চলে গেছেন। কেন? এখানে বিচারপতি ঘর থেকে বের হওয়ার পর যে গুম করবে না, তারই তো কোনো গ্যারান্টি নেই। এই দেশে বিচারপতিরা নিজেরাও নিজেদের জীবন সম্পর্কে নিরাপদ নন। আমি, আপনি তো দূরের কথা। ’
সরকার কাহিনী তৈরি করে অভিযোগ করে মান্না বলেন, ‘একজনকে কাঠগড়ায় নেন, আবার ক্ষমা করে দেন। এর জন্য বাহবা নেন। নেওয়ার নির্দেশও তিনি দিলেন, আবার ক্ষমার নির্দেশও দিলেন। এ রকম নাটক হিটলারও করেছেন কি-না, আমি পড়িনি ‘
অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এই রায়ে সারা দেশের মানুষ খুশি আর আপনি হতাশ। তার মানে কি বড় জ্বালা সইতে পারছেন না?’
সরকারের উদ্দেশ্যে মান্না বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন কেন? আপলি করবেন নাকি? এখানেই তো বলা যায়, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। ’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৭/আপডেট ১৬৩০ ঘণ্টা
এসএম/জিপি/এইচএ/এএসআর