ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা

বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া বাজারে তরমুজ চাষিদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ ম্যালাকার (৩০)। এসময় হামলা-পালটা হামলায় আহত হয়ছেন আরও তিনজন।

সোমবার (৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা সবুজ ম্যালকারকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ ম্যালাকার হলদিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিস দখল করে ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হলদিয়া, গুরুদল, উত্তর তক্তাবুনিয়াসহ আশপাশের এলাকায় তরমুজ চাষি এবং ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি করছে। তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে এলাকাবাসী সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের ঘেরাও করে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে সবুজ ম্যালাকার আহত হয়। এসময় তার সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীবাহিনী পাল্টা হামলা করে। হামলায় সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আরিফুল হাসান আরিফ (৩৮), রাকিবুল ইসলাম (১৮), শাহিন (৩৫) ও শাহেদ আবদুল্লাহ আরিফ (২৫) আহত হয়।  

গণপিটুনির শিকার সবুজ ম্যালাকারকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই রাতেই তাকে বরিশাল শের- ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগ নেতা সবুজ ম্যালাকার চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার অনুগত ছেলেদের নিয়ে হলদিয়া বাজারের আওয়ামী লীগ অফিসে বসে সময় কাটাই। এসময় অ্যাড. আরিফের লোকজন পূর্ব শক্রতার জেরে আমার ওপর হামলা করে।  

অ্যাড. আরিফুল হাসান আরিফ বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সবুজ ম্যালাকার ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হলদিয়া ইউনিয়নের তরমুজ চাষিদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গণপিটুনি দিয়েছে। রাতে আমি আমার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় জটলা দেখে দাঁড়ালে সবুজ ম্যালাকার এবং তার বাহিনী আমার ওপরও হামলা করে। হামলায় আমার হাত ভেঙে গেছে।

হলদিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি বাসুদেব শীল জানান, সবুজ ম্যালাকার আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। ওই টাকা না দিলে আমাকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়েছে।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি আলামিন শরীফ বলেন, সবুজ ম্যালাকার আমার কাছ থেকে জোর করে ৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে।

হলদিয়া গ্রামের এখলাছ প্যাদা বলেন, তরমুজ বিক্রি করার আগে সবুজ ম্যালাকার আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে। এখন প্রতিটি তরমুজ বিক্রিতে আমার কাছে ৮ টাকা করে দাবি করেন।

হলদিয়া গ্রামের আরেক তরমুজ চাষি খালেক মোল্লা বলেন, সবুজ ম্যালাকার তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। টাকা না দিলে ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি করতে দেবে না বলে হুমকি দেয়।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা. মিনহাজুর রহমান বলেন, সবুজ ম্যালকারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজির কারণে গণপিটুনির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সবুজ ম্যালাকারের নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ আমতলী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।