রামধনু
সমস্ত করমর্দনের মাঝখানে একটি অন্ধকার থাকে
করমর্দন করতে গিয়ে তুমি আসলে একটি
অন্ধকার ছুঁয়ে ফেলছ। বিনিময়ের আগে
এবং পরেও রামধনু।
বিলি হয়ে যাবার পর পড়ে থাকে
শুধু একটা রামধনু
সাকিন ফকিরি
শুধু ছাই জমা করি। বেদনার সাপ হিলহিলে
লাউডগা।
বেদানায় অলীক গোলাপি। রঙ সাবানের ফেনা
ততোধিক
সাকিন ফকিরি। তামাকের অধিক প্রশ্রয়
এই ধোঁয়া
বারুদে মোকাম। মাটি খোঁড়া জল খোঁড়া
কৃষিকাজ
কেবা কৃষ্ণ কোথায় রজনী আমি রজকিনী
অশ্বেতর
সকাল বিকেল এই দেহ ধুয়ে ধুয়ে তামারং
কশেরুকা
লিখি ক্ষয় লিখি ধাতু আরো লিখি বিকিরণ
মজ্জাগত
নিজেকে ঢাকতে এই রংকানা সুজনিতে বুনে
দিচ্ছি পাখি
হোক হোক পাখি লেখা হোক, সকাতর অনুনয়
ডানাহীন
পাখির ফসলে এই খেত ডুবে যায়, নিরাকার
পাখিসাজ
খুলে রেখে আমিও তো এসেছি হে দয়াময়
কোল দাও
এমত বায়না শুধু ছল। ছিনাল পতঙ্গভুক
মাংসাশী
শূন্য দশক
সমস্ত লবণ আমি হারিয়ে ফেলেছি
কীভাবে তোমাকে লিখি বাংলাভাষা
তার চোখ চামড়ায় মোড়া, বোবা
শব্দের থেকে উঠে আসে নেই রং
মণি নয়, সংকেতও নয়, হাহাকার নয়
বালির লিপিতে লেখা দিনরাত
অন্ধ বাউল এক বসেছে বিদ্যুতে
তার একতারা থেকে
গোঙানির রব
অস্থি মজ্জা থেকে
কালো এক রক্তের স্রোত নেমে আসে
আমাদের তটিনী হৃদয় পড়ে থাকে
মাংসের দোকানের পাশে, নর্দমায়
কীটকবলিত
আমাদের শূন্য অংকের খাতায় রোদ
রোদ নয়, সে তো এক সূর্যের সন্ত্রাস
নড়ছে সংখ্যা, সংখ্যাগুলি নড়িতেছে
যেন ঝুলন্ত শাবক কিছু গিলোটিনে
মাপা হবে তাদের রক্তের স্বচ্ছ অস্বচ্ছ
কণাগুলি বয়ে যাবে আমাদের
খামারবাড়ির পাশে বিষণ্ণ সোঁতায়
গান হয়ে ভেসে যায় শকুন আর
শেয়ালের হাহাকার
আমাদের গল্পগুলো ধীরে ধীরে
কিংসাহেবের ঘাটে
অতি মরা নদী যেন
তার কোনো কথা নেই
তার কোনো কথা নেই
ঘুম শুধু ঘুম শুধু ঘুম
ছুরি
ঘুমের ভেতর ওষুধ ঢুকে গেছে
ঘুমের ভেতর একটা ছুরি
ঢুকছে বেরোচ্ছে
রক্ত পড়ছে না
শেষ ঠিকানা মিসিংলিঙ্ক হয়ে
ঝুলে আছে আমাদের উঠোনে
টোম্যাটোর খেত
শেষবার রক্তপাত
ভিজে যাচ্ছে সমস্ত পতাকা
আগুনপ্রবণতা
এই তাপ এই হলকার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে চামড়ায় ভালো বৃষ্টি হল, আলো বৃষ্টি হল। আর প্রার্থনা সংগীতে ভরে উঠল আমাদের ঘর। এই যে সকাল থেকে না-রোদ না-বৃষ্টি মেঘ হাতে নিয়ে বসে আছি পারদ নামছে না। গান পেরিয়ে যেতে গিয়ে তুমি বারবার ধাক্কা খাচ্ছ দেয়ালে। আর ক্রমেই পেছল হয়ে উঠছে চৌকাঠ। কোথাও জলের গ্লাস নেই। তুমি কি ব্যস্ত এখন? তুমি কি ভীষণ ব্যস্ত? আমার ভেতর রাত ঢুকে যাচ্ছে। শীতকালের ভেতর চিৎকার করছে হাঁস। এই যে এত বন্যা হল শুশ্রূষা বিলি হল, তুমি নিতে পারলে না। শুধু বিছানায় জল ঢুকে গেল। আজকাল রাস্তায় খুব ভিড় হচ্ছে, আগুন লেগে যাচ্ছে অয়েল ট্যাঙ্কারে– একথা তুমি আমাকে বলেছিলে টেলিফোনে। আর ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে আমি মেঘ খুঁজে পাচ্ছিলাম। বরফের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল আর আইসক্রিমের ভেতর থেকে কয়লার আগুনপ্রবণতা মুখ বাড়াচ্ছিল
সৌমনা দাশগুপ্ত
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
এইচজে