ঢাকা: বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন ও ৪৪ জনের ৭ বছর করে কারাদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে ফরমায়েসী রায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রায়ে বিএনপি নেতা হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন ও ৪৪ জনের সাত বছর করে কারাদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করা হলো তা নিঃসন্দেহে ফরমায়েসী রায়।
'এর আগেও ২০২১ সালে তৈরি করা আইনে হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশেই রায় দেওয়া হচ্ছে। '
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে সরিয়ে দেওয়াসহ আওয়ামী সরকারের নির্দেশে আদালতকে দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কার নির্দেশে হচ্ছে সেটির জন্য বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আজকের রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি। আইন আদালতকেও সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থের রাজনীতির অনুষঙ্গ করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, একটি মামলাকে পরে তিনটি মামলায় বিভক্ত করে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সীমাহীন ও নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তাদের স্রেফ প্রতিহিংসার কারণে অবৈধ সরকার এ মিথ্যা মামলায় তাদের জড়িত করেছে।
'অথচ এফআইআরে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নামটি পর্যন্ত ছিল না। সেদিন হাবিবুল ইসলাম ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, ঘটনাটি বেলা ১১-৫০ মিনিটে ঘটে এবং ঘটনার পরপরই দুপুর ১টায় বিবিসি থেকে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ঢাকার টিএন্ডটি ফোনে ফোন করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিব যদি ঘটনার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় উপস্থিত থাকেন তবে তার পক্ষে কীভাবে সেদিনই ঢাকায় এসে ল্যান্ডফোনে বিবিসির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব?'
প্রিন্স বলেন, এ ঘটনায় কেউ হতাহত ছিল না। কিন্তু পরে একজনকে আহত সাজিয়ে মামলা করা হলেও সেও সাক্ষী দিতে যাননি, এমনকি যেসব সাংবাদিকদের সাক্ষী করা হয়েছিল, মূলধারার সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও এ সাজানো মামলায় সাক্ষী দেননি। ঘটনার এক যুগ পর পাকা রাস্তার ওপর থেকে একটি বুলেটের খোসা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে মামলাটিকে পরিচালনা করা হয়।
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই-তর্কের খাতিরে যদি বলি, সে সময় যদি সেখানে গুলি করার ঘটনা ঘটেও থাকে তাহলে এক যুগ পর রাস্তায় বুলেটের খোসা পাওয়া কি হাস্যকর কিংবা অসম্ভব নয়? প্রকৃতপক্ষে সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী নিরাপত্তা রক্ষীরাই দুই রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছিল। এছাড়া সেখানে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। তাহলে এটা পরিষ্কার যে, কেবলমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন এবং বাকিদের সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
'এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার দণ্ডবিধি অংশে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতাকর্মীকে ৪ থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দেন সাতক্ষীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবির। আসামিদের মধ্যে দুই জন (মাহফুজুর রহমান সাবু এবং জাবিদ হাসান লাকী) দণ্ড ভোগ করা অবস্থায় কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। '
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্স বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপি বরাবরই জনগণের শক্তিকে অবলম্বন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। অতীতের মতো বর্তমান অবৈধ সরকার নানাভাবে নিজেরাই নাশকতার সৃষ্টি করে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো পরিকল্পনা করে তা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এর দায় চাপানোর অংশ হিসেবে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের জড়ানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আজ যে দণ্ড ঘোষণা করা হলো তা সম্পূর্ণরূপে ফরমায়েসী। যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংস্র রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজকে আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রূপের আরও একটি নতুন চেহারা দেখা গেল।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী অত্যাচার, নিপীড়ন, লুণ্ঠন, দখল এতটাই বেড়েছে যে, এগুলোকে আড়াল করতেই সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতাদের জড়িয়ে আদালতকে ব্যবহার করে নির্দয় রায় দেওয়া হচ্ছে, আজকের রায়ও সেই নিষ্ঠুরতার অংশ। সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, আজকের রায় সেটিরই ধারাবাহিকতা। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু অবান্তর ও হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদুরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ। আমরা আজকের এ রায়ের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।
প্রিন্স বলেন, আজ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফরমায়েসী রায় বিএনপি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
টিএ/আরআইএস