ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মান ভাঙেনি রওশনের!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, মে ২, ২০১২
মান ভাঙেনি রওশনের!

ময়মনসিংহ: দীর্ঘ বিরতির পর মঙ্গলবার ময়মনসিংহে আসার কথা ছিলো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ পত্নী ও দলের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ এমপি’র।

কথা ছিলো মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল মাঠে জেলা শ্রমিক পার্টি আয়োজিত শ্রমিক দিবসের সমাবেশে তার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জোর প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু ময়মনসিংহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শেষতক তিনি আর আসেননি।

দলীয় সূত্র জানায়, নিজের জেলা ময়মনসিংহ নিয়ে রওশন এরশাদের আগ্রহে ভাটা পড়ার নেপথ্যে রয়েছে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪-সদর আসন থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া। মূলত সেই বঞ্চনার কারণেই ‘অভিমান’ করে গেল নির্বাচনের পর আর ময়মনসিংহে আসেননি সাবেক এ ফার্স্ট লেডি।

ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টি’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রওশন এরশাদ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। শারীরিকভাবেও তিনি অসুস্থ। তাছাড়া তিনি এখন ময়মনসিংহের নন, রংপুর সদর আসনের এমপি। গেল নির্বাচনে নিজের জেলায় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় নিজের শহরের প্রতি তার আবেগ-অনুভূতি অনেকটাই ভোতা হয়ে গেছে।

জেলা জাতীয় পার্টির মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, ‘নেত্রী ময়মনসিংহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এখানে দল চালানো বা নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতার চরম সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। দলের হাল ধরার মতো কোন নেতা নেই। ম্যাডাম জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হয়েও দীর্ঘ সময় ময়মনসিংহে অনুপস্থিত থাকায় দল অভিভাবকশূণ্য হয়ে পড়েছে। ’

সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪-সদর আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ সভাপতি প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। এ আসনে রওশন এরশাদ মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতাকে জীবনের গোধূলি লগ্নে এস মূল্যায়ণ করতে গিয়ে রওশন এরশাদকে রংপুর সদর থেকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ নিয়ে এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মাঝে গোলকধাঁধাঁর সৃষ্টি হয়। পরিশেষে নির্বাচনের আগে জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানকে ময়মনসিংহ-৪-সদর আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এতে দারুণভাবে আশাহত হন রওশন। দুমড়ে মুচড়ে যায় এ এলাকার জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের স্বপ্ন। মনোনয়ন বঞ্চনার পর থেকেই মূলত ময়মনসিংহে আর কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসেননি রওশন এরশাদ। মুঠোফোনে মাঝে মধ্যে নিজ এলাকার গুটিকয়েক অনুসারীকে ‘টেক কেয়ার’ করেন তিনি।

ময়মনসিংহ থেকে ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এ জেলায় জাতীয় পার্টিও এখন মৃতপ্রায়। এতে করে জাতীয় পার্টির এক সময়ের ভোট ব্যাংক ময়মনসিংহে দলের অস্তিত্বও সংকটাপন্ন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

এ পরিস্থিতি দলীয় নেতা-কর্মীরা ক’দিন আগে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করে আগামী নির্বাচনের আগে তাকে ফের মাঠে নামার অনুরোধ করেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের তীব্র অনুরোধের প্রেক্ষিতে ফের মঙ্গলবার ময়মনসিংহে আসার কথা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি।

জেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান আরজু বলেন, ‘ম্যাডারের বড় বোন মমতা ওয়াহাব মারা যাওয়ায় তিনি আসেননি। ’

জেলা জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল বলেন, ‘ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টির শক্তিশালী ভোট ব্যাংক রয়েছে। এ ভোট ব্যাংক যেদিকে হেলে পড়বে সেইদিকেই বিজয় পতাকা উড়বে। ’

রওশন এরশাদ ময়মনসিংহের দিকে নজর দিলে দলীয় নেতা-কর্মীরা নব উদ্যমে জেগে উঠবে বলে তিনি দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, মে ২, ২০১২

সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।