ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

আন্দোলন ও নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ কাটাতে মাঠে থাকবে আ. লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
আন্দোলন ও নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ কাটাতে মাঠে থাকবে আ. লীগ

ঢাকা: রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আন্দোলন মোকাবিলা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় এই দুই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা হবে নতুন বছরের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। এই দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বছর জুড়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে থাকবে দলটি।

সংবিধানে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ রয়েছে সংবিধানে। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৷ 

এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আন্দোলনে নেমেছে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে বিএনপি ৷ তবে উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ শুধু তাই নয় এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানও নিয়েছে। নির্বাচনের সময় নির্বাচিত সরকার অর্থাৎ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারই দায়িত্বে থাকবে ৷ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন ৷ এই অবস্থান নিয়েই আগামী লীগ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি ও এর সমমনারা ইতোমধ্যেই আন্দোলনে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। আগামীতে এই আন্দোলন আরও জোরালো করার কথা বলছে দলটি ৷ এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির আন্দোলনকে রাজপথে থেকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ৷ বিরোধী পক্ষের এ আন্দোলনকে মোকাবিলা করে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের একাধীক সূত্র থেকে জানা যায়, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটকে নির্বাচনে আনতে সক্ষম হয় সরকার ৷ নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হয় ৷ এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয় ছিল বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন ৷ তবে এবারের বাস্তবতা একটু আলাদা বলে তারা মনে করছেন ৷ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন শুরু করে তা সহিংসতায় রূপ নেয় এবং ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি ও বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হবে কি না সে বিষয়টিও অওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায় ৷ তবে যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে ৷ পাশাপাশি আওয়ামী লীগও রাজনৈতিকভাবে অবস্থান নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামে আওয়ামী লীগ ৷ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠের এই অবস্থান অব্যাহত রাখবে বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণাও দিয়েছে দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা ৷ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের কাছে বড় বিষয় ৷ তৃণমূল থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আমরা সম্মেলন করেছি, নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয়  নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বৈশ্বিক মন্দার কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট সেটাও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে ৷ এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আন্দোলন নিয়ে আমরা অত চিন্তিত না ৷ আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমাদের কমিটি আছে, নেতাকর্মীরা আছে ৷ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের কর্মীরা মাঠে থাকবে।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম অর্থাৎ নির্বাচনী ইস্তেহার সেটা বাস্তবায়ন করছি৷ আগামী নির্বাচনের আগে পরবর্তি ৫ বছরের ইস্তেহার দিয়ে এগিয়ে যাবো। আমাদের রাজনীতি জনগণের কল্যাণের, সুদূর প্রসারি চিন্তা, উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রার। আমাদের রাজনীতি ধ্বংসের নয় দেশ গড়ার। সরকারের দায়িত্ব সংবিধানকে সমুন্নত রাখা। সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। আমরা অতীতে সংবিধান সমুন্নত রেখেছি আগামীতেও সমুন্নত রাখবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর হবে দেশের উন্নয়নে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ধারাকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে ঘোষণা দিয়েছে জনগণের ম্যানডেট নিয়ে আগামী নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় এসে সে লক্ষ্যে কাজ করবে এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে। এ বছর আমরা জনগণের কাছে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাবো এবং এই প্রত্যাশার কথা জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে।

বিএনপিসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আন্দোলন প্রসঙ্গে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করবে, করতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে সেটা জনগণের কল্যাণে কি না। জামায়াত বিএনপি একটি গণবিরোধী, গণতন্ত্রের হত্যাকারী, দেশ বিরোধী শক্তি। এরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও ৭১ এর ঘাতকদের উত্তরাধিকারী। অতীতে তারা আগুন সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী তৎপরতা, মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা থাকবে আমাদের, আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকবো।

বাংলাদেশ সময় ০১১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৩
এসকে/আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।