ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না: গয়েশ্বর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না: গয়েশ্বর

ঢাকা: সংবিধান দেশ ও জনগণের জন্য, কোনো ব্যক্তি বা দলের জন্য নয় মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তারপর সংবিধান রচিত হয়েছে। সুতরাং সংবিধান কোরআন, বাইবেল, গীতা অথবা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে, তা পরিবর্তন করা যাবে না, সংবিধান পরিবর্তন করা যায়।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ আটক সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ।

মানববন্ধনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অত্যান্ত শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চাই। যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ, যারা দেশের মালিক, তারা নিজেদের সুচিন্তিত মনে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে দিনের ভোট দিনে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে- এই দাবিতেই আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম।

তিনি বলেন, আজকে তারা (সরকার) বলে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ১৯৯৫-৯৬ সালেও ছিল না। তখন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলে এবং সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছরেরও আগে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় এসেই সর্বপ্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছেন, বাতিল করেছেন।

আওয়ামী লীগের মুখে সংবিধানের কথা মানায় না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধান লেখার কয়েকদিন পরেই আপনারা (আওয়ামী লীগ) প্রথম সংশোধন করলেন। তারপর দ্বিতীয়, তৃতীয় সংশোধন করলেন। চতুর্থ সংশোধনের মধ্য দিয়ে আপনারা দেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করলেন। এক দলীয় এক নেতার  শাসন ব্যবস্থা করলেন। গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করলেন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার জন্য সংবাদপত্রগুলো বাতিল করলেন। সুতরাং আপনাদের মুখে সংবিধানের কথা মানায় না।

সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে না অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধান মতে দেশ চললে দিনের ভোট আগের রাতে পুলিশ সিল মারতো না। পুলিশের দায়িত্ব নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই পুলিশই কিনা আগের রাতে এমন সিল মারলো। সেই নির্বাচনে কোথাও কোথাও ১০০ ভাগেরও বেশি ভোট পড়ল। সেই নির্বাচনে মরা মানুষ, জীবিত মানুষ, বিদেশে থাকা সবাই ভোট দিতে পারল। এমনকি যারা ভোটার হয়নি, তারাও ভোট দিল।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ইদানিং বলেন, ভোট চোরদের মানুষ বিশ্বাস করে না। আপনারা (আওয়ামী লীগ) স্বঘোষিত ভোট চোর, ভোট ডাকাত। সুতরাং, আপনাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে না। আপনাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশে যদি নির্বাচন ব্যবস্থা রাখতে চান, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি নিঃসন্দেহে পদত্যাগ করেন।

দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে দেশের অর্থনীতি আজকে ফোকলা হয়ে গেছে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একমাত্র বিদ্যুৎ খাতেই যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা আপনারা (সরকার) নিজেরাই স্বীকার করেছেন। বিদ্যুতের যেসব প্রকল্প করা হয়েছে, সেগুলোর অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না, জবাব চাওয়া যাবে না, মামলা করা যাবে না, অভিযোগ করা যাবে না এমন ইনডিমিনিটি (দায়মুক্তির) বিল পাস করেছেন। দুর্নীতি ঢাকার জন্য যে সংবিধানে আপনারা (সরকার) আইন পাস করেছেন, সেই আইন জনগণ মানতে বাধ্য নয়। সেই কারণেই সংবিধান পরিবর্তনশীল।

বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনসম্পৃক্ততাবাড়ানোর চেষ্টা করছে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনগণ রাস্তায় নামছে, আমাদের (বিএনপি) কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। পদযাত্রার মতো এত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আগে কোনোদিন ছিল কিনা তা সরকারের কাছে জানতে চাই। তারপরও সেই পদযাত্রায় আপনারা (সরকার) বাধা দেন।

তিনি আরও বলেন, আজকে সরকার ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি পিস (শান্তি) কমিটি করেছে। যখনই আমরা (বিএনপি) কর্মসূচি দেই, তখনই এই পিস কমিটি শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করে। এই পিস কমিটি সরকারের হলেও গণতন্ত্রের বিপক্ষে। সুতরাং, ১৯৭১ এর যুদ্ধের পর পিস কমিটির যে দুর্দশা হয়েছিল, ভবিষ্যতে এই পিস কমিটির অবস্থাও তেমন হবে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন  হামলা, মামলা, গায়েবি মামলা, গুম, খুন কম করেননি। একের পর এক করে যাচ্ছেন। দুর্নীতির মধ্য দিয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন। আজকে ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার জন্য ডলার পায় না। রিজার্ভে টাকা নেই। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিদেশিরা বিশ্বাস করছে না। এই অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। সুতরাং, চাপাবাজি করে অথবা পুলিশের লাঠি-বন্দুুক দিয়ে জনগণের এই আন্দোলন স্তব্ধ করতে চাইলে হিতে বিপরীত হবে। তাতে যদি কোনো ঘটনা ঘটে তার দায় শেখ হাসিনাকে বহন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, জনগণের প্রতি যদি আস্থা থাকে, যদি বিশ্বাস করেন দেশের মালিক জনগণ, তাহলে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে হস্তান্তর করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থার যাতে পরিবর্তন ঘটে, সেই দিকে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) নজর দিবেন আশা করি। তা না হলে জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে, কীভাবে আপনাকে পদত্যাগ করাতে হয়, কীভাবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আদায় করতে হয়৷

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, এদেশের জনগণ যেখানে সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছে, সেখানে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তা করতে পারবে। তা করতে গেলে কার কি অবস্থা হবে, কার কি বিপদ হবে, তা জনগণ দেখার তোয়াক্কা করে না এবং আমরাও (বিএনপি) তোয়াক্কা করি না।

জাসাস সভাপতি চিত্রনায়ক হেলাল খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, জাসাসা সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসাসের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম স্বপন, সদস্য সচিব শফিকুল হাসান রতন, ঢাকা মহানগর উত্তর জাসাসের আহ্বায়ক স্বপন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬.০২.২০২৩
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।