ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অন্যান্য দল

৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী বাজেট গ্রহণযোগ্য নয়: সিপিবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী বাজেট গ্রহণযোগ্য নয়: সিপিবি সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহম্মদ শাহ আলম

ঢাকা: জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাবকে ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহম্মদ শাহ আলম প্রাথমিক বাজেট-প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন।  

বিবৃতিতে সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৯ জুন সিপিবি’র পক্ষ থেকে আগামী অর্থ বছরের জন্য ঘোষিতব্য বাজেটকে করোনা মহাবিপর্যয়কালে বিশেষ বিবেচনার বাজেট আখ্যায়িত করে এর অগ্রাধিকার নির্ণয়ের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।

আগামী বাজেটকে মানুষ বাঁচানোর বাজেট আখ্যায়িত করে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষি-কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে ৯৯ শতাংশ এর জন্য বাজেট প্রণয়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য পরোক্ষ করের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ করের উপর জোর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

তারা আরও বলেন, বাজেটের পরিমাণ বাড়াতে খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়, অপ্রদর্শিত কালো টাকা ও বিদেশে পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত আনা ও বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বাজেটের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয়, সিস্টেম লস, বিলাসিতা ইত্যাদি রোধ করে মিতব্যয়িতা প্রদর্শন, প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস, সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী দিনগুলোর মতো ১:৬ করা, সব ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম কঠোরভাবে দমন ও নিবৃত্ত করা, অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ হ্রাস করা, প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও যুক্তিসঙ্গত মাত্রায় কমিয়ে আনা, যথাসম্ভব সরকারি ক্রয় হ্রাস করা, মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ আপাতত স্থগিত রাখাসহ নানা পরামর্শ প্রদান করা হয়েছিল।

সিপিবি নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, বাজেটের অর্থ সংস্থানের পথনির্দেশনার সাথে সাথে করোনাকালে রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে বাজেটের উন্নয়ন-বিনিয়োগের অগ্রাধিকারের জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছিল। বাজেটের প্রথম এক-তৃতীয়াংশ খরচ করতে হবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা-গবেষনা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পরিবেশ, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি খাত তথা সামাজিক কল্যাণ ও সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ খাতে, বাজেটের দ্বিতীয় এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে কৃষি খাত, শিল্প খাত, স্বনিয়োজিত বিনিয়োগ, আত্মকর্মসংস্থান, বেকারত্ব দূরীকরণ ইত্যাদি খাতে এবং শেষ এক-তৃতীয়াংশ নির্ধারিত রাখতে হবে দেশের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য।  

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা গবেষণা খাতে বাজেটের যথাক্রমে ১২ ও ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে শক্তিশালী গণ-বন্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলে বিপর্যয়কালে অনাহারী মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার কথা বলেছিলাম।  

সিপিবি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো সরকার সিপিবিসহ দেশের আপামর মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে আমলাতন্ত্রের সাজানো বাজেট ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদেরকে। অথচ বিত্তবানদের উপর ধার্য প্রত্যক্ষ কর হ্রাস করা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত অব্যাহত রাখা হয়েছে, অপ্রদর্শিত কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে-ইত্যাদি। এই বাজেটে এভাবে গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্ঠিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘এবারের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এই বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাজেটের পরিমাণকে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এই অর্থের বেশিরভাগ খরচ হবে পূর্বের ঋণ পরিশোধ, শ্বেতহস্তির মতো বিশাল সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনেরর রক্ষণাবেক্ষণ, বিলাস দ্রব্য আমদানি, অপচয়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রকারের সিস্টেম লস, কর-রেয়াতের নামে ধনিক শ্রেণিকে বিশাল ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি কাজে। এসবই হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ। এর বাইরে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবারও অব্যাহত রাখার মাধ্যমে অর্থনীতিতে লুটপাটের ধারা আরো জোরদার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধনীকে আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরিব করা, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি করা, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি হবে এই বাজেটের ফলাফল। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে। ’

তারা আরো বলেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধির দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনুপাতিক বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের ছিটেফোঁটা যুক্ত করা হয়েছে। বাজেটও সম্পূরক বাজেটের মধ্যে বিপুল পার্থক্য একথাই প্রতিষ্ঠা করেছে যে বাজেট প্রস্তাব নিছক একটি কথার কথা মাত্র। বাজেটকে অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবে পরিণত করা হয়েছে। বাজেটের তথ্য-ভিত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই, প্রস্তাবিত জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সরকারের আন্তরিকতা ও সেসব বাস্তবনায় নেতার সক্ষমতা-যোগ্যতা ও মানুষের মনে প্রশ্নবিদ্ধ।

বিবৃতিতে সিপিবি নেতৃবৃন্দ উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং চলমান করোনাকালীন কঠোর বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষি-কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে ৯৯ শতাংশ মানুষের জন্য বাজেট প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
আরকেআর/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য দল এর সর্বশেষ