ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কবিতা

শহীদ কাদরী স্মরণে তিনটি কবিতা | জোবায়ের মিলন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
শহীদ কাদরী স্মরণে তিনটি কবিতা | জোবায়ের মিলন

‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ পাথর

সুনসান নীরবতা আমাদের পাড়ায়,
আমাদের পাড়ায়-
পাখির কলতান নেই, মাছের সাঁতার নেই,
জলের ঢেউ নেই কোনো জলে,
সুনসান নীরবতা আজ আমাদের পাড়ায়।

আমাদের পাড়ায়
বাতাসে শনশন আওয়াজ নেই
আওয়াজের শব্দ নেই,
শব্দেরা শোকাহত!
যেন এক ভারাক্রান্ত পাহাড়
বেদনার গায়ে হেলান দিয়ে-
দাঁড়িয়ে আছে বেদনার্ত, বিষন্ন।

আমাদের পাড়ায়-
অনেক মানুষ, অনেক মানুষ
অনেক মানুষ, অনেক মানুষ
কফিনের সামনে!
‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’
‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ পাথর।

কেমন করে লিখবো একটি শোকবার্তা

কি শব্দ লিখবো ভাবছি
ভাবছি কোন শব্দে লিখবো,
কোনো শব্দই যুতসই হয়ে ধরা দিচ্ছে না
আঙুলে, খাতায়,
শব্দেরা আহত! শোকাহত!
কেমন করে লিখবো একটি শোকবার্তা!

বার্তা লিখতে তো একটি বাক্য লাগে
না হয় লাগে অন্তত কয়েকটি শব্দ
শব্দেরাই মুহ্যমান
বাক্যরা পাথর
আঙুল অবস
ভাবনার বদলে বিলাপ
কেমন করে লিখবো একটি শোকবার্তা!

‘প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না’
না হয় নাই পেলাম, না হয় অশান্তিতেই রইলাম
তারপরও তো থাকা যেত কয়েকটা দিন!
কয়েকটা দিন না হয় মুমূর্ষু শয্যায়ই খুঁজে নিতাম শান্তি।

হাত কম্পমান, চোখ সজল
ঠোঁট শুকনো, কণ্ঠ জড়ানো,
বহু পুরাণ থৈ থৈ করছে মাথার ভিতর, আমি
কেমন করে লিখবো একটি শোকবার্তা-
শহীদ কাদরী... আর নেই!

দয়া করে কেউ কাঁদবেন না
(শহীদ কাদরীর এ দেশ প্রস্থানে সেদিন যারা তালি বাজিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে)

থাপ্পর মেরে আজ হয়তো টেবিল ভাঙবেন কেউ কেউ
কেউ কেউ হয়তো স্মৃতির ডালা মেলে বসবেন টকশো’তে
কেউ কেউ হয়তো পাতার পর পাতা ভরাবেন স্ত‍ূতি অথবা মায়াকান্নায়
অথবা কেউ কেউ শোকে পাথর হয়ে
বারান্দায় দাঁড়িয়ে নক্ষত্রের সাথে তুল্য-মূল্য করবেন
ফুলেল তোড়া নিয়ে হাতে প্রখর অভিনয়ে
না হয়, কেউ কেউ বক্তৃতার পর বক্তৃতায় বাতাস ভারি করবেন শহীদ মিনারে;
আমার অনুরোধ, কেউ কাঁদবেন না
কাঁদবেন না ভূ-প্রেমে নীল হওয়া কবির জন্যে।
এই কবি তো সেই কবি যাকে তাড়িয়ে দিয়েছি তাচ্ছিল্যে
অবহেলায়, অপবাদে
যাঁকে ফিরিয়ে আনতে একদিনও একতোলা বাক্য ব্যয় করিনি
একটি শব্দ করিনি সদরদরজায়
প্রশ্ন করিনি, কবির কী দোষ?

আমরা দেখেছি তাঁর হাতে ঝরেছে অযুত নিযুত কথা
আমি তো দেখেছি হৃদপিণ্ড গলে গলে কী করে পড়েছে ধুলায়
কী করে চিৎকার হয়ে ভেসে এক একটি পঙ্‌ক্তি
কড়া নেড়েছে কি আহ্বানে!
আজ প্রয়াণে প্রয়াত হোক অমিয় আত্মা
মুক্ত হোক তাঁর মুক্ত বিহঙ্গ
উড়ে গিয়ে প্রশান্ত হোক কারাবন্দি হৃদয়
কেউ তাঁরে জ্বালাবেন না- সুদক্ষ বাণীতে, বন্ধু সেজে
সবারই মুখ অতিব চেনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ