ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

সিটি নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকেই মূল সমস্যা মনে করছে আ.লীগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
সিটি নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকেই মূল সমস্যা মনে করছে আ.লীগ

ঢাকা: দেশের ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই দলীয় প্রার্থীর জন্য মূল সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া ও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যব্ধভাবে মাঠে নামানোকো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এই ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকলে দলীয় মেয়র প্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। গত ১৪ বছর আওযামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন কাজ করেছে তার সুফল সব জায়গার মানুষ পেয়েছে। এর থেকে এই সিটি করপোরেশনগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। এ কারণে মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেবে বলে তারা মনে করেন। তবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে বা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে না নামলে বিজয় কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কোনো কোনো সিটিতে এ ধরণের অভ্যন্তরীণ সংকটের আশঙ্কা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশেন এবং ২১ জুন সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আওযামী লীগের নীতিনিধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, ৫ সিটির এ নির্বাচনগুলো প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক হোক এটা তারা চান। সে ক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটি থেকে কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে এবং অন্য দলগুলো থেকেও প্রার্থী দিলে নির্বাচন প্রকৃত পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা সমস্যা মনে করছেন দল থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া নিয়ে। এই ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের অনেকেই মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এদের ভেতর থেকে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে এবং অন্য দলের প্রার্থী সঙ্গে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় কঠিন হয়ে পড়বে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থী ও অ্ভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে দলটি।

ইতোমধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন এবং মেয়র পদ হারান। দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করায় তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। আবার জাহাঙ্গীর আলমের মাও এখানে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খানকে। অন্য সিটিগুলোতেও দলের কেউ বিদ্রোহী হয় কিনা সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে দলটি। সরাসরি বিদ্রোহী প্রার্থী না হলেও দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে যাতে অবস্থান না নেয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল এবং রাজশাহীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানা গেছে।     

আওয়ামী লীগের ওই নেতারা আরও জানান, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কারণ এই সিটি নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে চায় তারা। ভেতর থেকে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সেটা মেনে নেবেন না আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের আগে থেকেই রয়েছে। অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবন্থা নেওয়া হয়েছে। এ ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ, সেক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে বসিয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তাতে কাজ না হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওই নেতারা আরও জানান।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চাই। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকবে এটা প্রত্যাশা করি। সে চেষ্টা অবাহত আছে। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে বা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আমাদের আগের যে সিদ্ধান্ত আছে সে অনুযায়ী কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।