ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কবিতা

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | সাজ্জাদ সাঈফ

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | সাজ্জাদ সাঈফ

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি সাজ্জাদ সাঈফের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প। 

কবি সাজ্জাদ সাঈফ পেশায় একজন ডাক্তার। বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি সাজ্জাদ সাঈফের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।

 


প্রিয় পাঁচ কবিতা

চায়ের দোকান থেকে দিগন্ত
পিঠ থেকে পালক ঝরছে পাখির; যে কোনও ফাঁদের দড়ির মত টানটান, নিখোঁজ মানুষের ডাকের মত অনিশ্চয়, এই ধীর বেলা, শনের খড়ি পুড়ছে চায়ের জ্বালে, আসরের আজানের ধ্বনি উপচিয়ে কানের পাশ দিয়ে গর্জে নামলো মেঘ, মরা খাল তাকে পেতে দিয়েছে মাটির হাতছানি;

ঢেউটিনের দীর্ঘ বাক্য নিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে খুব, আমাদের স্মৃতির ভিতর, সবুজ দেয়ালে বদ্ধ একটি ঘর, দেরাজ পেরিয়ে সরে যাচ্ছে বেজী, স্মরণ থেকে দু হাত দূরে প্রজাপতিদের সুবর্ণবোধ ভেজা, কি মর্মর, আহা, বিপুল বনভূমি নিয়ে কাছাকাছি অঝোরে ভিজছে একা একটি লোক;

চিনি না লোকটার ঘর- আমাদের শিখিয়েছে বিজলী বাঁধার খেলা, উন্মাদ পাঠের পাশে পরে থাকা কবিতাপুস্তক হতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে হাক পারতো জোরে, পানিফল সাজিয়ে রাখা ডালায় একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতো কেমন, মানিক বলতো জাদুকর ওটা, কিরকম ঠাণ্ডা চোখের মণি, আর হাসির মধ্যে ডানা ফরফর শব্দ! 

দোতলার ঘর 
আমার দোতলার ঘরটা থেকে দেখা যায় মর্গকুঠুরি, একটা শিমুল গাছে প্রতি রাতে পেঁচা-পাখিদল জড়ো হয় একসাথে- যদি মানুষের যাতায়াতহীন রাতের জোনাকীরা বিশাল মাঠের থেকে উড়ে উড়ে ঢুকে পড়ে আমার একার চেয়ে বিকট অন্ধকার ঘরে, লাভসিম্বলে বানানো চাবির রিং হাতে নিয়ে উঁকি দেই সেইদিকে, জানালা আলোকিত করা লাইটপোস্টের নিচে কেউ দাঁড়িয়েছে কিনা, মর্গের ফটকের সিঁড়িতে কেউ ঘুমিয়েছে কিনা!

কতদিন বিকাল শেষে কতদিন আলোর আবহাওয়া শেষে আমার তৃষ্ণাগাছ কেবলই বাড়ে হাওয়ায় আমি তবু এই ঘর থেকে বৃষ্টিজমা পথের ছবি দেখি চিকিৎসকের দ্রুত হেঁটে যাওয়া দেখি পথিমধ্যে পড়ে সেই মর্গকুঠুরি একা!

শোক:
আমাকে রক্তাক্ত করে যে কাঁটার পত্রালি, আমি তার গাছ ঘরের কাছেই লাগিয়েছি এনে, দাঁড় ফেলে বহুদূর ঘুরিয়ে পরে এই রক্তপাতের চারা এনে দিয়েছে বিমল।

এই গাছ ধরে দাঁড়িয়েছি কত, আর দেখেছি, আপনজনেরা নিজ নিজ মৃতদেহ নিয়ে ত্যাগ করছে বাড়ি, আমার রক্ত ঝরে সুফলা হয়েছে গাছ।

আর তখন যে কি হয়, দাবানল থেকে ছুটে পালানো অরণ্যবকের মত, গ্রহদূরান্ত হতে অদ্ভুত সব গান এসে বিষণ্ন মস্তিষ্ক তোলপাড় করে এক নিমেষে।

মা আমার চেহারা ভেবে-
জিয়ল মাছের পাতিল দেখিয়ে মা’র বলা কথা কানে বাজে আমার— তোর বাপ আনছে তোর আওয়ার কথা হুইনা, কতদিন পর আইলি এইবার তুই, রোগা হৈয়া গেছত বাবা!

মা আমার শতমুখী ফুলের বাগান, মা আমার চেহারা ভেবে কত না আহত হন মনে, ধূসর
বলাকা ডেকে ডেকে ক্লান্ত যেন তার সন্তানেরে সারা আসমানে, কত ফুল জলে ভেসে যায়
ঝড়ের আঘাত নিয়ে শতমুখী ফুলের বাগানে!

দিলখোলা
কাঁচিতে চুল ছাঁটানোর শব্দ আড়ি পেতে শুনি, ভালো লাগে, আজ সেলুনের ধারে কাছে আড্ডা বসাই—
কাকে যেন বলে বসি ঘুম ভাঙা স্বপ্নের কথা, দপ্তরির লোহার মতো আয়েশী সুরে ঝননের কথা, পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো ছোট খালার কথা!

আজ বড় দিলখোলা আমি–
আকাশ ছুড়েছে মেঘের বাবল; আর গেরস্থালির অবসরে, গৃহে, বৃষ্টির গল্প ওঠামাত্র ছাতা হাতে উঠানের ধারে এসে দাঁড়াও তুমি, যেন কেউ ফিরবে এখনি বাড়ি!


কবিতার পেছনের গল্প
চায়ের দোকানটা হাইওয়ের ধারে, যেদিকে তাকাই বিস্তৃত দিগন্ত, পাশ দিয়ে গ্রামের রাস্তা নেমে গেছে, আসরের আজান-রাখালের যাতায়াত-আলোর এপিসোড আমাকে এমন একটা ভাবনার ভিতর ফেলে দিলো যেন ভাবনাগুলার ভিতর দিয়ে কথা বলে উঠলো আমার বর্তমানসজ্জিত পুরাকাল, সেখানে প্রেমিকা-বন্ধু-শৈশবের একটা ফ্যান্টাসি আমাকে জাদুকরের হাসির মতো একটা আবেশ দিলো।

তখন থাকি ইন্টার্ন হোস্টেলের দোতলার কোণার রুমটায়, জানলা দিয়েই আধাভাঙা রাস্তা, পায়ে হাঁটা পথ, একটু ডানে ল্যাম্পপোস্টের নিচে মর্গদরোজা দেখা যায়, তখন লাভ সিম্বলে বানানো একটা চাবির রিং ব্যবহার করি, অন্ধকার ঘর থেকে নতুন ডাক্তারদের যাওয়া আসা দেখি, বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে রাতজাগা পাখিদের আচরণ দেখি, একটা অভ্যস্ত যাপনের বিকালগুলো শেষ হলেই এইসব দৃশ্যের জন্য তৃষ্ণাবোধ জাগে ভিতরে, আমি মগ্নতা নিয়ে থাকি আরকি।

এইটা জাতীয় শোকদিবসের দিন হঠাৎই লেখা, শোক একটা কাটাভরতি গাছ, আমি নিজেই এই গাছের তদারকী করি, আহত হই, আহত হতে হতে দাবানল থেকে ছুটে পালানো বকের মতো কী ভীষণ দিশেহারা হই, বিষণ্ন হই। এইটাই স্বগতোক্তির মতো নিজেকে ম্যাটেরিয়ালসসহ বলতে গিয়ে এই লেখাটার উদ্ভব।

ছাত্রজীবনে মফস্বলে থাকতাম, মায়ের কাছ থেকে দূরে, শতমুখ নিয়ে মাকে মনে হয় ফুলের বাগান, আমি সৌরভ পাই দূর থেকে, কাছে গেলেই মায়ের অনুযোগ, কত ঝড় সামলে মা বার্ধক্যের কাছে, তার অনুযোগ শেষ হয় না।

এই কবিতাটার পিছনে মেঘলা বিকালে সেলুনের ধারে আড্ডা বসানোর একটা গল্প আছে, গৃহিনী তো বাসায়, চুল কাটার নাম করে সেলুনের কাছে আড্ডা দিচ্ছি। ছোট খালার কথা, স্কুল লাইফের কথার মায়ায় মেঘলা মন দিলখোলা বোধ করি, গৃহিনী বৃষ্টির আভাস পেয়ে আমার ফেরার অপেক্ষায় উঠানের ধারে এসে দাঁড়ায়, ফ্যান্টাসি চিত্ররূপে রিয়েলিটি আরকি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ