মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঐক্যফ্রন্টের জরুরি বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান জোটের নেতারা। সন্ধ্যা ৭টায় এই বৈঠক শুরু হওয়ার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেষ হয়।
দুপুরে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের ‘উত্তপ্ত সভা’র পর এই বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে অংশ নেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ শীর্ষ নেতারা।
ব্রিফিংয়ে ঐক্যফ্যন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রক্তের হোলি খেলা হচ্ছে, প্রত্যেক জায়গা গুলি করা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮। অকার্যকর নির্বাচন কমিশনকে একদিন অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এই মুহূর্তে তার পদত্যাগ দাবি করছি।
এর পর ফখরুলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করতে নির্বাচন কমিশন ভবনে যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল। সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, হামলা, গুলি ও গ্রেফতারের কথা জানানো হয়। কিন্তু সিইসি নুরুল হুদা সরকারদলীয় নেতাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। এসব দাবি অগ্রাহ্য করে সরকার দলীয় নেতাদের মতো সিইসির ভূমিকায় আমরা বিস্মিত। সিইসির অশোভন আচরণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, সিইসির কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন দূরের কথা, নিরপেক্ষ আচরণও আশা করা যায় না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
ব্রিফিংকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল। নিজের নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জে প্রচারণার সময় আক্রান্ত হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও রক্তাক্ত পাঞ্জাবি নিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে দুপুরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ওই সভায় তুমুল উত্তাপ ছড়ায়। এমনকি ফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ‘ভদ্রতাসূচিত আচরণ না করার’ অভিযোগ তুলে সভাও বর্জন করে ঐক্যফ্রন্ট।
ওই সভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিইসির বিরুদ্ধে ‘অশোভনীয়’ আচরণের অভিযোগ তোলেন।
বৈঠকের বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীবলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সিইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- সিইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী’কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই ‘লাঠিয়াল’ পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না। এমনকি বেলা ২টার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের লোকজন নিয়ম-কানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করছে। আমাদের প্রার্থীদের জীবনের দাম না থাকলেও কর্মীদের জীবনের দাম রয়েছে। তাদেরতো রক্ষা করতে হবে। ’
এসময় সিইসি ক্ষুব্ধ হয়ে ড. কামাল হোসেনকে বলে ওঠেন, ‘আপনি এমন কী হয়েছেন- যে পুলিশকে ‘লাঠিয়াল, জানোয়ার’ বলছেন। নিজেকে কী মনে করেন?’
উচ্চবাচ্যের এক পর্যায়ে মঈন খান সিইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো পরিবেশ যদি সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে বলে দেন, আমরা আজকেই প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের বিষয়ে ঘোষণা দেবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮
টিএম/এইচএ/
** সিইসির সঙ্গে কামালের বৈঠকে উত্তাপ, সভা বর্জন