ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন কি না এ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ নেতারা এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ। তিনি কী করবেন না করবেন তা নিয়ে আমার বলার প্রয়োজন নেই। ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি থেকে বিরত থাকবেন এ রকম শর্ত সেখানে ছিলো না।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সাজা শেষ হলেই কেবল খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন, তবে আইন অনুযায়ী ৫ বছর পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবেন না। সাজা চলা অবস্থায় খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার কথা কিভাবে আসে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছিলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না এই মুচলেকা দিয়ে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ শেষ হলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন। তখন তার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে তো কেউ বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৫ বছর পর্যন্ত তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। এটা আইনের বিষয়, আইন অনুযায়ীই তিনি ওই নির্ধারিত সময়ে আগে নির্বাচন করতে পারবেন না। কিন্তু এখনও তার সাজা চলছে, এখনও তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়নি, নির্বাহী আদেশে স্থগিত রাখা হয়েছে। এ স্থগিততাদেশ বাতিলও করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে বিশেষ ক্ষমতা বলে খালেদা জিয়াকে নিজের বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। সেখানেও শর্ত রয়েছে, তিনি ঢাকায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন তবে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এই অবস্থায় তার রাজনীতি করার বিষয়টি নিয়ে কথা আসে কিভাবে?
গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের যৌথ সভায় বলেন, খালেদা জিয়া কি দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? শেখ হাসিনার উদারতায় মানবিক কারণে তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে, দণ্ডমুক্ত নয়। দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়?
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২০২০ সালের ২৫ মার্চ দুই মামলায় সাজা প্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে বাসা থেকে চিকিৎসা নেওয়া ও বিদেশে না যাওয়া এই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশ পর্যায়ক্রমে ৬ মাস করে বাড়ানো হচ্ছে। একটি মামলায় সাজা হয় ১০ বছর আরেকটি মামলায় ৭ বছর। এই অবস্থায় গত বছর ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কন্দ্রে করে বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বরে সমাবেশে খালেদা জিয়া উপস্থিত হবেন। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তোলেন, দণ্ডিত ব্যক্তি কিভাবে রাজনৈতিক সমাবেশে আসেন। এর পর থেকে আলোচনা বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়ে আইনের যে বাধা রয়েছে সেটা বিএনপিও ভালো করেই জানে। এখন আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে কী বোঝাতে চেয়েছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন। রাজনীতিতে অনেক সময় অনেক কথা ওঠে, সেটা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলতে থাকে। বিষয়টি এ রকমও হতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায়ের পর তিনি সাজা ভোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছেন শর্ত সাপেক্ষে। তিনি রাজনীতি করবেন কিভাবে। আইন অনুযায়ী কারো আদালতে দুই বছরের বেশি সাজা হলে হলে সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৫ বছর পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে করতে পারবেন না। কিন্তু এখনও তার সাজা শেষ হয়নি, স্থগিত আছে। এই অবস্থায় তিনি রাজনীতি করবেন কিভাবে। সাজার মেয়াদ শেষ হলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন, তখন তো আর বাধা থাকার কথা না। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৫ বছর পর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এখন তার রাজনীতি করার কথা আসে কিভাবে?
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
এসকে